নরসিংদী রেলস্টেশনে তরুণী হেনস্তার ঘটনায় গ্রেপ্তার মার্জিয়া বেগমের শাস্তি এবং মুক্তির দাবিতে পাল্টাপাল্টি মানববন্ধন করা হয়েছে। মার্জিয়ার সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে নারী অধিকারকর্মীরা এবং স্থানীয় জনগণের ব্যানারে কিছু মানুষ মানববন্ধন করেন। আজ বৃহস্পতিবার ১০টা থেকে দুপুর ১২টার মধ্যে নরসিংদী রেলস্টেশন ও প্রেসক্লাবে পাল্টাপাল্টি এই কর্মসূচি পালন করা হয়।
রেলস্টেশনে মানববন্ধন থেকে নারী অধিকারকর্মীরা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া তরুণীকে পোশাকের জন্য হেনস্তার ঘটনায় প্রতিবাদ জানাতে তাঁরা এখানে সমবেত হয়েছেন। নারীর প্রতি এমন আচরণ তাঁরা সর্বত্রই দেখেন। এটি পুরুষতান্ত্রিক মনোভাবের চরম বহিঃপ্রকাশ বলে তাঁরা মনে করেন। এ ঘটনায় গ্রেপ্তার নারীসহ যাঁরা জড়িত আছেন, তাঁদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।
মানববন্ধনে অংশ নিয়ে আমরাই পারি জোট নামের একটি সংগঠনের প্রধান নির্বাহী জিনাত আরা হক বলেন, ‘রেলওয়ে স্টেশন হোক, আর যেখানেই হোক, কারও পোশাকের জন্য কাউকে হেনস্তা করা অপরাধ। যেই নারী গ্রেপ্তার হয়েছেন, তাঁর সর্বোচ্চ শাস্তি চাই আমরা।’
রেলওয়ে স্টেশনে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে ঢাকা ও স্থানীয় বিভিন্ন নারী অধিকার সংগঠনের অন্তত ৫০ জন কর্মী উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে বেলা সাড়ে ১১টায় নরসিংদী প্রেসক্লাবের সামনে গ্রেপ্তার মার্জিয়া বেগম ও ইসমাইলের মুক্তির দাবিতে মানববন্ধন করা হয়েছে। মানববন্ধনে অংশ নিয়ে স্থানীয় আইনজীবী শিরিন সুলতানা বলেন, ‘তিন মেয়ের মা হিসেবে মার্জিয়া বেগম তাঁর মেয়ের বয়সী ওই তরুণীকে শাসন করেছিলেন মাত্র। এর জন্য তাঁকে গ্রেপ্তার হতে হবে, এটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। ওই তরুণীর সঙ্গে ঘটে যাওয়া অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার ভিডিও ফুটেজ দেখেছি আমরা। সেখানে গ্রেপ্তার হওয়া মার্জিয়ার অবস্থান আমাদের কাছে স্পষ্ট। এরপরও তাঁকে এইভাবে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নেওয়ার বিষয়টি দুঃখজনক। গ্রেপ্তার মার্জিয়া বেগমের অবিলম্বে মুক্তির দাবি করছি আমরা।’
প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধনে আইনজীবী, শিক্ষার্থী ও সামাজিক সংগঠনের কর্মীসহ বিভিন্ন পেশার অর্ধশতাধিক ব্যক্তি অংশ নেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নরসিংদী মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. হারুনুর রশিদ বলেন, মানববন্ধন করার অধিকার সবারই আছে। তাঁরা দুই পক্ষকেই নিরাপত্তা দিয়েছেন। এক পক্ষ মার্জিয়া বেগমের মুক্তি দাবি করেছে, অন্য পক্ষ মার্জিয়ার সর্বোচ্চ শাস্তি চেয়েছে।
গত মাসের ১৮ মে ভোর সোয়া পাঁচটার দিকে নরসিংদী রেলওয়ে স্টেশনের ১ নম্বর প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে থাকা তরুণীকে হেনস্তার ঘটনা ঘটে। সিসিটিভির ফুটেজ বিশ্লেষণ করে ঘটনার তিন দিন পর তরুণী হেনস্তায় জড়িত মো. ইসমাইলকে আটক করা হয়। পরে আদালতের নির্দেশে নরসিংদী রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ইমায়েদুল জাহেদী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ভৈরব থানায় মামলা করেন। মামলায় দুজনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা আরও একজন নারীসহ ৮ থেকে ১০ জন পুরুষকে আসামি করা হয়েছে। তরুণীকে গালিগালাজ, মারধর, শ্লীলতাহানি ও মুঠোফোনে ছবি তোলার অভিযোগে গত ২৯ মে রাতে মার্জিয়া বেগম ওরফে শিলা আক্তার ওরফে সায়মাকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এখন মার্জিয়াকে নিয়ে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন।