গৃহবধূ ফাতেমার মৃত্যুর ঘটনায় এসআই স্বামী গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবি
চট্টগ্রামের হালিশহরের শান্তিবাগ এলাকায় নোয়াখালীর গৃহবধূ ফাতেমা আক্তারের মৃত্যুর ঘটনায় অভিযুক্ত স্বামী পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) মিজানুর রহমানকে অবিলম্বে গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবিতে মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে ফাতেমার স্বজনেরা এবং সদর উপজেলার কাদির হানিফ গ্রামের বাসিন্দারা নোয়াখালী প্রেসক্লাব ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে এসব কর্মসূচি পালন করেন।
আজ সকাল থেকে ফাতেমার আত্মীয়স্বজন, বিভিন্ন স্কুল–কলেজের শিক্ষার্থী ও কাদির হানিফ গ্রামের বাসিন্দারা ‘ফাতেমা হত্যার’ বিচারের দাবিতে ব্যানার, পোস্টারসহ বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে প্রেসক্লাবের সামনে আসেন। তাঁরা সেখানে প্রায় ৩০ মিনিট মানববন্ধন করেন। এরপর তাঁরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে জেলা প্রশাসক ও জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সামনে গিয়ে একই কর্মসূচি পালন করেন এবং শহরের প্রধান সড়কে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন।
ফাতেমা কাদির হানিফ গ্রামের টোকেনের বাড়ির আহছান উল্যাহর মেয়ে। স্বামী মিজানুর রহমান একই উপজেলার বিনোদপুর গ্রামের মৃত আবুল কাশেমের ছেলে। ২০১৪ সালে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয় তাঁদের। এক ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে তাঁরা চট্টগ্রামের হালিশহরে একটি ভাড়া বাসায় থাকতেন। ২৫ মার্চ ফাতেমার অসুস্থতার খবর পেয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তাঁর লাশ দেখতে পান বাবা আহছান উল্যাহ। তাঁর ধারণা, ফাতেমাকে তাঁর স্বামী ও স্বামীর বাড়ির লোকজন আত্মহত্যা করতে প্ররোচিত করেছেন। পরে তাঁদের বিরুদ্ধে আত্মহত্যায় প্ররোচনা ও সহযোগিতার অভিযোগ এনে হাটহাজারী থানায় মামলা করেন আহছান উল্যাহ। এতে আসামি করা হয়েছে পাঁচজনকে।
এর আগে ফাতেমার স্বজনেরা ২৭ মার্চ ফাতেমার লাশ নিয়ে নোয়াখালীতে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন। একই দিন তাঁরা কর্মসূচি শেষে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের কাছে দাবিসংবলিত স্মারকলিপি দেন।
মানববন্ধনে ফাতেমার চাচা রহমত উল্যাহ অভিযোগ করে বলেন, তাঁর ভাতিজিকে এসআই স্বামী মিজানুর রহমান পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছেন। মৃত্যুর পর সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরির সময় সাক্ষী হিসেবে মিজানুর রহমান এবং হত্যার ঘটনায় জড়িত অপর সহযোগীরা উপস্থিত ছিলেন বলে তিনি দাবি করেন। ফাতেমার মরদেহের মাথা থেকে পা পর্যন্ত পুরো শরীরে অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন থাকলেও সুরতহাল প্রতিবেদনে কিছুই উল্লেখ করা হয়নি।
ফাতেমার বাবা আহছান উল্যাহ অভিযোগ করেন, বিয়ের পর থেকে ফাতেমাকে তাঁর স্বামী প্রায়ই নির্যাতন করতেন। ফাতেমা অনেকবার বাবার বাড়িতে ফোন করে নির্যাতনের বর্ণনা দিয়েছেন। মিজানুরের সঙ্গে অন্য এক নারীর অনৈতিক সম্পর্কের বিষয়ে প্রতিবাদ করায় ফাতেমার ওপর নির্যাতনের মাত্রা বেড়ে গিয়েছিল বলে তিনি দাবি করেন।
আত্মহত্যার প্ররোচনার মামলার পর হত্যার অভিযোগ প্রসঙ্গে আহছান উল্যাহ বলেন, মিজানুর পুলিশ হওয়ায় সবকিছুই পরিকল্পিতভাবে করেছেন। মামলার এজাহারও তাঁর লোকজন তৈরি করেছেন। মামলার এজাহার তাঁকে ভালোভাবে পড়ে দেখারও সুযোগ দেওয়া হয়নি।
চট্টগ্রাম জেলার আরআরএফে সংযুক্ত রয়েছেন এসআই মিজানুর রহমান। অভিযোগের বিষয়ে জানতে আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে মিজানুর রহমানের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাঁর মুঠোফোন নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়। তাই এ বিষয়ে তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায়নি।