গিয়েছিলেন সংসার করতে, ফিরলেন লাশ হয়ে
দেড় বছর আগে আনারুল হকের সঙ্গে বিয়ে হয় হোসনা বেগমের। কিন্তু বিয়ের পর থেকেই যৌতুকের জন্য স্বামী-শাশুড়ির অত্যাচার সইতে না পেরে প্রায়ই বাবার বাড়ি হতো তাঁর ঠিকানা। সর্বশেষ গত ২৮ জুলাই বাবার বাড়ি থেকে হোসনা স্বামীর বাড়িতে যান। আশা ছিল, আগের সবকিছু ভুলে এবার অন্তত সংসারটা করতে পারবেন তিনি, কিন্তু তা আর হয়নি। তিনি ফিরেছেন অর্ধগলিত লাশ হয়ে।
রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার গোপীনাথপুর ইউনিয়নের হাসমত আলীর মেয়ে হোসনা বেগম (২৫)। প্রায় দেড় বছর আগে মিঠাপুকুর উপজেলার বালুয়ামাসিমপুর গ্রামের আকমল হোসেনের ছেলে আনারুল হকের সঙ্গে বিয়ে হয় তাঁর। বিয়ের কিছুদিন পর থেকেই স্বামী-শাশুড়ি অত্যাচার চালাতেন হোসনার ওপর। নানা সময় যৌতুকের চাপ দিয়ে হোসনাকে বাবার বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হতো। আবার অত্যাচার সইতে না পেরে কখনো কখনো হোসনা নিজেও বাবার বাড়ি চলে আসতেন।
সর্বশেষ গত ২৮ জুলাই বাবার বাড়ি থেকে হোসনা স্বামীর বাড়িতে যান। আশা ছিল, আগের সবকিছু ভুলে এবার অন্তত সংসারটা করতে পারবেন তিনি। কিন্তু এরপর থেকেই হোসনার সঙ্গে বাবার বাড়ির লোকজনের যোগাযোগ বন্ধ হয়। তাঁর মুঠোফোনটিও বন্ধ পাওয়া যায়। খোঁজ নিয়ে মেয়ে এবং তাঁর স্বামী-শাশুড়ির খোঁজ পাননি হোসনার বাবা হাসমত আলী।
এ ঘটনার দেড় মাস পর তাঁর স্বামী আনারুল হককে (৩০) গ্রেপ্তার করে পুলিশ। হোসনা নিখোঁজের পরপরই তাঁর বাবা হাসমত আলী মামলা করেছিলেন। গতকাল মঙ্গলবার আনারুলকে গ্রেপ্তারের পর তাঁর স্বীকারোক্তি অনুযায়ী দিবাগত রাত দুইটার দিকে তাঁর বাড়ির পাশের একটি জমিতে পুঁতে রাখা তাঁর (হোসনা বেগম) অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করা হয়।
রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার বালুয়া মাসিমপুর ইউনিয়নের সন্তোষপুর আকন্দপাড়া এলাকার ঘটনা এটি। গৃহবধূ হোসনা বেগম নিখোঁজের তাঁর বাবার করা মামলার পরই ঘটনাটি সামনে আসে। ২৬ আগস্ট ওই মামলা হয়। এরপর ১ সেপ্টেম্বর প্রথম আলোর ৬ নম্বর পাতায় ‘গৃহবধূ এক মাস নিখোঁজ, থানায় অভিযোগ বাবার’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
হাসমত আলী জানান, বিয়ের পর থেকে মেয়েকে প্রায়ই নির্যাতন করত শ্বশুরবাড়ির লোকজন। আর চাপ দিত যৌতুকের টাকার জন্য। কিন্তু বিয়ের সময় যৌতুক হিসেবে ৮০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছিল।
মিঠাপুকুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমিরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, মঙ্গলবার রাতে নিখোঁজ হোসনা বেগমের স্বামী আনারুলকে মিঠাপুকুরে তাঁর বাড়ির পাশের একটি এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁর স্বীকারোক্তি অনুযায়ী বাড়ির পাশের একটি জমিতে পুঁতে রাখা হোসনার গলিত লাশ উদ্ধার করা হয়। লাশের ময়নাতদন্তের জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
ওসি আরও বলেন, গুমের মামলাটি হত্যা মামলায় রূপান্তরিত হয়েছে। আনারুলের জবানবন্দি ১৬৪ ধারায় রেকর্ড করে তাঁকে কারাগারে পাঠানো হবে। মামলার অপর আসামি হোসনার পলাতক শাশুড়ি আইরিন বেগমকে এখন গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।