চাঁপাইনবাবগঞ্জে ভর্তি হতে না পেরে ফেরত যাচ্ছেন করোনা রোগীরা
চাঁপাইনবাবগঞ্জে করোনা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেলা হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে ভর্তির জন্য রোগীর চাপ বেড়েছে। করোনা ওয়ার্ডে শয্যা খালি না থাকায় অনেক রোগীকেই ভর্তি না নিয়ে ফিরিয়ে দিতে হচ্ছে। আজ রোববার দুপুরে সরেজমিনে এ দৃশ্য দেখা যায়।
হাসপাতালের নতুন ভবনে ঢুকতেই দেখা যায়, বহির্বিভাগে চিকিৎসা নেওয়া প্রচুর রোগী গা–ঘেঁষাঘেঁষি করে ওষুধের কাউন্টার থেকে ওষুধ নেওয়ার জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন। তাঁদের মধ্যে নেই কোনো সামাজিক দূরত্ব।
করোনা ওয়ার্ডের সামনে গিয়ে দেখা যায়, ভর্তির জন্য চারজন রোগী অপেক্ষা করছেন। তাঁদের মধ্যে দুজনকে ভর্তি করা হলেও ওয়ার্ডে শয্যা খালি না থাকায় দুজন রোগীকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়।
বেলা পৌনে দুইটার দিকে হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডের সামনে গিয়ে দেখা যায়, ভর্তির সুযোগ না পেয়ে করোনা ওয়ার্ডের বাইরেই সিলিন্ডার ভাড়া করে অক্সিজেন দেওয়া হচ্ছিল করোনা রোগী মো. সাইদুল ইসলামকে (৮৫)। তাঁর বাড়ি সদর উপজেলার তাহেরপুর গ্রামে। তাঁর অক্সিজেন স্যাচুরেশন ছিল ৬৭। সঙ্গে থাকা মেয়ে সুফিয়া বেগম বলেন, হাসপাতালে দেড় ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকলেও শয্যা না থাকায় তিনি বাবাকে ভর্তি করাতে পারেননি। তাই বাধ্য হয়েই ফিরে যেতে হচ্ছে তাঁদের।
একই সময়ে মো. আওয়াল (৭০) নামের আরেক রোগীকে বাইরে অবস্থান করতে দেখা যায়। তিনিও দেড় ঘণ্টা ধরে অপেক্ষা করে ভর্তি হতে পারেননি বলে জানালেন। তাঁকেও বাইরে থেকে সিলিন্ডার ভাড়া করে এনে অক্সিজেন নিতে হচ্ছে। তাঁর বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকার আলীনগর মহল্লায়।
করোনা ওয়ার্ডের দায়িত্বরত চিকিৎসক শাখাওয়াত হোসেন বলেন, গতকাল শনিবার দুপুরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সভায় সিদ্ধান্ত হয় যে করোনা ওয়ার্ডে শয্যা ৩০ থেকে বাড়িয়ে ৫০ করা হবে। কথা ছিল আজ সকাল থেকে সেটি চালু হবে। কিন্তু গতকাল বেলা সাড়ে তিনটার মধ্যেই ৫০টি শয্যায় করোনা রোগী ভর্তি হয়ে যান। রোগীর যে চাপ, তাতে শয্যা বাড়িয়ে ১০০ করা জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে। আগে ৩০ শয্যার জন্য তিনজন চিকিৎসক ছিলেন করোনা ওয়ার্ডে। এখন চারজন চিকিৎসক আছেন। নার্সের সংখ্যা বাড়িয়ে ছয় থেকে সাতজন করা হয়েছে। আরও চিকিৎসক ও নার্স বাড়ানো দরকার বলে তিনি মন্তব্য করেন।
চিকিৎসক শাখাওয়াত হোসেন আরও বলেন, হাসপাতালের একজন রোগীকে এখনই আইসিইউ–সুবিধা দেওয়া দরকার। কিন্তু তাঁকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো যাচ্ছে না। সেখানে শয্যা ফাঁকা নেই। হাসপাতালের পুরুষ মেডিসিন ওয়ার্ডে ১১ জন রোগী ভর্তি। তাঁদের মধ্যে নয়জনই সন্দেহভাজন করোনা রোগী। এ ছাড়া মহিলা মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি ১৪ জনের মধ্যে ৫ জনই সন্দেহভাজন করোনা রোগী। তাঁদের মধ্যে রোজলী বেগম নামের একজনের অবস্থা খারাপ। তাঁকে করোনা ওয়ার্ডে ভর্তির জন্য রাজশাহীতে পাঠানো হলেও শয্যা ফাঁকা না থাকায় ফেরত পাঠানো হয়েছে।
হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরওমও) নাদিম সরকার বলেন, সংক্রমণের যে পরিস্থিতি, তাতে এই মুহূর্তে শয্যা বাড়িয়ে ২০০ করা হলেও রোগী ভর্তি হয়ে যাবে। কিন্তু ৫০ শয্যার বেশি পরিচালনার সক্ষমতা এই হাসপাতালের নেই।
এদিকে স্বাস্থ্য বিভাগের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মীরজাদী সেব্রিনা আজ চাঁপাইনবাবগঞ্জে সোনামসজিদ স্থলবন্দর ও ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেলা হাসপাতাল পরিদর্শন করেন। বিকেল পৌনে তিনটার দিকে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেলা হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা কর্মকর্তা ও বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। বৈঠক শেষে হাসপাতাল প্রাঙ্গণে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘সংক্রমণ যখন অনেক বেশি বেড়ে যায়, তখন তা যেকোনো দেশের জন্যই বিরাট চাপ হয়ে দাঁড়ায়। দেশে এখন অস্বাভাবিক পরিস্থিতি বিরাজ করছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা ছাড়া এ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসবে না।’ চাঁপাইনবাবগঞ্জে করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলা নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘পরিস্থিতি স্থিতিশীল রয়েছে। সংক্রমণ বাড়েনি। আর যেন না বাড়ে, সেই চেষ্টা করতে হবে।’
চাঁপাইনবাবগঞ্জে সংক্রমণের বিষয়ে মীরজাদী সেব্রিনা বলেন, ঈদে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জে মানুষজন এসেছেন। আবার এখান থেকেও অনেক যাত্রী গেছেন। এতে সংক্রমণ বেড়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন কারণেই ভাইরাস ছড়াতে পারে। ‘ভারতীয় ধরন’ কী ধরনের বিপজ্জনক অবস্থা তৈরি করতে পারে? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘কোনো ভেরিয়েন্টই আলাদাভাবে কিছু করতে পারবে না, যদি আমরা স্বাস্থ্যবিধি ঠিকমতো মেনে চলি। সংক্রমণ রোধ করতে হলে বাড়ির বাইরে কম যেতে হবে। গণজমায়েতসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান বাদ দিতে হবে। বাইরে বের হলে অবশ্যই মাস্ক পরে সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।’
হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) নাদিম সরকার বলেন, বৈঠকে চিকিৎসকদের পক্ষ থেকে মীরজাদী সেব্রিনাকে জানানো হয়েছে, হাসপাতালের অক্সিজেন সরবরাহ লাইনের ৭২টি পয়েন্ট রয়েছে। এখানে শয্যা ৭২টি পর্যন্ত বাড়ানো যেতে পারে, যদি প্রয়োজনীয় জনবল ও সরঞ্জাম সরবরাহ করা যায়। তিনি এ বিষয়ে সহায়তা দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।
জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, গতকাল শনিবার ৩৪৯ জনের করোনা পরীক্ষায় ১৪২ জনের শনাক্ত হয়। শনাক্তের হার ৪০ দশমিক ৬৯ শতাংশ। গত শুক্রবার শনাক্তের হার ছিল ৫৫ দশমিক ১৫ শতাংশ।