ছেলেকে হত্যা করে ট্রাঙ্কবন্দী লাশ ফেলে দেন বাবা ও সৎমা
আলামত গায়েব করতে ঝলসে দেওয়া হয় কিশোরের লাশ। ট্রাঙ্কবন্দী করে ফেলে দেওয়া হয় নদীর তীরে। এই কাজ করেছেন কিশোরের বাবা, সৎমাসহ চারজন। তবে তাঁদের শেষ রক্ষা হয়নি। ট্রাঙ্কের ভেতরে পাওয়া চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্রের (প্রেসক্রিপশন) সূত্র ধরে বের করা হয়েছে তাঁদের। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে অপরাধ স্বীকার করেছেন তাঁরা।
হত্যাকাণ্ডটি সংঘটিত হয় ১৪ জুলাই দিনাজপুরের বিরল উপজেলার কাঞ্চনঘাট এলাকায়। লাশটি পাওয়া যায় ১৬ জুলাই নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার রামডাঙ্গা ফরেস্ট ও সিংগাহাড়া নদীর তীরে। এর রহস্য উদ্ঘাটন করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) রংপুর কার্যালয়।
আজ মঙ্গলবার রংপুর পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার (এসপি) এ বি এম জাকির হোসেন তাঁর কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এসব তথ্য জানান।
হত্যার শিকার লাশটি জিহাদ রহমানের (১২)। সে দিনাজপুরের বোচাগঞ্জ উপজেলার নাফানগর এলাকার জিয়াউর রহমানের (৪১) ছেলে। তাকে হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া চারজন হলেন বাবা জিয়াউর, সৎমা আলেয়া মনি (১৯), আলেয়ার বাবা আইয়ুব আলী (৫৫) ও পিকআপ ভ্যানের চালক ইসমাইল হোসেন (২৬)।
জিহাদের মায়ের সঙ্গে জিয়াউরের বিচ্ছেদ হয়েছে। এরপর জিহাদ বাবা ও সৎ মায়ের সঙ্গেই থাকত। তবে তার সঙ্গে আলেয়ার বনিবনা হতো না। এর জের ধরে জিহাদকে হত্যার পরিকল্পনা করেন আলেয়া ও জিয়াউর।
সংবাদ সম্মেলনে পিবিআই জানায়, লাশটি ঝলসানো ছিল। এ কারণে এটির পরিচয় পাওয়া যাচ্ছিল না। লাশটির ট্রাঙ্কে জিয়াউরের নামে দিনাজপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালের এক চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন ছিল। সেই প্রেসক্রিপশনের সূত্র ধরে চিকিৎসককে খুঁজে বের করা হয়। এরপর তাঁর কাছ থেকে জিয়াউরের ঠিকানা বের করা হয়।
গত সোমবার সন্ধ্যায় দিনাজপুরের খানসামা উপজেলায় একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার কার্যালয় থেকে জিয়াউরকে আটক করা হয়। তিনি ছেলেকে হত্যার সঙ্গে জড়িত বলে স্বীকার করেন।
পিবিআই আরও জানায়, জিয়াউরের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী, বিরলে তাঁর ভাড়া বাসায় অভিযান চালিয়ে দ্বিতীয় স্ত্রী আলেয়া ও শ্বশুর আইয়ুব আলীকে আজ ভোরে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে বিরল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ফটক এলাকার বাড়ি থেকে পিকআপ ভ্যানের চালক ইসমাইলকে ধরা হয়। তাঁরা পুলিশের কাছে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন।
সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, জিহাদের মায়ের সঙ্গে জিয়াউরের বিচ্ছেদ হয়েছে। এরপর জিহাদ বাবা ও সৎ মায়ের সঙ্গে থাকত। তবে তার সঙ্গে আলেয়ার বনিবনা হতো না। এর জের ধরে জিহাদকে হত্যার পরিকল্পনা করেন আলেয়া ও জিয়াউর। তাঁরা দুজন ১৪ জুলাই রাতে জিহাদকে বালিশচাপা দিয়ে হত্যা করেন। যাতে হাতের ছাপ না থাকে, সে জন্য লাশ গরম পানি দিয়ে ঝলসে দেওয়া হয়।
এরপর জিয়াউর, আলেয়া ও আইয়ুব বিছানার চাদর ও কাঁথা দিয়ে লাশ মুড়িয়ে স্টিলের ট্রাঙ্কের ভেতর ঢোকান। আইয়ুব বাড়ির পাশের দোকান থেকে দুটি তালা কিনে এনে ট্রাঙ্কটি তালাবদ্ধ করেন। এরপর বিরল স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ফটকের সামনে থেকে একটি পিকআপ ভ্যান ১৩ হাজার টাকায় ভাড়া করেন। এরপর বাড়ি থেকে অনেক দূরে নদীর তীরে বনের পাশে লাশ ফেলে আসেন তাঁরা। পুলিশ লাশ ঝলসে দিতে পানি গরমে ব্যবহৃত বৈদ্যুতিক ওয়াটার হিটার এবং পিকআপ ভ্যানটি জব্দ করেছে।
পিবিআইয়ের এসপি এ বি এম জাকির হোসেন বলেন, গ্রেপ্তার চারজনকে বুধবার (কাল) আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হবে।