ঘটা করে সম্মেলনের পরও দুই বছরে কমিটি হয়নি

  • ২০২০ সালের প্রথম দিক থেকে ইউনিয়ন কমিটি গঠনে উদ্যোগী হয় উপজেলা আওয়ামী লীগ।

  • ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ ১৫ দিনের মধ্যে পৃথকভাবে আট ইউনিয়নের সম্মেলন হয়।

  • সম্মেলনে সাংসদসহ জ্যেষ্ঠ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

কিশোরগঞ্জ জেলার ম্যাপ

২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাস। কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম উপজেলার আট ইউনিয়নের সব কটিতে ঘটা করে আওয়ামী লীগের সম্মেলন হয়। পদপ্রত্যাশীরা এই নেতার পছন্দ তো ওই নেতার নয়, এমন এক ব্যক্তিগত সমীকরণের মারপ্যাঁচে ওই সময় কমিটি ঘোষণা করা যায়নি। এখন দুই বছর পেরিয়ে গেলেও ওই কমিটি আর হয়নি। আবার চলমান কমিটি বিলুপ্ত করে দেওয়ায় ইউনিয়ন পর্যায়ের আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব এখন অভিভাবকহীন হয়ে পড়েছে।

কাউসার আলম উপজেলার দেওঘর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। সম্মেলনের দিন তিনি দলের কাছে সাধারণ সম্পাদক পদ চান। ঘটা করে সম্মেলন হলেও কমিটি না হওয়ায় হতাশ তিনি। তিনি বলেন, ‘আশা ছিল সম্মেলনের দিন কমিটি পাব। এখন মাস গড়িয়ে বছর। তা-ও এক বছর নয়, দুই বছর। এখন ধৈর্য হারিয়ে ফেলেছি।’

চলমান কমিটি বিলুপ্ত করে দেওয়ায় ইউনিয়ন পর্যায়ের আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব এখন অভিভাবকহীন হয়ে পড়েছে।

সদর, দেওঘর, কাস্তুল, বাঙ্গালপাড়া, কলমা, আদমপুর, খয়েরপুর-আবদুল্লাহপুর ও পূর্ব অষ্টগ্রাম ইউনিয়ন নিয়ে অষ্টগ্রাম উপজেলা। জেলার তিন হাওর উপজেলা অষ্টগ্রাম, মিঠামইন ও ইটনা নিয়ে সংসদীয় আসন কিশোরগঞ্জ-৪। এই আসনে স্বাধীনতা-পূর্ব সময় থেকে রাষ্ট্রপতি হওয়ার আগপর্যন্ত সাংসদ ছিলেন মো. আবদুল হামিদ। বর্তমানে টানা তিনবারের সাংসদ রাষ্ট্রপতির ছেলে রেজওয়ান আহাম্মদ। নানা কারণে হাওরের রাজনীতি জেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতিকে প্রভাবিত করে। সেই কারণে ইউনিয়ন কমিটি গঠনের সময় মূল নেতৃত্ব নানা সমীকরণ মাথায় রেখে এগোয়।

২০২০ সালের প্রথম দিক থেকে ইউনিয়ন কমিটি গঠনে উদ্যোগী হয় উপজেলা আওয়ামী লীগ। ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ ১৫ দিনের মধ্যে পৃথকভাবে আট ইউনিয়নের সম্মেলন হয়। সম্মেলনে সাংসদসহ জ্যেষ্ঠ নেতারা উপস্থিত ছিলেন। প্রতিটি সম্মেলনে ছিল নেতা-কর্মীদের সরব উপস্থিতি।

উপজেলার কয়েকজন নেতা-কর্মী বলেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ফজলুল হক হায়দারী ও সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলামের মধ্যে দ্বন্দ্ব নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলছে। নেতৃত্ব আসতে চাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে কে কার লোক, সেই হিসাব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।

এদিকে কমিটি বিলুপ্ত হওয়ার পর আট ইউনিয়নে নেতৃত্ব-শূন্যতা দেখা দেয়। বিশেষ করে দলীয় কর্মসূচিগুলো পালনের সময় দুর্বলতা স্পষ্ট হয়। কাস্তুল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হতে সম্মেলনের দিন আগ্রহ দেখিয়েছিলেন লিটন শুক্ল দাস। তিনি উপজেলা যুবলীগের প্রচার সম্পাদক। লিটন বলেন, সম্মেলনের পরেও তিনবার কমিটি ঘোষণার তারিখ হয়। সেটিও আর চূড়ান্ত রূপ পায়নি।

কমিটিবিহীন দুই বছর ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের রাজনীতির চিত্র জানতে কথা হয় বিলুপ্ত কমিটির কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতার সঙ্গে। তাঁদের সবার ভাষ্য, গতি হারিয়েছে নেতৃত্ব।

রবীন্দ্র চন্দ্র দাস বিলুপ্ত হওয়া কলমা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি। তিনি বিভিন্ন মেয়াদে ২০ বছর সভাপতির পদটি ধরে রেখেছিলেন। রবীন্দ্র চন্দ্র বলেন, বড় নেতাদের পছন্দ-অপছন্দের তালিকায় আটকে আছে কমিটি।

পূর্ব অষ্টগ্রাম ইউনিয়নের বিলুপ্ত কমিটির সভাপতি কাছেদ মিয়ার ভাষ্য, ওপরের নেতৃত্ব ঠিক থাকলে হয়তো কমিটি পেতে এত বিলম্ব হতো না। দেওঘর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের বিলুপ্ত কমিটির সভাপতি আফতাব উদ্দিন জানালেন, কর্মীরা এখন অস্থির হয়ে গেছেন। ঘটা করে সম্মেলন হলেও কমিটি গঠনে ভাটার কারণ জানতে কথা হয় উপজেলা আওয়ামী কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতার সঙ্গে। এর মধ্যে বিলম্বের একক কারণ হিসেবে ফজলুল হক হায়দারী ও শহীদুল ইসলাম দায়ী করলেন করোনাকে।

দুজনের মধ্যে মতবিরোধ থাকার বিষয়টিও এড়িয়ে যান তাঁরা। শেষে দুজনের কাছ থেকে পাওয়া যায় আশার বাণী। তাঁরা জানালেন, আর বিলম্ব নয়। নেতা-কর্মীদের ধৈর্যের অপেক্ষা আর লম্বা হবে না। এক মাসের মধ্যে নতুন নেতৃত্বের নাম প্রকাশ করা হবে।