জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলার মেরুরচর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে একটি ভোটকেন্দ্রে পুলিশের ওপর হামলা ও গাড়িতে আগুন দেওয়ার ঘটনায় করা মামলায় এলাকার চারটি গ্রামের লোকজন বাড়িছাড়া। এসব গ্রামের বেশির ভাগ ঘরে তালা ঝুলছে এবং বাজারের দোকানপাট বন্ধ।
পঞ্চম ধাপে ৫ জানুয়ারি মেরুরচর ইউপিতে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। এখানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোহাম্মদ সিদ্দিকুর রহমান জয়ী হয়েছেন। তাঁর প্রতিপক্ষ ছিলেন দলের বিদ্রোহী প্রার্থী মনোয়ার হোসেন। ভোটকেন্দ্রে পুলিশের ওপর হামলা ও গাড়ি পোড়ানোর ঘটনায় গত বৃহস্পতিবার রাতে বকশীগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আবু শরীফ বাদী হয়েছে একটি মামলা করেন। এতে বিদ্রোহী প্রার্থী মনোয়ার হোসেনসহ ৯২ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ১ হাজার ৬০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। এ ঘটনায় ১১ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ভোটের দিন (৫ জানুয়ারি) দুপুরে মেরুরচরে হাছেন আলী উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে নৌকার প্রার্থী মোহাম্মদ সিদ্দিকুর রহমান ও তাঁর লোকজন কেন্দ্রে প্রবেশ করেন। এ সময় বিদ্রোহী প্রার্থী মনোয়ার হোসেনের লোকজন খবর পেয়ে কেন্দ্রে গিয়ে বাধা দেন। এতে উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। পরে বিদ্রোহী প্রার্থীর বিক্ষুব্ধ কর্মীরা ওই কেন্দ্রের মাঠে থাকা বকশীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল ইসলামের গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেন। একই সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর হামলা চালান। এতে ওসি শফিকুল ইসলাম, পরিদর্শক (তদন্ত) আবদুর রহিমসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ১৯ সদস্য আহত হন।
পুলিশের মামলার পর মেরুরচর ইউনিয়নের মেরুরচর, ফকিরপাড়া, কলকিহারা ও বাগাডুবা গ্রামের মানুষ আতঙ্কে বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়েছেন। অনেক বাড়ির দরজায় তালা ঝুলছে। মসজিদ ও মাদ্রাসা তালাবদ্ধ। চারটি গ্রামের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে কেউ কোনো রকম তথ্য দিতে বা কথা বলতেও সাহস পাচ্ছেন না।
মামলার পর বিদ্রোহী প্রার্থী মনোয়ার হোসেনও এলাকাছাড়া। কথা বলার জন্য যোগাযোগ করা হলে তাঁর মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কলকিহারা গ্রামের একজন উন্নয়নকর্মী বলেন, মামলার পর থেকে তিনি পলাতক। যাঁরা ওই ঘটনায় জড়িতও নন, তাঁরাও হয়রানির শিকার হচ্ছেন। পুলিশ ঘরবাড়িতে লোকজনকে খুঁজছে। প্রথম দিকে ঘরবাড়িতে নারী ও শিশুরা ছিল। পুলিশ তাঁদের কয়েকজনকে মারধর করেছে। ওই চার গ্রামে নিরীহ মানুষকে হয়রানি করা হচ্ছে।
কলকিহারা গ্রামের এক নারী বলেন, পুলিশ বাড়িতে বাড়িতে এসে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করছে। নারীরা ওই কেন্দ্রে গিয়ে মারামারি করেনি। তাহলে পুলিশ কেন নারীদের হয়রানি করছে?
হয়রানির অভিযোগ অস্বীকার করে ওসি শফিকুল ইসলাম বলেন, সাধারণ মানুষকে হয়রানির প্রশ্নই উঠে না। তাঁরা (গ্রামের লোকজন) ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রভাবিত করার জন্য এসব বলছে। যাঁরা এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত নন, তাঁরা বাড়িতে থাকতে পারেন। একই সঙ্গে ইমামদের জানানো হয়েছে, মসজিদে আজান দেন এবং নামাজ পড়ান। তারপরও যদি কোনো পুলিশ সদস্য এই ধরনের ঘটনা ঘটিয়ে থাকেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।
এ সম্পর্কে নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘ওই ঘটনার পর ভয়ে লোকজন গ্রাম ছেড়ে পালিয়েছেন। ওই সব গ্রামে আমি একাধিকবার গিয়েছিলাম। যাঁরা ওই ঘটনার সঙ্গে জড়িত নন, তাঁদের ঘরবাড়ি ফেরার অনুরোধ করেছি। বিষয়টি নিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে কথা বলেছি। এক-দুই দিনের মধ্যেই বিষয়টির সমাধান হয়ে যাবে বলে আশা করছি।’