ছাত্রলীগ নেতা মর্তুজা হত্যার বিচার হয়নি ২০ বছরে, ‘শিবির ক্যাডার’ হাবিব এখনো পলাতক

দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত আলী মর্তুজা চৌধুরী ওই সময় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ছিলেন
ছবি: সংগৃহীত

২০০১ সালের ২৯ ডিসেম্বর নিজের গ্রামের বাড়ি হাটহাজারীর ফতেয়াবাদ ছড়ারকূল এলাকায় একটি সেলুনে দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত হন ছাত্রলীগ নেতা আলী মর্তুজা চৌধুরী। ওই সময় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ছিলেন তিনি। এই হত্যাকাণ্ডে ‘শিবির ক্যাডার’ হিসেবে পরিচিত আটজনকে আসামি করে মামলা হয়েছিল। তবে ২০ বছর হতে চললেও এখনো শেষ হয়নি বিচারকাজ।

দুই বছর আগে মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়। শুরু হয় যুক্তিতর্ক শুনানি। কিন্তু সাক্ষীরা আসামিদের বিষয়ে মুখ খোলেননি। এর মধ্যে মামলাটি বিচারের জন্য আসে চট্টগ্রাম বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে। রাষ্ট্রপক্ষ গুরুত্বপূর্ণ ছয় সাক্ষীর আবার সাক্ষ্য গ্রহণের আবেদন করে। গত সোমবার আদালত এক সাক্ষীর সাক্ষ্য নেন। এভাবে বছরের পর বছর ধরে চলছে বিচারকাজ। মর্তুজার বাবা দেখে যেতে পারেননি ছেলে হত্যার বিচার। তবু আশা ছাড়েননি স্বজনেরা—একদিন বিচার শেষ হবে, শাস্তির আওতায় আসবে খুনিরা।

আসামিদের মধ্যে প্রধান আসামি শিবির ক্যাডার হিসেবে পরিচিত ‘শীর্ষ সন্ত্রাসী’ হাবিব খান ঘটনার পর থেকে পলাতক। জামিনে গিয়ে পলাতক আরও দুই আসামি। বিভিন্ন সময় নিহত হয়েছেন তিনজন। অন্য দুজন কারাগারে। চতুর্থ অতিরিক্ত চট্টগ্রাম জেলা ও দায়রা জজ আদালতে বিচারাধীন ছিল মামলাটি। চলতি বছরের শুরুতে মামলাটি বদলি হয়ে আসে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে।

পুলিশ ও আদালত সূত্র জানায়, তদন্ত শেষে পুলিশ ২০০৪ সালে এই মামলার অভিযোগপত্র দেয়। এতে আটজনকেই অভিযুক্ত করা হয়। আসামিদের মধে৵ ঘটনার পর থেকে পলাতক রয়েছেন হাবিব খান। জামিনে গিয়ে পলাতক মো. হাসান ও মো. ইসমাইল।

অন্য আসামিদের মধ্যে র‍্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন সন্ত্রাসী গিট্টু নাসির, গণপিটুনিতে নিহত হন আইয়ুব আলী ওরফে রাশেদ এবং সন্ত্রাসীদের গুলিতে মারা যান সাইফুল ইসলাম। শিবির ক্যাডার তছলিম উদ্দিন ওরফে মন্টু ও মো. আলমগীর ওরফে বাইট্টা আলমগীর কারাগারে রয়েছেন। মামলার ৩৫ সাক্ষীর মধ্যে ২৫ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেছেন আদালত।

গত বৃহস্পতিবার বিকেলে ছোট ভাই মর্তুজার মামলার খোঁজ নিতে দেখা যায় বড় ভাই স্কুলশিক্ষক আলী নাসেরকে। তিনিই এই হত্যা মামলার বাদী। আদালতের এক কর্মকর্তা জানান, ভাই হত্যার বিচারের জন্য এই মামলার বাদীকে প্রায়ই আদালতে আসতে দেখেন। আলী নাসের বলেন, ‘শেষ পর্যন্ত লড়ে যাব, বিচার না হওয়া পর্যন্ত।’

২০ বছরেও কেন আলোচিত এই মামলার বিচার শেষ হয়নি জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের সরকারি কৌঁসুলি মোহাম্মদ আইয়ুব খান প্রথম আলোকে বলেন, এটি একটি আলোচিত মামলা। মামলাটি যখন ট্রাইব্যুনালে আসে, তখন যুক্তিতর্ক শেষ হয়ে যায়। কিন্তু যেসব সাক্ষী সাক্ষ্য দিয়েছেন তাঁদের বক্তব্যে আসামিদের বিরুদ্ধে অপরাধ প্রমাণ করা কঠিন হবে। তাই পুনরায় মামলার গুরুত্বপূর্ণ ছয়জন সাক্ষীর সাক্ষ্য নেওয়ার জন্য আদালতে আবেদন করা হয়। ইতিমধ্যে একজন সাক্ষীর পুনরায় সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। বাকিদের পর্যায়ক্রমে নেওয়া হবে। এরপর আদালত রায় ঘোষণার দিন ধার্য করবেন। আশা করা যায় এবার আর দেরি হবে না।

ঘটনার দেড় বছর পর ২০০৩ সালের অক্টোবরে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মর্তুজার বাড়িতে যান। শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের সান্ত্বনা দিয়ে সেদিন তিনি আশ্বাস দেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে অপরাধীদের বিচার করা হবে।

মামলার বাদী আলী নাসের চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘মায়ের মৃত্যু হয় মর্তুজার আগে। বৃদ্ধ বাবা ছেলে হত্যার বিচারের অপেক্ষায় থাকতেন। ২০১১ সালে বাবা মারা গেছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বাড়িতে এসে আশ্বাস দিলেও এখনো বিচার পাইনি। আশায় আছি খুনিরা শাস্তি পাবে।’

চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ সালাম বলেন, দীর্ঘদিন সরকার ক্ষমতায় থাকারও পরও শিবির ক্যাডারদের হাতে নিহত ছাত্রলীগ নেতার বিচার ২০ বছরেও না হওয়া দুঃখজনক। দ্রুত খুনিদের শাস্তির আওতায় আনা উচিত।