গন্ধেই যে শহর চেনা যায়
টাঙ্গাইল পৌরসভার ময়লা–আবর্জনা ফেলার কোনো ভাগাড় নেই। শহরের দুই প্রান্ত দিয়ে প্রবেশের দুটি রাস্তার পাশে ফেলা হয় আবর্জনা। ফলে দুর্গন্ধে নাক চেপে শহরে ঢুকতে হয়। দিনের পর দিন রাস্তার পাশে আবর্জনা ফেলায় দুর্ভোগ পোহাচ্ছে এলাকার এবং ওই পথে চলাচলকারী মানুষ। কিন্তু আধুনিক আবর্জনা ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার উদ্যোগ নেই পৌর কর্তৃপক্ষের।
পৌরসভা সূত্র জানায়, ব্রিটিশ আমলে ১৮৮৭ সালের ১ জুলাই টাঙ্গাইল পৌরসভা প্রতিষ্ঠিত হয়। ২৯ দশমিক ৪৩ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এ পৌরসভায় প্রায় ২ লাখ লোকের বসবাস। ১৩২ বছরের পুরোনো এই পৌরসভায় আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা তো দূরের কথা, আবর্জনা ফেলার নির্দিষ্ট ভাগাড় নির্মাণ হয়নি এখনো। শহরের সব আবর্জনা বিভিন্ন সময়ে ফেলা হচ্ছে বিভিন্ন সড়কের পাশে। বিগত পাঁচ বছরেরও বেশি সময় ধরে শহরের আবর্জনা ফেলা হচ্ছে উত্তর দিক দিয়ে শহরের প্রবেশমুখে রাবনা এলাকার টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ সড়কের পাশে। আর দক্ষিণ অংশের ময়লা ফেলা হচ্ছে শহরের আরেক প্রবেশমুখ কাগমারী বেবিস্ট্যান্ড এলাকায়। দিনের পর দিন ময়লা–আবর্জনা ফেলায় ওই এলাকায় বসবাসকারী মানুষ ও পথচারীদের দুর্গন্ধের মধ্যে চলতে হচ্ছে।
রাবনা এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বৈল্লা সেতুর পর থেকে কোয়ার্টার কিলোমিটার এলাকাজুড়ে রাস্তার পাশে ময়লা–আবর্জনা ফেলা হচ্ছে। দুর্গন্ধে এলাকায় দাঁড়ানো যায় না। মানুষ হেঁটে বা যানবাহনে ওই এলাকা অতিক্রম করার সময় নাক ধরে পার হচ্ছে। কালিহাতী থেকে নিয়মিত টাঙ্গাইল আসা আবদুর রাজ্জাক বলেন, বাসের ঘুমন্ত যাত্রীরাও দুর্গন্ধের কারণে জেগে ওঠে। গন্ধ পেয়েই যাত্রীরা বুঝতে পারে বাস টাঙ্গাইল পৌর এলাকায় প্রবেশ করছে। রাবনা এলাকার হাফিজুর রহমান জানান, প্রায়ই আবর্জনায় আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। তখন ধোঁয়া ও গন্ধে আশপাশের ঘরবাড়ি ও দোকানিদের থাকতে কষ্ট হয়।
একই চিত্র দেখা যায়, বেবিস্ট্যান্ড এলাকায় গিয়ে। সেখানে আবর্জনার ভাগাড় অতিক্রম করে দক্ষিণাংশের মানুষের মূল শহরে ঢুকতে হয়। তা ছাড়া মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, এম এম আলী সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীদের এই আবর্জনার ভাগাড় পেরিয়েই যাতায়াত করতে হয়। মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শাহরিয়ার হাসান বলেন, আবর্জনা এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আসার পথের নৃত্যসঙ্গী। দুর্গন্ধে অনেক সময় দম বন্ধ হয়ে আসে। সন্তোষ এলাকার তাপস ঘোষ জানান, ছোট ছেলেমেয়েদের এ আবর্জনার সামনে দিয়ে স্কুলে নিয়ে যেতে হয়। ভীষণ কষ্ট হয় শিশুদের।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) টাঙ্গাইল অঞ্চলের গবেষণা কর্মকর্তা সোমনাথ লাহিড়ী জানান, এভাবে রাস্তার পাশে ময়লা–আবর্জনা ফেলা পরিবেশ সংরক্ষণ আইনবিরোধী কাজ। পৌরসভার অন্যতম কাজ হচ্ছে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে পরিচ্ছন্ন শহর গড়ে তোলা। কিন্তু এভাবে আবর্জনা ফেলে পৌরসভা পরিবেশ আইন ও জনস্বাস্থ্যবিরোধী কাজ করছে।