গাড়ি আটকে দেওয়ায় অসুস্থ খাসিয়া নারীকে বহন করা হলো কাঁধে

অসুস্থ খাসিয়া নারীকে এক কিলোমিটার পথ কাঁধে করে নিয়ে গাড়িতে তোলেন স্বজনেরা
ছবি: প্রথম আলো

হঠাৎ করে বুকে ব্যথা ওঠে খাসিয়াপুঞ্জির রানী মারলিয়া (৬০) নামের এক নারীর। স্বজনেরা তাঁকে উপজেলা সদরের সরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য একটি ব্যক্তিগত গাড়ির চালককে খবর দেন। কিন্তু পুঞ্জির পাশের চা-বাগানের ফটকে পৌঁছালে সেখানকার পাহারাদার গাড়িটি আটকে দেন। এরপর স্বজনেরা প্রতিবেশীদের সহযোগিতায় পুঞ্জি থেকে অসুস্থ ওই নারীকে কাঁধে করে ফটকের কাছে নিয়ে গিয়ে গাড়িতে তোলেন।

শুক্রবার দুপুরে মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার সদর ইউনিয়নে অবস্থিত ঝিমাই খাসিয়াপুঞ্জিতে এ ঘটনা ঘটে।

ঝিমাইপুঞ্জিতে ৭২টি খাসিয়া পরিবারের বসবাস। পান চাষ করে তাদের জীবিকা চলে। পুঞ্জির লোকজন বলেন, কুলাউড়ার গাজীপুর-সাগরনাল পাকা সড়ক থেকে ঝিমাইপুঞ্জি ও ঝিমাই চা-বাগানে যাতায়াতের রাস্তা একটিই। রাস্তাটি কাঁচা ও উঁচু-নিচু টিলা বেয়ে গেছে। ওই রাস্তার ব্যবহার নিয়ে চা-বাগান কর্তৃপক্ষের সঙ্গে পুঞ্জির লোকজনের দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছে। চা-বাগানের লোকজন গাড়ি নিয়ে ফটক দিয়ে ঢুকতে পারেন। কিন্তু পুঞ্জির লোকজন গাড়ি নিয়ে ঢুকতে চাইলে ফটকেই আটকে দেওয়া হয়। এক কিলোমিটার রাস্তা তাঁদের যেতে হয় হেঁটে।

পুঞ্জির লোকজন আরও বলেন, শুক্রবার বেলা দুইটার দিকে পুঞ্জির বাসিন্দা রানী মারলিয়া অসুস্থ হয়ে পড়েন। ফটক দিয়ে গাড়ি ঢুকতে না দেওয়ায় স্বজনেরা প্রথমে একটি ছোট খাটের ওপর তাঁকে শুইয়ে দড়ি দিয়ে এটি শক্ত করে বাঁধেন। এরপর বাঁশের সহায়তায় খাটটি কাঁধে বহন করে চা-বাগানের ফটক পর্যন্ত নিয়ে যান। রানী মারলিয়া কুলাউড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন।

পুঞ্জিপ্রধান রানা সুরং সন্ধ্যায় মুঠোফোনে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ঝিমাই বাগানের কর্মকর্তারা তাঁদের সঙ্গে অমানবিক আচরণ করে যাচ্ছেন। বর্ষায় কাঁচা রাস্তা কর্দমাক্ত হয়ে পড়ে। তখন চলাচলে আরও দুর্ভোগ পোহাতে হয়। রানা আরও বলেন, দুর্ভোগ লাঘবে তাঁরা উচ্চ আদালতের শরণাপন্ন হয়েছিলেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে আদালত সম্প্রতি বিষয়টি সমাধানের জন্য মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দেন।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও ঝিমাই বাগানের ব্যবস্থাপক মনির হোসেনের মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া গেছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এ টি এম ফরহাদ চৌধুরী সন্ধ্যায় মুঠোফোনে বলেন, তিনি সরকারি কাজে জেলা সদরে রয়েছেন। এ বিষয়ে তাঁকে কেউ কিছু জানাননি। খোঁজ নিয়ে দেখবেন। বিষয়টি সমাধানের জন্য দ্রুত বাগান কর্তৃপক্ষ ও পুঞ্জির লোকজনকে নিয়ে বসবেন বলেও জানিয়েছেন ইউএনও।