লেখক মুশতাক নিয়ে পোস্ট, গ্রেপ্তার ১
খুলনায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে শ্রমিক-কৃষক-ছাত্র-জনতা ঐক্য পরিষদের সমন্বয়ক রুহুল আমিনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর আগে শুক্রবার রাতে তাঁকে ভাড়া বাসা থেকে তুলে নিয়ে যায় সাদাপোশাকের পুলিশ।
গতকাল শুক্রবার দুপুরের দিকে কারাগারে মারা যাওয়া লেখক মুশতাক আহমেদকে নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট করেছিলেন রুহুল আমিন। তিনি মুশতাক আহমেদের সঙ্গে গ্রেপ্তার কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোরের খুলনার বাসায় ভাড়া থাকতেন। সেই বাসা থেকেই তাঁকে আটক করে খুলনা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ।
একই সঙ্গে আটক করা হয় শ্রমিক-কৃষক-ছাত্র-জনতা ঐক্য পরিষদের সংগঠক নিয়াজ মুর্শিদকে। তবে রাত সাড়ে ১২টার দিকে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়। আজ শনিবার সকালের দিকে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, রাত ১০টার দিকে ডিবি ও কেএমপির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের একটি দল যৌথভাবে ওই বাসায় অভিযান চালায়। ওই সময় রুহুল আমিনসহ তাঁরা কয়েকজন শ্রমিক রাজনীতি প্রসঙ্গে একটি অনলাইন লাইভ প্রোগ্রামে ছিলেন। সেখান থেকে তাঁদের তুলে নিয়ে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর রাত সাড়ে ১২টার দিকে নিয়াজ মুর্শিদকে ছেড়ে দেওয়া হয়। তবে রুহুল আমিনকে জিজ্ঞাসাবাদের কথা বলে আটক রাখা হয়। ওই সময়ই তাঁরা জানতে পেরেছিলেন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দিয়ে রুহুল আমিনকে গ্রেপ্তার দেখানো হতে পারে।
জানতে চাইলে কেএমপির ডিবি পুলিশের উপকমিশনার বি এম নুরুজ্জামান মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতা নষ্ট, সামাজিক অস্থিরতা তৈরিসহ অন্যান্য কারণে রাতেই রুহুল আমিনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়েছে। ডিবির এক পরিদর্শক ওই মামলার বাদী হয়েছেন। তাঁকে আদালতের কাছে সোপর্দ করে রিমান্ডের আবেদন করার প্রক্রিয়া চলছে।
এদিকে রুহুল আমিনকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করেছে শ্রমিক-কৃষক-ছাত্র-জনতা ঐক্য পরিষদ। আজ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে থেকে ওই মিছিল শুরু হয়। সেখানে সমাবেশ শেষে মিছিলটি নগরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে শহীদ হাদিস পার্কের সামনে গিয়ে শেষ হয়।
বক্তারা রুহুল আমিনের মুক্তি ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবি করেন। তাঁরা বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মাধ্যমে মানুষের বাক্স্বাধীনতা হরণ করা হয়েছে। কিছু বলতে গেলেই সরকার ও পুলিশের নির্যাতনের শিকার হতে হচ্ছে। সরকারের সমালোচনা করায় ওই আইনে লেখক মুশতাক আহমেদ ও কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। দীর্ঘ ১০ মাসের মতো কারাগারে থাকার পর কারাগারেই মারা গেছেন মুশতাক আহমেদ। কিশোরের অবস্থাও ভালো নয়। আবার এটা নিয়ে কথা বলতে গিয়ে নতুন করে একই আইনে মামলার শিকার হয়েছেন রুহুল আমিন। তাঁরা অবিলম্বে রুহুল আমিনের মুক্তি ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবি জানান।
অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন খুলনার পাটকল শ্রমিকনেতা আলমগীর কবির, চলচ্চিত্রকর্মী মিহির কান্তি মণ্ডল, মাতঙ্গী নাট্যদলের সদস্য জয়ন্তী, ছাত্র-যুব আন্দোলনের খুলনা মহানগরের সহ–আহ্বায়ক মেহেরুন নাহার প্রমুখ।