রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে মাদার বখশ হলের ২২৮ নম্বর কক্ষে সম্প্রতি একটি আসন খালি হয়। এরপর ৩১৮ নম্বর কক্ষ থেকে ওই কক্ষে ওঠেন আবাসিক শিক্ষার্থী সালমান আহমেদ। গতকাল শনিবার ২২৮ নম্বর কক্ষ দখল নিতে যান ছাত্রলীগের এক নেতা। এ সময় তিনি সালমানকে বের করে দিয়ে কক্ষের দরজায় তালা লাগিয়ে দেন। এরপর সালমান কক্ষের দরজায় আরেকটি তালা দেন। হল প্রশাসনকে অভিযোগ দেওয়ার পর বিষয়টি সুরাহা হওয়ার আগে কাউকে ওই কক্ষে থাকতে দেওয়া হবে না জানিয়ে তারাও একটি তালা লাগিয়ে দেয়।
আজ রোববার বিষয়টির সুরাহা করা হবে বলে গতকাল জানিয়েছিল হল প্রশাসন। কিন্তু আজ সন্ধ্যা পর্যন্ত ওই কক্ষে তিনটি তালা ঝুলছে। এতে বিছানা ও বইপত্র কক্ষে আটকে থাকায় বিপাকে পড়েছেন সালমান আহমেদ।
সালমান ও হলের একাধিক শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, ২০১৮ সাল থেকে মাদার বখশ হলের ৩১৮ নম্বর কক্ষে থাকতেন সালমান আহমেদ। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফোকলোর বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। ১৩ জুন হলের ২২৮ নম্বর কক্ষ খালি হয়। সেখানে সালমানের এক বড় ভাই ছিলেন। তাঁর লেখাপড়া শেষ হওয়াতে তিনি চলে যান। ওই ফাঁকা কক্ষে হল প্রশাসনকে আবেদন দিয়ে যথাযথ প্রক্রিয়ায় ১৩ জুন ওঠেন সালমান।
এদিকে হলের কক্ষ ফাঁকা হওয়ার খবরে ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক শফিউর রহমান ওরফে রাথিক শনিবার বিকেলে সেখানে গিয়ে সালমানকে হুমকি ও গালাগাল করে কক্ষ খালি করতে বলেন। সালমান বের হতে না চাইলে তাঁকে বের করে দিয়ে কক্ষে তালা ঝুলিয়ে দেন শফিউর। ওই কক্ষে টাকাপয়সাসহ অন্য জিনিসপত্র থাকায় সালমান দরজায় আরেকটি তালা দিয়ে চলে আসেন। পরে তিনি ঘটনাটি হল প্রশাসনকে জানান।
হলের প্রাধ্যক্ষ সন্ধ্যার আগে এসে তাঁদের নিয়ে আলোচনায় বসেন। সালমান ওই কক্ষে হল প্রশাসনের মাধ্যমে যথাযথ প্রক্রিয়া উঠেছেন কি না, আজ রোববার সকালে তা যাচাই করে তালা খুলে দেওয়ার কথা জানিয়েছিলেন প্রাধ্যক্ষ। তবে আজ বিকেল পর্যন্ত ওই শিক্ষার্থী বাইরে অবস্থান করছেন।
সালমান আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘গতকাল সন্ধ্যায় প্রাধ্যক্ষ স্যার বলেছিলেন যে ২২৮ নম্বর কক্ষে ওঠার যথাযথ কাগজপত্র দেখাতে পারলে আজ সকাল থেকে ওই কক্ষে থাকতে পারব। এরপর প্রাধ্যক্ষ স্যার আজ বেলা ১১টার দিকে ছাত্রলীগের নেতা শফিউর রহমান ও আরেকজনের সঙ্গে কথা বলেন। ওই সময় আমাকে প্রায় এক ঘণ্টা বাইরে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। শফিউর বের হয়ে গেলে প্রাধ্যক্ষ স্যার জানান, বিষয়টি নিয়ে তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। দুই-তিন দিন বাইরে থাকতে হবে।’
বইপত্রসহ সব মালামাল ওই কক্ষে রয়েছে জানিয়ে সালমান বলেন, ‘এই কদিন কীভাবে ক্লাস করব, পড়বই-বা কীভাবে! স্যার কেন কথা ঘুরিয়ে আজকে তদন্ত কমিটির কথা বলছেন! এটা রহস্যজনক এবং হয়রানি।’
হলের কক্ষে তালা দেওয়ার বিষয়ে হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শফিউর রহমান শনিবার রাতে বলেছিলেন, তিনি ওই কক্ষের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নন। তিনি সেখানে যাননি।
এ বিষয়ে তদন্ত ছাড়া কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না বলে মন্তব্য করেছেন হল প্রাধ্যক্ষ মো. শামীম হোসেন। আজ বিকেলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, তিনি আজ সালমানকে ডেকেছিলেন। এ ঘটনায় আবাসিক শিক্ষকদের দিয়ে দুই সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। আগামী দুই-তিন দিনের মধ্যে প্রতিবেদন পেলে এ বিষয়ে সমাধান করা যাবে। সে পর্যন্ত ২২৮ নম্বর কক্ষ হল প্রশাসনের তালা ঝোলানো থাকবে।
উল্লেখ্য, এর আগে ১৬ জুন বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলে ছাত্রলীগের সহসভাপতি শামীম ওসমান দুই দফা হলগেটে তালা ঝুলিয়ে দেন। এ নিয়ে বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ছাত্রলীগ ও হল প্রশাসনের বৈঠক চলে। বৈঠকে বেরিয়ে আসে, শামীম হলের অবৈধ শিক্ষার্থী। তিনি অবৈধ হওয়া সত্ত্বেও শফিউল্লাহ নামের আরেকজন অবৈধ শিক্ষার্থীকে তুলেছিলেন।
শফিউল্লাহর বেডিংপত্র প্রাধ্যক্ষ নামিয়ে আনার জেরে তিনি হলগেটে তালা দিয়েছিলেন। পরে তাঁকে অপরাধ স্বীকার করে লিখিত দিতে বলা হয়। কিন্তু তিনি তা না দিয়ে বৈঠক ত্যাগ করেন। পরে হল প্রশাসন তাঁর বেডিংপত্রও নামিয়ে এনে অফিসকক্ষে রাখে।