২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

চাঁপাইনবাবগঞ্জে শনাক্তের হার আবার বাড়ছে, সচেতন হয়নি মানুষ

চাঁপাইনবাবগঞ্জে লকডাউনের নবম দিনে শহরের প্রধান সড়কে যান চলাচল কম ছিল। তবে পাড়া–মহল্লার রাস্তাগুলোতে মানুষ ও যানবাহন চলাচল করছে। আজ বুধবার দুপুর সোয়া ১২টায় পৌর এলাকার পোল্লাডাঙ্গা মহল্লায়ছবি: প্রথম আলো

চাঁপাইনবাবগঞ্জে সংক্রমণের হার বেড়েই চলেছে। সংক্রমণের হার বাড়ায় এবং সীমান্তবর্তী জেলা হওয়ায় এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে এ জেলায় লকডাউন চলছে। করোনার সংক্রমণ প্রতিরোধে প্রশাসন নানা পদক্ষেপ নিলেও মানুষ এখনো সচেতন হয়নি। প্রধান সড়কে না হলেও মানুষ অবাধে পাড়া-মহল্লার রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। আজ বুধবার চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে এ দৃশ্য দেখা গেছে।

মানুষের মধ্যে এমন বেপরোয়া ভাব দেখে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা সিভিল সার্জন জাহিদ নজরুল চৌধুরী বলেন, মানুষকে ঘরে রাখতে না পারলে লকডাউন কাজ দেবে না। তিনি আরও বলেন, গত মঙ্গলবার রাতে পাওয়া করোনা পরীক্ষার ফলাফলে দেখা যায়, ৩৬৩ জনের মধ্যে ১৯৬ জন আক্রান্ত। শনাক্তের হার ৫৩ দশমিক ৯৯ শতাংশ। আগের দিন শনাক্তের হার ছিল ৩৪ শতাংশ।

  • বর্তমানে জেলায় করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ৮৮৭

  • এর মধ্যে সদর হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছেন ২০ জন। বাড়িতে চিকিৎসাধীন ৮৬৭ জন।

  • এ পর্যন্ত মোট আক্রান্তের সংখ্যা ২ হাজার ৩৩।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক সাইফুল ফেরদৌস প্রথম আলোকে বলেন, মঙ্গলবার সকাল আটটা থেকে বুধবার সকাল আটটা পর্যন্ত হাসপাতালে চাঁপাইনবাবগঞ্জে তিনজন করোনা রোগী মারা গেছেন।

এদিকে বেলা একটার দিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে তরল অক্সিজেনের ট্যাংক উদ্বোধন করা হয়েছে। জেলা প্রশাসক মো. মঞ্জুরুল হাফিজ এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। এ সময় তিনি বলেন, এ ট্যাংকের ধারণক্ষমতা ৫ হাজার ৬৪৪ লিটার। এখন থেকে ৫০ জন রোগীকে অক্সিজেন সরবরাহ করা যাবে। এর আগে একসঙ্গে ১৮ জনকে সরবরাহ করার সক্ষমতা ছিল। এ ছাড়া হাসপাতালে করোনা ইউনিটের শয্যাসংখ্যা ২০ থেকে বাড়িয়ে ৩০ করা হবে।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক মুমিনুল হক, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি দুররুল হোদা, সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী, হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) নাদিম সরকার, সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান রুহুল আমীন প্রমুখ।

আজ বুধবার চাঁপাইনবাবগঞ্জে লকডাউনের নবম দিন। পৌর এলাকার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, রাস্তায় রিকশা, অটোরিকশা, ভ্যান, মোটরসাইকেল, বাইসাইকেল ও মানুষজনের চলাচল বেড়েছে। তবে শহরের মূল রাস্তাগুলোতে চলাচল একটু কম।

চাঁপাইনবাবগঞ্জে চলছে লকডাউন। লকডাউন কার্যকর করতে তৎপর রয়েছে পুলিশ প্রশাসন। পৌর এলাকার ভেতরের রাস্তাগুলোতেও চলছে অভিযান। আজ বুধবার দুপুর সোয়া ১২টার দিকে পৌর এলাকার আজাইপুর মহল্লায়
ছবি: প্রথম আলো

দুপুর পৌনে ১২টার দিকে প্রায় আধা ঘণ্টাব্যাপী পৌর এলাকার চৌধুরীর মোড় থেকে চাঁদলাই ক্লাব মোড় পর্যন্ত মাইক্রোবাস নিয়ে অভিযান চালাতে দেখা যায় ডিবির একটি দলকে। এ সময় তারা কয়েকটি মোটরসাইকেল, রিকশা ও অটোরিকশার চাকার হাওয়া ছেড়ে দেয়। জরুরি কাজে বের হওয়া ব্যক্তিদের যথার্থ প্রমাণ দিয়ে ছাড়া পেতে হয়। ডিবির গাড়ি আসতে দেখে খুলে রাখা দোকানপাট ও চায়ের স্টলগুলো তাড়াহুড়া করে বন্ধ করতে দেখা যায়।

দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে শহরের কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে বাসশ্রমিকদের বসে অলস সময় কাটাতে দেখা যায়। এ সময় কথা হয় যাত্রীসেবা পরিবহনের বাসচালক মো. মাইনুল ইসলাম, মো. মিলন, সুপারভাইজার আশরাফুল ইসলাম এবং এসআর পরিবহনের বাসচালক নাসিরুল ইসলামের সঙ্গে। তাঁরা বলে, প্রায় দুই মাস কর্মহীন হয়ে তাঁদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। তাঁরা না পাচ্ছেন মালিকদের কাছ থেকে, না পাচ্ছেন ইউনিয়ন থেকে কোনো সহায়তা। এবার কোনো সরকারি সহায়তাও নেই। পরিবার-পরিজন নিয়ে অনাহারে-অর্ধাহারে চলছে তাঁদের দিন।

গত ঈদের পর থেকেই চাঁপাইনবাবগঞ্জে করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি চলছিল। লকডাউন ঘোষণার আগে এক সপ্তাহে সংক্রমণের গড় হার ছিল প্রায় ৫৯ শতাংশ। অন্যদিকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করোনা রোগীর বেশির ভাগই সীমান্তবর্তী শিবগঞ্জ উপজেলার।

চাঁপাইনবাবগঞ্জে বিশেষ লকডাউনের নবম দিনে শহরের মূল সড়কগুলো যান চলাচল কম দেখা যায়। আজ বুধবার শহরের শান্তিরমোড় এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

বিভিন্ন সীমান্তপথে অবৈধ চলাচলে করোনার ভারতীয় ধরন ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দেয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আনতে গত ২৪ মে দুপুরে করোনা প্রতিরোধ জেলা কমিটির জরুরি সভা শেষে ১১ দফা নির্দেশনা দিয়ে জেলা প্রশাসক মো. মঞ্জুরুল হাফিজ জেলাব্যাপী সাত দিনের লকডাউনের ঘোষণা দেন। সার্বিক দিক বিবেচনা করে গত সোমবার লকডাউনের শেষ দিনে জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির সভা শেষে সাত দিনের লকডাউন বাড়ানোর ঘোষণা দেন জেলা প্রশাসক। এ লকডাউন চলবে ১ থেকে ৭ জুন।