‘চাপিয়ে দেওয়া পড়াশোনা কোনো কাজে আসে না’

পুরস্কার নিচ্ছে কক্সবাজারে পুস্তক পর্যালোচনা প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অর্জনকারী নওশিন তাবাসসুম। মঙ্গলবার দুপুরে
প্রথম আলো

‘বই পড়ার অভ্যাস ছোটবেলা থেকেই। করোনা অতিমারিতেও থামেনি বই পড়া। কারণ, বই পড়লে মনের জোর বাড়ে, জ্ঞানের পরিধি সমৃদ্ধ হয়, কথা বলার ধরন পাল্টে যায়, ব্যক্তিত্বের বিকাশ ঘটে। মা-বাবাসহ সব অভিভাবকের উচিত সন্তানকে বই পড়তে উৎসাহিত করা।’ কথাগুলো দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী নওশিন তাবাসসুমের। সে পড়ছে কক্সবাজার বিয়াম ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিজ্ঞান বিভাগে।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসন আয়োজিত ‘পুস্তক পর্যালোচনা (বুক রিভিউ) প্রতিযোগিতা ২০২১’-এ প্রথম স্থান অর্জন করেন নওশিন তাবাসসুম। আজ মঙ্গলবার দুপুরে সমুদ্রসৈকতের বিয়াম কক্সবাজার আঞ্চলিক কেন্দ্রের ইনানী মাল্টিপারপাস হলে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান হয়। প্রথম পুরস্কার হিসেবে দেওয়া হয়েছে ক্রেস্ট ও একটি ল্যাপটপ। পুরস্কার পেয়ে নওশিন বলে, জোর করে কাউকে শিক্ষিত করা যায় না। শিক্ষা অর্জন করতে হয় আনন্দের সঙ্গে। স্বশিক্ষিত মানুষ হতে হলে পাঠ্যপুস্তকের পাশাপাশি বাইরের বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।

করোনা মহামারিতে শিক্ষার্থীরা ঘরে বসে অলস সময় পার করছিল, ঠিক তখনই শিক্ষার্থীদের মনোবল দৃঢ়-চাঙা করতে এবং সৃজনশীল মনন গঠনে জেলা প্রশাসন এই পুস্তক পর্যালোচনা প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। গত ২৫ মে ‘ডিসি কক্সবাজার’ ফেসবুক পেজে প্রতিযোগিতা সম্পর্কিত নোটিশ দেওয়া হয়। এরপর প্রতিযোগিতায় অংশ নেয় জেলার বিভিন্ন স্কুল-কলেজের সপ্তম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির ২০০ জন শিক্ষার্থী। প্রতিযোগিতার কৌশল, পুস্তক পর্যালোচনার নিয়মকানুন, অনলাইনে (জুম) পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন তৈরির পদ্ধতি শেখানো হয় তাদের। পরবর্তী সময়ে লটারির মাধ্যমে ১০৭ জন শিক্ষার্থীকে প্রতিযোগিতার জন্য নির্বাচিত করা হয়। তাদের মহান ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাসংবলিত প্রসিদ্ধ লেখকের বই বাছাই করে সরবরাহ করা হয়। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ৪৯ জন শিক্ষার্থী জেলা প্রশাসনের কাছে ই-মেইলে পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন জমা দেয়। এর মধ্য থেকে ৩৫টি প্রেজেন্টেশন চূড়ান্ত প্রতিযোগিতায় উপস্থাপনের জন্য মনোনীত করা হয়।

আজ মঙ্গলবার দুপুরে সমুদ্রসৈকতের বিয়াম কক্সবাজার আঞ্চলিক কেন্দ্রের ইনানী মাল্টিপারপাস হলে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন আয়োজিত ‘পুস্তক পর্যালোচনা প্রতিযোগিতা ২০২১’-এর পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান হয়।

২৮ জুলাই ভার্চ্যুয়াল প্ল্যাটফর্মে পুস্তক পর্যালোচনা প্রতিযোগিতার উদ্বোধন করেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কে এম আলী আজম। আজ প্রতিযোগিতায় বিজয়ী ৩৫ জন শিক্ষার্থীর হাতে পুরস্কার তুলে দেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কে এম আলী আজম।

