গোমতী নদীর উত্তর পাড়ের বাঁধের ১৩ কিমি সড়ক বেহাল, ভোগান্তি

গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কের কোথাও ভেঙে গেছে। কোথাও পিচ উঠে কাঁচা সড়কে রূপ নিয়েছে। বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার শালধর এলাকায়
ছবি: এম সাদেক

কুমিল্লার আদর্শ সদর উপজেলার পাঁচথুবী ও আমড়াতলি ইউনিয়নে গোমতী নদীর উত্তর পাড়ের বাঁধের ওপরের ১৩ কিলোমিটার সড়ক বেহাল হয়ে পড়েছে। গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কের কোথাও ভেঙে গেছে। কোথাও পিচ উঠে কাঁচা সড়কে রূপ নিয়েছে। কোথাও বড় ধরনের খানাখন্দে ভরা।

সড়কে বৃষ্টির পানি জমে ডোবার মতো অবস্থা তৈরি হয়েছে। নদী থেকে উত্তোলন করা বালু ও নদীর পাড়ের মাটি নিয়ে যাওয়া ট্রাকগুলো গর্তে পড়ে আটকে যায়। তখন এ সড়কে দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়। ছয় বছর ধরে এলাকার বাসিন্দারা ভোগান্তি নিয়ে এই সড়কে চলাচল করছেন।

স্থানীয় ব্যবসায়ীদের ভাষ্য, এই সড়ক দিয়ে প্রতিদিন শত শত মণ সবজি কুমিল্লা শহরে বিক্রির জন্য নেওয়া হয়। ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে এই সড়ক দিয়ে যাতায়াত করা যায়। নদীপারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে এই সড়ক দিয়ে মানুষ যাতায়াত করে থাকেন। নদী দেখতে আসা ভ্রমণপিপাসুরা এই সড়ক দিয়ে এখন আর রিকশায় ঘোরাঘুরি করতে পারছেন না।

আদর্শ সদর উপজেলার গোমতী নদীর চানপুর বেইলি সেতু পার হয়ে শালধর এলাকায় শুক্রবার বেলা ১১টায় সরেজমিনে দেখা যায়, সড়কের মধ্যে বড় গর্ত। কোথাও সড়কের পিচ উঠে গেছে। কোথাও সড়ক গেছে ভেঙে। শ্রীপুর, শালধর, পাঁচথুবী, জালুয়াপাড়া, সুবর্ণপুর, ছাওয়ালপুর, সাহাপুর ও গোলাবাড়ি এলাকা ঘুরে সড়কে হাজারের বেশি গর্ত চোখে পড়ে। পাকা সড়ক যেন কাঁচায় পরিণত হয়েছে। ছত্রখিল, বানাশুয়া রেলসেতু এলাকা ও পালপাড়া অংশে সড়কের অবস্থা খুবই নাজুক। আদর্শ সদর উপজেলা কমপ্লেক্স স্থানান্তর করে ছত্রখিল এলাকায় আনা হচ্ছে। এখানে বিভিন্ন ধরনের স্থাপনা তৈরির কাজ চলছে।

সড়কটি দিয়ে নিয়মিত যাতায়াত করেন শিমপুর গ্রামের বাসিন্দা ও কুমিল্লা জেলা ভলিবল দলের কোচ ও সাবেক অধ্যক্ষ শফিকুর রহমান। তিনি বলেন, ভোগান্তি নিয়ে প্রতিদিন এই সড়ক দিয়ে শিমপুর উচ্চবিদ্যালয় মাঠে যাচ্ছেন। ভাঙাচোরা সড়কে বালুতে একাকার। দ্রুত সড়কটি মেরামত করা দরকার। নতুনা বর্ষা মৌসুমে নদীতে পানি বেড়ে গেলে বাঁধের ও সড়কের আরও বেশ ক্ষতি হবে।

আদর্শ সদর উপজেলা প্রকৌশলী মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, গোলাবাড়ি থেকে পালপাড়া পর্যন্ত ১৩ কিলোমিটার সড়ক। সড়কটি বর্তমানে প্রস্থ ১৮ ফুট আছে। তা বাড়িয়ে ২৪ ফুট করা হবে। এ জন্য প্রায় ১০ কোটি টাকার একটি প্রাক্কলন ব্যয় ধরে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরে প্রস্তাব পাঠানো আছে। সেখান থেকে অনুমোদন ও বরাদ্দ এলে কাজ শুরু করা হবে।

মুঠোফোন ও মুঠোফোন যন্ত্রাংশ তৈরির প্রতিষ্ঠান হালিমা টেলিকমের স্বত্বাধিকারী আবুল কালাম হাসান টগর বলেন, ‘নদীর পাড়ে আমার ইলেকট্রনিক্সের কারখানা। মালামাল নিতে পারছি না সড়কের দুরবস্থার কারণে। কয়েক বছরে বহুবার উপজেলা প্রকৌশল দপ্তরকে বলেছি, সড়ক ঠিক করার জন্য। আজ পর্যন্ত সেটি সংস্কার হয়নি। শুষ্ক মৌসুমে সড়কে বালু ওড়ে আর বর্ষায় থাকে কর্দমাক্ত। প্রায়ই পণ্যবাহী ট্রাক বিকল হয়ে সড়কে পড়ে থাকে।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) কুমিল্লা জেলা শাখার সভাপতি মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, গোমতী নদীর দুই পারের সড়ক সড়কের সংস্কার নেই দীর্ঘদিন। বালুবাহী ট্রাক ও মাটির ট্রাক্টরের কারণে বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বাঁধের ওপরে পাকা রাস্তা ভাঙাচোরা। এটির সংস্কার জরুরি। অন্যথায় বাঁধের মারাত্মক ক্ষতি হবে।