ছুটি না নিয়ে ৩ মাস অনুপস্থিত শিক্ষক শাহেদ, তদন্ত কমিটি গঠন

এ টি এম শাহেদ পারভেজ

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটের প্রভাষক এ টি এম শাহেদ পারভেজ প্রায় তিন মাস ধরে কর্মক্ষেত্রে অনুপস্থিত। এ অবস্থায় তাঁর অধীন থাকা অন্তত দুটি ব্যাচের খাতা মূল্যায়ন না হওয়াতে ফলাফল আটকে আছে। প্রশ্নপত্র তৈরি না হওয়ায় একটি কোর্সের পরীক্ষাও স্থগিত হয়েছে।

এ ঘটনায় গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৫৫তম শিক্ষাপরিষদ সভায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ছুটি না নিয়ে অনুপস্থিত থাকা, তাঁর অধীন থাকা কোর্সগুলোর নম্বরপত্র জমা না দেওয়াসহ কয়েকটি বিষয় উল্লেখ করে ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটের পরিচালকের দেওয়া এক চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে এই কমিটি গঠন করা হয়। শাহেদ পারভেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আবদুস সোবহানের জামাতা।

তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ইলিয়াছ হোসেনকে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন, কলা অনুষদের ডিন ফজলুল হক, ইনস্টিটিউট অব ইংলিশ অ্যান্ড আদার ল্যাংগুয়েজের পরিচালক আবদুল্লাহ আল মামুন, আইন বিভাগের অধ্যাপক আবু নাসের মো. ওয়াহিদ, প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক রেজাউল করিম বাদল।

আইবিএ ও বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, প্রভাষক এ টি এম শাহেদ পারভেজ ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটের চতুর্থ ও পঞ্চম ব্যাচের ২০৬ ও ১০১ কোর্সের ইনকোর্স খাতা মূল্যায়ন করেননি। ফলে ওই দুটি কোর্সের ফল প্রকাশ আটকে আছে। দ্বিতীয় ব্যাচের চূড়ান্ত পরীক্ষা ১৫ ডিসেম্বর শুরু হয়ে ৩০ ডিসেম্বর শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু শেষ দিন অনুষ্ঠিতব্য ৪০৯ নম্বর কোর্সের প্রশ্নপত্র তৈরি না হওয়ায় পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। এমন অবস্থায় গত ২৪ অক্টোবর ইনস্টিটিউট থেকে শাহেদ পারভেজের রাজশাহীর ঠিকানায় একটি চিঠি দেওয়া হয়। পরে তাঁর স্থায়ী ঠিকানায় চিঠি পাঠানো হয়, কিন্তু চিঠি কেউ গ্রহণ করেননি।

ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটের পরিচালক জিন্নাত আরা প্রথম আলোকে বলেন, ১১ অক্টোবর তিনি ইনস্টিটিউটের পরিচালক হিসেবে যোগদান করেন। তখন থেকে ওই শিক্ষককে ইনস্টিটিউটে আর আসতে দেখেননি। পরে তিনি খোঁজ নিয়ে জেনেছেন, ওই শিক্ষক দেশের বাইরে যাওয়ার জন্য অনাপত্তিপত্র (এনওসি) চেয়েছিলেন, তাঁকে এনওসি দেওয়া হয়। কিন্তু ১৭টি খাতে ছাড়পত্র নেওয়া হয়নি বলে পরদিনই তাঁর এনওসি বাতিল করা হয়। কিন্তু ওই পত্র না গ্রহণ করেই তিনি দেশ ছাড়েন।

জিন্নাত আরা বলেন, নিয়ম অনুযায়ী এনওসি পাস হলেও সংশ্লিষ্ট শিক্ষককে নিজ নিজ বিভাগ বা ইনস্টিটিউটে সশরীর ছাড়পত্র নিতে হয়। কারণ, ওই সংশ্লিষ্ট শিক্ষকের কোনো কোর্স বা পরীক্ষার খাতা থাকতে পারে। সেগুলো বুঝিয়ে দিয়ে যেতে হয়। কিন্তু শাহেদ পারভেজ নিয়ম অনুযায়ী সেটা করেননি। তাঁর সঙ্গে তিনি বিভিন্নভাবে যোগাযোগ করে খোঁজার চেষ্টা করেছেন তাঁকে।

জিন্নাত আরা আরও বলেন, ওই শিক্ষকের অধীন থাকা ১০১ ও ২০৬ কোর্সের কারণে চূড়ান্ত ফল প্রকাশে জটিলতা তৈরি হয়েছে। অবশ্য তাঁর পরিবারের একজন সদস্যকে দিয়ে তিনি ফলাফল পাঠিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু সেখানে শিক্ষকের কোনো স্বাক্ষর নেই। তাই এটা নিয়ম অনুযায়ী গ্রহণ করা যায় না।

তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ইলিয়াছ হোসেন বলেন, তিনি তদন্তের জন্য এখনো কোনো চিঠি পাননি। চিঠিতে একটা সময় উল্লেখ থাকবে, সে অনুযায়ী তদন্ত করে তাঁরা সিন্ডিকেটে একটা প্রতিবেদন জমা দেবেন। তাঁদের তদন্তের বিষয় হবে একাডেমিক অনিয়মগুলো।

অভিযোগের বিষয়ে এ টি এম শাহেদ পারভেজকে ফোন দেওয়া হলে তাঁর মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়। পরে ওই নম্বরে খোলা হোয়াটসঅ্যাপে তাঁর কাছে এ বিষয়ে বক্তব্য চাওয়া হয়। তিনি বক্তব্যের বিষয়টি দেখলেও কোনো উত্তর দেননি।

আরও পড়ুন