গাংনীতে নির্বাচনী সহিংসতার পর গ্রাম ছাড়ছেন পুরুষেরা
মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার কাথুলী ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে সদস্যপ্রার্থীর সমর্থকদের হামলায় প্রতিপক্ষের ২ সহোদর নিহত এবং ১০ জন আহত হওয়ার পর ধরপাকড়ের ভয়ে গ্রামের পুরুষেরা অন্যত্র চলে যাচ্ছেন। আজ সোমবার সকালে লক্ষ্মীনারায়ণপুর ধলা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
নিহত দুজন হলেন ওই গ্রামের সুলতান মিয়ার ছেলে জাহারুল ইসলাম (৫৫) ও তাঁর ভাই সাহাদুল ইসলাম (৫০)। আহত ব্যক্তিদের গাংনী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাতজনকে আটক করেছে পুলিশ।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কাথুলী ইউপির ৭ নম্বর ওয়ার্ডে সদস্য পদপ্রার্থী আতিয়ার রহমান ও বর্তমান ইউপি সদস্য আজমাইন হোসেন। দুজনই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। নির্বাচনী প্রচারণা নিয়ে গত রোববার দুজনের মধ্যে বাগ্বিতণ্ডা হয়। এর জেরে আজ সকাল আটটায় আতিয়ার ও তাঁর সমর্থকেরা ধারালো অস্ত্র ও লাঠিসোঁটা নিয়ে আজমাইন হোসেনের সমর্থকদের ওপর হামলা করেন। এতে আজমাইনের ফুফাতো দুই ভাই ঘটনাস্থলে মারা যান। আহত হন আরও ১০ জন। তাঁদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। গুরুতর আহত জাহারুলের স্ত্রী সেফালি খাতুনকে গাংনী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
আজমাইন হোসেন বলেন, গ্রামের মধ্যে ভোট চাইতে গেলে আতিয়ার রহমানের নেতৃত্বে তাঁর সহযোগীরা ধারালো অস্ত্র নিয়ে হামলা করে। তিনি প্রাণ বাঁচাতে পাশের একটি বাড়িতে আশ্রয় নেন। পরে পুলিশ সদস্যরা তাঁকে উদ্ধার করে গাংনী হাসপাতালে ভর্তি করেন।
আজমাইন হোসেন আরও বলেন, ‘কয়েক বছর আগে আমার ছোট ভাই এনামুল হোসেনকে কুপিয়ে হত্যা করেছিলেন আতিয়ার রহমান ও তাঁর সহযোগীরা। সেই মামলা আদালতে বিচারাধীন।’
ঘটনার পর আতিয়ার রহমান গ্রাম ছেড়ে চলে যান। বেলা তিনটায় তাঁর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় ঘরে তালা দেওয়া। যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাঁর মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
গ্রামের বাসিন্দা মোফাজ্জেল হোসেন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আতিয়ার ও আজমাইন পক্ষের মধ্যে বিরোধ চলে আসছে। এর আগেও দুই পক্ষের মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটেছে।
মরিয়ম নেছা নামের এক নারী বলেন, হত্যাকাণ্ডের ঘটনার পরে পুলিশি ধরপাকড়ের ভয়ে গ্রামের পুরুষেরা গ্রাম ছেড়ে অন্য গ্রামে আশ্রয় নিয়েছেন। যাঁরা সহিংসতায় জড়িত, তাঁরা আগেই এলাকা ছেড়ে পালিয়েছেন।
দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন জেলা পুলিশ সুপার রাফিউল আলম। এ সময় তিনি এলাকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েনের নির্দেশ দেন। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত ব্যক্তিকে আটক করেছে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) ।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জামিরুল ইসলাম বলেন, নির্বাচনী সহিংসতায় নিহত দুই ব্যক্তির লাশ ময়নাতদন্তের জন্য মেহেরপুর সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। পুলিশ অপরাধীদের আটকের জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করছে।