ঘর–বাইরে বন্যার পানি, দুর্ভোগ সীমাহীন

তিস্তায় পানি বাড়ায় কুড়িগ্রাম ও নীলফামারীতে আকস্মিক বন্যা দেখা দিয়েছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে কুড়িগ্রামের ৩০ হাজার মানুষ।

তিস্তায় পানি বাড়ায় কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলায় আকস্মিক বন্যা দেখা দিয়েছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে মানুষ। গতকাল উপজেলার চর খিতাবখাঁয়ছবি: প্রথম আলো

‘সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি, ঘরে তীব্র বেগে পানি ঢুকছে। কী তার ডাক, ভয়ে বুক কাঁপে! ঘড়বাড়িতে পানি ওঠে। চরের সমস্ত ফসল ডুবি যায়। ভয়ে মানুষ চিৎকার করতে থাকে। বাড়িঘরের পাশাপাশি পাকা ধান, কলাই, আলু, মরিচ, বেগুন, পেঁয়াজ, করলা, বেগুনসহ সব ডুবে গেছে।’ গতকাল বৃহস্পতিবার স্ত্রী সুফিয়া বেগমকে নিয়ে পানিতে দাঁড়িয়ে কথাগুলো বলেন ফজলুর রহমান। তাঁদের বাড়ি কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নের চর খিতাবখাঁয়।

গত কয়েক দিনে তিস্তার পানি বাড়ায় আকস্মিক বন্যায় কুড়িগ্রামের রাজারহাট, উলিপুর ও চিলমারী উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এতে চর খিতাবখাঁর বাসিন্দা ফজলুর রহমানের মতো ৩ উপজেলার ৩০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। বন্যার পানিতে খেতের সব ফসল ডুবে গেছে। ঘরে খাবার নেই। বিশুদ্ধ পানি নেই। এসব চরের মানুষ চরম কষ্টের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে।

গতকাল সকালে রাজারহাট উপজেলার তিস্তাপারের বুড়িরহাট এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, উত্তর–পশ্চিম দিক থেকে তিস্তার পানি তীব্র বেগে ধেয়ে আসছে। আসবাবসহ পরিবারের বিভিন্ন প্রয়োজনীয় সামগ্রী পড়ে আছে নদীর পাড়ে। পাশের বাঁধে ভেজা ধান শুকাচ্ছেন বৃদ্ধা আনিছা বেগম ও রাহেলা বেগম।

কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক মো. মঞ্জুরুল হক জানান, তিস্তায় পানি বৃদ্ধির ফলে জেলায় ৪৭০ হেক্টর জমির ফসল নিমজ্জিত হয়েছে।

গত বুধবার তিস্তায় আকস্মিক বন্যায় ডিমলা উপজেলার পূর্ব ছাতনাই, খগাখড়িবাড়ি, টেপাখড়িবাড়ি, খালিশা চাপানী, ঝুনাগাছ চাপানী ও গয়াবাড়ি ইউনিয়ন এবং জলঢাকা উপজেলার ডাউয়াবাড়ী, শৌলমারী, কৈমারী ইউনিয়নের ১০ সহস্রাধিক পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

উপজেলার পূর্ব ছাতনাই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল লতিফ খান বলেন, ‘আমার ইউনিয়নে ১ হাজার ৫০০ পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব পরিবার বাঁধের উঁচু স্থানে রাত কাটাচ্ছে। পাশাপাশি পশ্চিম ছাতনাই ইউনিয়নেরও ৭০০ পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে বাঁধে আশ্রয় নিয়েছে।’

পাউবোর উত্তরাঞ্চল রংপুরের প্রধান প্রকৌশলী জ্যোতি প্রসাদ ঘোষ বলেন, ‘এ বন্যায় তিস্তা ব্যারাজ ও নদী রক্ষার প্রায় ৯টি স্পার, ক্রস ও গ্রোয়েন বাঁধ বিধ্বস্ত হয়ে ৫০–৬০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।