হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জে বন্যা
গবাদিপশুর সঙ্গে বসবাস
বানভাসি মানুষের জন্য উপজেলায় ৭৬টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হলেও সব কটিতে তিল ধারণের ঠাঁই নেই।
হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জ উপজেলার চারপাশ প্লাবিত। উপজেলার এমন কোনো গ্রাম নেই, বন্যায় প্লাবিত হয়নি। প্রতিদিন কুশিয়ারা নদীর পানি বেড়ে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। বিপুলসংখ্যক মানুষকে আশ্রয় দিতে গিয়ে পুরোদমে হিমশিম খাচ্ছে প্রশাসন।
এদিকে বানভাসি মানুষের জন্য উপজেলায় ৭৬টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হলেও সব কটিতে তিল ধারণের ঠাঁই নেই। কোথাও কোথাও গবাদিপশু আর মানুষকে একই সঙ্গে বসবাস করতে হচ্ছে। আবার আশ্রয়কেন্দ্রগুলোর অধিকাংশই দেখা গেছে বন্যার পানিতে নিমজ্জিত। এভাবেই কষ্টেক্লিষ্টে তিন দিন ধরে বসবাস করছেন হাজারো মানুষ। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে এখনো সরকারের খাদ্যসহায়তা পৌঁছেনি।
আজমিরীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুলতানা সালেহা সুমী প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিদিন পানি বাড়ছে। সঙ্গে বানভাসি মানুষের সংখ্যাও পাল্লা দিয়ে বেড়েই চলেছে।
৭৬টি আশ্রয়কেন্দ্র ছাড়াও উপজেলা কমপ্লেক্সের ভেতরেও অনেক পরিবারকে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। সব আশ্রয়কেন্দ্রে সরকারি ত্রাণ পৌঁছানো সম্ভব না হলেও শুধু পৌর এলাকায় অবস্থিত কেন্দ্রগুলোতে সরকারের খাদ্যসহায়তা গতকাল মঙ্গলবার পৌঁছানো হয়েছে। পর্যায়ক্রমে বাকি কেন্দ্রগুলোতেও পৌঁছে দেওয়া হবে।
উপজেলার উত্তর-পূর্ব দিক দিয়ে বয়ে গেছে কুশিয়ারা নদী। সিলেটের বন্যার পানি নেমে আসায় আজমিরীগঞ্জে বন্যার পানি বেড়েছে। গত শনিবার থেকে এই নদীর পানি উপজেলাকে প্লাবিত করে। তিন দিন ধরে দুই-তিন সেন্টিমিটার করে পানি বাড়ছে। গতকাল মঙ্গলবার পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, কুশিয়ারা নদীর পানি বিপৎসীমার ১৪৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পাঁচটি ইউনিয়নের মধ্যে তিনটির সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন আজমিরীগঞ্জ উপজেলা সদরের।
উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মর্তুজা হাসান বলেন, বানভাসি মানুষের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। সেই অনুপাতে আশ্রয়কেন্দ্রের সংখ্যা কম। আশ্রয়কেন্দ্র বাড়ানো এবং অসহায় মানুষের মধ্যে খাদ্যসহায়তা পৌঁছানো এখন জরুরি হয়ে পড়েছে।
গতকাল সরেজমিনে দেখা যায়, শিবপাশা এলাকায় আধা কিলোমিটার রাস্তা প্রায় এক ফুট পানির নিচে চলে গেছে। জলসুখা হয়ে আজমিরীগঞ্জ যাওয়ার রাস্তাও অনেকটা ডুবু ডুবু। দূর থেকে গ্রামগুলোকে দেখে মনে হয় একেকটা দ্বীপ। হবিগঞ্জ জেলা সদর থেকে আজমিরীগঞ্জ উপজেলা সদরে যাওয়ার সড়কের দুই পাশে পানি আর পানি। সড়কের দুই পাশে দেখা গেছে অসংখ্য পরিবার ধানের খড় দিয়ে এক চালাঘর তৈরি করে তাতে আশ্রয় নিয়েছে।
অনেক পরিবারকে দেখা গেছে রাস্তায় রান্নার কাজ সেরে নিচ্ছে। এ সময় কথা হয় আজমিরীগঞ্জের বিরাট গ্রামের সখিনা বেগমের সঙ্গে। তিনি বলেন, ঘর প্লাবিত হওয়ায় আশ্রয় নিয়েছেন পাটশিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রে। সেখানেও দুই দিন ধরে পানি। ফলে রান্না করার স্থান খুঁজে না পেয়ে রাস্তায় তিনি রান্নার কাজ সেরে নিচ্ছেন।
জলসুখা সড়কের পাশে দক্ষিণ পাটপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও পাটপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্র ২ থেকে ৩ ফুট পানিতে তলিয়ে আছে। প্রায় ২০০ বানভাসি মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে এখানে আশ্রয় নিতে এসে তাঁরাও পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। সেখানে আশ্রয় নেওয়া খালেদা আকতার বলেন, হঠাৎ পানি বাড়ায় তাঁর ঘরে পানি ওঠে। তাই সেখানে ঠাঁই নিয়েছেন।
উপজেলা সদরে বসবাস করেন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মানিক সরকার (৬৫)। তিনি বলেন, আজমিরীগঞ্জ উপজেলা একটি ভাটি অঞ্চল। অন্যান্য বছর কুশিয়ারার পানি বৃদ্ধি পেলেও হাওর ডোবে। কিন্তু এবার মানুষের বাড়িঘর রক্ষা পাচ্ছে না।