‘ছেলে আমাদের কারণে-অকারণে মারধর করে, মামলা দিয়ে হয়রানি করে। ও আমাদের বাঁচতে দেবে না। ওর অত্যাচার-নির্যাতন ও মামলা থেকে আমাদের বাঁচান।’
ছেলের অত্যাচার, নির্যাতন ও মামলা থেকে রক্ষা পেতে আজ সোমবার বেলা ১১টার দিকে পটুয়াখালীর বাউফল প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এমন আকুতি জানান উপজেলার মদনপুরা ইউনয়নের চন্দ্রপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মো. মোসলেম উদ্দিন মৃধা (৭০) ও তাঁর স্ত্রী মোসা. ফজিলাত বেগম (৬৫)।
মোসলেম উদ্দিন বলেন, ‘আমার দুই ছেলে ও দুই মেয়ে। তাদের মধ্যে আমার বড় ছেলে মো. মনিরুল ইসলাম ওরফে শাহিন (৪২) মামলাবাজ, চাঁদাবাজ ও ভূমিদস্যু প্রকৃতির। আমি জীবিত থাকা অবস্থায় আমার সম্পত্তি দখল করতে চায় মনিরুল। আমি জমি চাষাবাদ করতে গেলে সে মারধর করে। আমাকেসহ আমার স্ত্রী, এক ছেলে ও দুই মেয়ের জামাইকেও বিভিন্ন মামলা দিয়ে হয়রানি করছে মনিরুল।’
মোসলেম উদ্দিন আরও বলেন, ‘সর্বশেষ ১০ আগস্ট আমার কাছে এক লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে মনিরুল। টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে আমাকে লাথি মেরে ফেলে দেয় এবং আমার দোকানে থাকা ৫৫ হাজার টাকা লুট করে নিয়ে যায়। ওই সময় দোকানের মালামাল ফেলে তছনছ করে রেখে যায় সে। এ ঘটনায় পটুয়াখালী সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তার (মনিরুল) বিরুদ্ধে মামলা করি। ওই মামলায় সাত দিন কারাগারে ছিল মনিরুল। পরে আমার ও আমার স্ত্রীর ওপর আর অত্যাচার-নির্যাতন করবে না মর্মে আপসের শর্তে জামিনে বের হয় সে। কিন্তু জামিনে বের হয়ে মনিরুল আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠে। মামলা তুলে নিতে আমাকে ও আমার স্ত্রীকে হত্যার হুমকি দিচ্ছে সে। তার নির্যাতনের ভয়ে আমাদের জীবন বিপন্ন হতে চলেছে।’
সংবাদ সম্মেলনে মনিরুলের আপন ছোট ভাই মো. জিয়াউল হক ওরফে জুয়েল বলেন, ‘তাঁর (মনিরুল) অত্যাচারে চন্দ্রপাড়া গ্রামের শতাধিক পরিবার অতিষ্ঠ। কারণে-অকারণে মামলা দিয়ে হয়রানি করেন তিনি। তিনি অন্তত ৪২টি মামলা দিয়ে তাঁদের পরিবারসহ এলাকাবাসীকে হয়রানি করছেন। তাঁর বিরুদ্ধেও আমার বাবার দুটি মামলাসহ আটটি মামলা রয়েছে।’
সংবাদ সম্মেলনে মনিরুলের মা ফজিলাত বেগম বলেন, ‘ওর মতো (মনিরুল) খারাপ ছেলে আর যেন কোনো মায়ের পেটে জন্ম না হয়। আমি এই জালেম ছেলের বিচার চাই।’
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন মনিরুলের চাচা মো. ফারুক মৃধা, মো. মুসা মৃধা, আবদুস ছালাম মৃধা, মো. আকরাম প্রমুখ। তাঁরা সবাই মনিরুলের বাবা ও মায়ের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করে তাঁর (মনিরুল) দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।
তবে মনিরুল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমার প্রতিপক্ষ আমার মা ও বাবাকে ভুল বুঝিয়ে ওই সংবাদ সম্মেলন করিয়েছে।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমার দাদা আমাকে দুই একরের (২০০ শতাংশ) একটু বেশি জমি লিখে দিয়েছেন। ওই জমি আমার বাবা তাঁর নামে লিখে দিতে বলেন। এতে রাজি না হওয়ায় তাঁর (মনিরুল) বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ এনে সংবাদ সম্মেলন করছেন।’
বাউফল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আল মামুন বলেন, ‘তাঁদের পারিবারিক সমস্যা দীর্ঘদিনের। এলাকাবাসীর সঙ্গেও তাঁর (মনিরুল) বিরোধ রয়েছে। আমার জানামতে, তিনি অসংখ্য মামলার বাদী ও আসামি। তবে তাঁর বাবা যদি লিখিত অভিযোগ করেন, তাহলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’