কুষ্টিয়ার কুমারখালী
ছাদে ২০০ প্রজাতির ক্যাকটাস
বিদেশি ম্যাগাজিন ও ইউটিউবে ভিডিও দেখে ক্যাকটাসের পরিচর্যা করেন জাহাঙ্গীর আলম।
গড়াই নদের কূল ঘেঁষে পুরোনো দোতলা বাড়িটির নাম আলম ভিলা। কাঠের তৈরি প্রধান ফটক। দরজা খুলে ভেতরে প্রবেশ করতেই চোখ জুড়িয়ে যায়। ইটের গাঁথুনিতে লেগে আছে বাগানবিলাস। নিচতলায় হরেক রকমের ফুল আর লতা-পাতার গাছ। সিঁড়ি বেয়ে দোতলায় উঠতে মিলবে বাসরলতা। আর ছাদজুড়ে প্রায় ২০০ প্রজাতির ক্যাকটাস।
কুষ্টিয়া কুমারখালী পৌর এলাকার এলঙ্গীপাড়ার এ বাড়ির মালিকের নাম জাহাঙ্গীর আলম। পেশায় তিনি ব্যাংকার। ২০১৭ সালে অবসরে যান। এর পর থেকে সময় কাটে নিজ বাগানের পরিচর্যা করেই। তাঁর এ কাজে সহায়তা করেন স্ত্রী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হাসিনা খাতুন ও উচ্চমাধ্যমিকে পড়ুয়া ছোট মেয়ে নীহারিকা আলম।
সম্প্রতি বিকেলে ওই বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ছাদে মা ও মেয়ে ক্যাকটাসের পরিচর্যা করছেন। একটু পরেই সেখানে আসেন জাহাঙ্গীর আলম। তাঁর ক্যাকটাসপ্রীতির গল্প শোনান। বলেন, শুরুটা হয়েছিল আশির দশকে। ১৯৮৬ সালের দিকে তিনি বাড়িতে গাছগাছালি লাগাতে শুরু করলেও, কর্মব্যস্ততার কারণে মধ্যে ছেদ পড়ে। তবে চাকরি থেকে অবসরে যাওয়ার পর থেকে নতুন করে ক্যাকটাস সংগ্রহ শুরু করেন। ক্যাকটাসের বংশবৃদ্ধির জন্য গ্রাফটিং, শেড নির্মাণ, কাঁটা পর্যবেক্ষণ—সবকিছুই করেন নিজ হাতে।
জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ক্যাকটাসের চরিত্র, বৈশিষ্ট্য, পরিচর্যার বিষয়গুলো ভালোভাবে জানতে হয়। গাছে যেমন সার দিলেই হয়, ক্যাকটাসে তেমনটা নয়। বিদেশি ম্যাগাজিন ও ইউটিউবে ভিডিও দেখে তিনি এর পরিচর্চা করেন। দেশের যেকোনো প্রান্তে নতুন জাতের ক্যাকটাসের খবর পেলে তা সংগ্রহ করে নিয়ে আসেন।
ভারত থেকেও বেশ কয়েকটি প্রজাতির ক্যাকটাস নিয়ে এসেছেন জাহাঙ্গীর। এ ছাড়া বড় মেয়ে তমালিকা আলম অস্ট্রেলিয়ায় সিডনিতে থাকেন। সেখানে গিয়ে ফেরার সময় বেশ কয়েক প্রজাতির ক্যাকটাস এনেছেন। বর্তমানে তাঁর সংগ্রহে অন্তত ২০০ প্রজাতির ক্যাকটাস রয়েছে।
জাহাঙ্গীর আলম বলেন, কাঁটার গাছ থেকেও যে ফুল ফোটে এবং তা যে অন্যান্য ফুলের চেয়ে অনেক বেশি মনোহর, সেটা সবাইকে দেখানো ও নিজের আত্মতৃপ্তির জন্যই গড়ে তুলেছেন শখের এ বাগান। তাঁর এমন কাজে উৎসাহ জুগিয়ে চলেছেন পরিবারের অন্য সদস্যরা।
জাহাঙ্গীরের স্ত্রী হাসিনা খাতুন বলেন, ‘ওর (জাহাঙ্গীর) ক্যাকটাসপ্রীতি অনেক দিনের। এসব দেখে আমরাও বিভিন্নভাবে সহায়তা করি।’
নতুন প্রজন্মকে উদ্বুদ্ধ করতে আশপাশে আগ্রহীদেরও ক্যাকটাস দেন জাহাঙ্গীর আলম। তবে সেটা কোনো গাছের বিনিময়ে। কখনো টাকা নেন না। ভবিষ্যতে ক্যাকটাসের সংগ্রহ আরও বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে তাঁর।
জাহাঙ্গীর আলমের প্রতিবেশী রেজা আহমেদ বলেন, তাঁর বাড়িতেও বাগান আছে। জাহাঙ্গীর আলমের কাছ থেকে বেশ কয়েক জাতের ক্যাকটাস সংগ্রহ করে নিজের বাগানে নিয়েছেন। এখন তিনিও ক্যাকটাসের প্রেমে পড়ে গেছেন। সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে ছোট ছোট ক্যাকটাসগুলো দেখলে মন ভরে যায়।
কুমারখালীর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দেবাশীষ কুমার দাস বলেন, ‘লোকমুখে শোনার পর ওই বাড়িতে গিয়েছিলাম। বাড়ির পরিবেশ এবং ছাদে গিয়ে মুগ্ধ হয়েছি।’