প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় হয়েছেন কক্সবাজার সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী তানিস্তা রায়হান এবং তৃতীয় হয়েছেন কক্সবাজার সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র তাহমিদ ইসনাইন। প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় এই তিনজনের হাতে ক্রেস্ট ও ল্যাপটপ তুলে দেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি সচিব কে এম আলী আজম। বিজয়ী অপর ৩২ জন শিক্ষার্থীকে ক্রেস্ট ও বই উপহার দেওয়া হয়।

কক্সবাজারে পুস্তক পর্যালোচনা প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে উপস্থিত সুধী সমাজ। মঙ্গলবার দুপুরে
। ছবি-প্রথম আলো

এই পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ লোকপ্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (বিপিএটিসি) রেক্টর (সচিব) মো. মনজুর হোসেন, চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মো. কামরুল হাসান, অতিরিক্ত সচিব ও শরণার্থী ত্রাণ, প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) শাহ রেজওয়ান হায়াত। বক্তব্য দেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. নাছির উদ্দিন, শিক্ষার্থী নওশিন তাবাসসুম। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী কমিশনার আরাফাত ছিদ্দিকী।

এই প্রতিযোগিতাকে সময়োপযোগী উদ্যোগ অভিহিত করে প্রধান অতিথি সিনিয়র সচিব কে এম আলী আজম বলেন, শিক্ষার্থীদের মেধার বিকাশ ঘটাতে, নিজেদের যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে এবং অভ্যন্তরীণ যোগ্যতায় পরিবর্তন ঘটাতে এমন উদ্যোগের বিকল্প নেই। উপস্থিত শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, চাপিয়ে দেওয়া পড়াশোনা কোনো কাজে আসে না। মুখস্থ করে পরীক্ষায় ভালো ফলাফল অর্জন করা গেলেও সুশিক্ষিত মানুষ হওয়া যায় না। পড়াশোনা করতে হয় আনন্দের সঙ্গে। বিদ্যালয় হবে আনন্দের, পাঠদান হবে হাসিখুশির। এখন হচ্ছে তার উল্টো। শিক্ষার্থীদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা মনে ধারণ এবং অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে আলোকিত মানুষ হওয়ার তাগিদ দেন আলী আজম।

সচিব মো. মনজুর হোসেন বলেন, পুস্তক পর্যালোচনার এই প্রতিযোগিতা কক্সবাজার থেকে শুরু হলো। দেশের প্রতিটা জেলায় এ উদ্যোগ গ্রহণ করা উচিত। এতে শিক্ষার্থীরা বই পড়ার প্রতি উৎসাহিত হবে। দেশ ও জাতি সম্পর্কে জানতে পারবে। মুক্তিযুদ্ধ ও অসাম্প্রদায়িক চেতনায় উদ্বুদ্ধ হবে শিক্ষার্থীরা।

জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ প্রথম আলোকে বলেন, কয়েকটি লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে তিনি এই পুস্তক পর্যালোচনা প্রতিযোগিতার উদ্যোগ নিয়েছেন। এর মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য হলো জাতির পিতার জীবন ও দর্শনকে আগামী প্রজন্মের মধ্যে সঞ্চারিত করা, করোনা অতিমারি পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের মনোদৈহিক স্থবিরতা কাটিয়ে সৃজনশীল কার্যক্রমের মাধ্যমে মেধা ও মননের বিকাশ, তরুণ প্রজন্মকে মহান মুক্তিযুদ্ধ, ভাষা আন্দোলন ও দেশপ্রেমের চেতনায় উদ্বুদ্ধকরণ, শিক্ষার্থীদের বই পড়ার প্রতি আকৃষ্ট করা, পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন প্রস্তুত ও উপস্থাপনার কলাকৌশল শেখানো, শিক্ষার্থীদের পাবলিক স্পিকিংয়ের জড়তা কাটানো এবং আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি, ডিজিটাল বাংলাদেশের সুবিধা কাজে লাগিয়ে শিক্ষার্থীদের দক্ষতা বৃদ্ধি এবং সোনার বাংলা গড়তে নতুন প্রজন্মকে প্রস্তুত করা। এতে তিনি বেশ সাড়া পেয়েছেন। ভবিষ্যতেও এ প্রতিযোগিতা অব্যাহত রাখা হবে।