খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের বেতন-ফিস কমানো, আবাসনসংকট নিরসনসহ পাঁচ দফা দাবি আদায়ে শত শত শিক্ষার্থী অংশ নেন। এর মধ্যে মাত্র দুজন ছাত্রকে বহিষ্কার করা উদ্দেশ্যমূলক দাবি করে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছেন ওই দুই শিক্ষার্থী। আজ শনিবার খুলনা প্রেসক্লাবে এই সংবাদ সম্মেলন হয়।
বহিষ্কার হওয়া বাংলা ডিসিপ্লিনের (বিভাগ) শিক্ষার্থী মোহাম্মদ মোবারক হোসেন এবং ইতিহাস ও সভ্যতা ডিসিপ্লিনের শিক্ষার্থী ইমামুল হোসেনের পাশাপাশি সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন আন্দোলনে অংশ নেওয়া বিভিন্ন ডিসিপ্লিনের ২৫ জন শিক্ষার্থী।
বহিষ্কৃত দুই শিক্ষার্থী বলেন, শিক্ষার্থী হিসেবে একটি ন্যায্য দাবির আন্দোলনে যুক্ত থাকার কারণে এভাবে তাঁদের শিক্ষাজীবনকে নষ্ট করার সিদ্ধান্ত তাঁরা মেনে নিতে পারছেন না। তাঁরা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের দাবি জানান। ছাত্র অধিকার আন্দোলনে যুক্ত থাকার কারণে কোনো ছাত্রকে বহিষ্কার পুরো ছাত্রসমাজকে অপমানিত করবে বলে তাঁরা উল্লেখ করেন।
আন্দোলনে যুক্ত শিক্ষার্থীরা বলেন, ছাত্রদের পাঁচ দফা দাবি আদায়ের আন্দোলন থেকে সরে আসার জন্য ভীতি প্রদর্শনের অস্ত্র হিসেবে এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
আন্দোলনে যুক্ত অন্য শিক্ষার্থীরা বলেন, শিক্ষকদের অভিযোগের ভিত্তিতে যে শাস্তি দেওয়া হয়েছে তা ভিত্তিহীন ও প্রহসনমূলক। উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবেই দুজনকে শাস্তি দেওয়া হয়েছে। ছাত্রদের পাঁচ দফা দাবি আদায়ের আন্দোলন থেকে সরে আসার জন্য ভীতি প্রদর্শনের অস্ত্র হিসেবে এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এভাবে একটা যৌক্তিক আন্দোলন দাবিয়ে রাখা যায় না।
গত ৩১ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা বোর্ডের এক সভায় সাত শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তি দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে সম্প্রতি ওই সিদ্ধান্তের বিষয়টি জানাজানি হয়েছে। শৃঙ্খলা বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী র্যাগিং, শিক্ষকদের সঙ্গে অসদাচরণ ও তদন্ত কমিটিকে সহযোগিতা না করার অপরাধে ওই শিক্ষার্থীদের সাজা দেওয়া হয়েছে। সাত শিক্ষার্থীর মধ্যে পাঁচজন জুনিয়র শিক্ষার্থীদের রাতভর হলে আটকে রেখে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করার অপরাধে এবং দুজনকে আন্দোলনের সময় শিক্ষকের সঙ্গে অসদাচরণ ও তদন্ত কমিটিকে সহযোগিতা না করার অভিযোগ করা হয়েছে। আন্দোলনে অংশ নেওয়া মোহাম্মদ মোবারক হোসেনকে এক বছরের জন্য ও ইমামুল ইসলামকে দুই বছরের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
চিঠি যাওয়ার ১০ দিনের মধ্যে শিক্ষার্থীরা চাইলে একাডেমিক কাউন্সিলে সাজা মওকুফের জন্য আবেদন করতে পারবেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন মোবারক হোসেন। তিনি বলেন, গত বছরের ১ ও ২ জানুয়ারি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক আন্দোলনের সঙ্গে একজন সাধারণ শিক্ষার্থী হিসেবে তাঁরাও স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করেন। খুলনাবাসীর প্রবল আন্দোলনের ফসল খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়কে শিক্ষার্থীবান্ধব করার উদ্দেশ্য নিয়েই তাঁরা জীবন বাজি রেখে টানা ৩৬ ঘণ্টা অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছিলেন।
শিক্ষকদের অসদাচরণ করার প্রসঙ্গে শিক্ষার্থীরা বলেন, আন্দোলনের সময় সব সিদ্ধান্ত সম্মিলিতভাবেই নেওয়া হয়। সেখানে ব্যক্তিগতভাবে কোনো শিক্ষকের সঙ্গে অসদাচরণ করা বা যাতায়াতে বাধা প্রদান করার কোনো প্রশ্নই আসে না। আন্দোলনের সময় শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের হাদী চত্বরে অবস্থান করছিলেন। ঠিক ওই সময় দুজন শিক্ষক গাড়ি চালিয়ে তাঁদের আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। এতে শিক্ষার্থীরা সবাই বিস্মিত হন ও সম্মিলিতভাবেই ওই শিক্ষকদের বিকল্প রাস্তা দিয়ে যেতে অনুরোধ করেন।
এর দেড় মাস পর, অর্থাৎ ১৬ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্ত কমিটি থেকে ছাত্রবিষয়ক পরিচালকের দপ্তরে বক্তব্য প্রদানের জন্য উপস্থিত থাকতে বলা হয়। সে অনুযায়ী দুই দিন পর ছাত্রবিষয়ক পরিচালকের দপ্তরে গিয়ে তাঁদের বিরুদ্ধে পূর্ণাঙ্গ অভিযোগের অনুলিপি চেয়ে লিখিত আবেদন করেন। তাঁরা অভিযোগ করেন, ওই আবেদনের পর দীর্ঘদিন চলে গেলেও তাঁরা অভিযোগের বিবরণী ও সংশ্লিষ্ট কোনো পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি পাননি। সম্প্রতি জানতে পেরেছেন তাঁদের বহিষ্কার করা হয়েছে। ওই খবর জেনে তাঁরা যারপরনাই বিস্মিত হয়েছেন। দুজন শিক্ষকের সঙ্গে অসদাচরণ হিসেবে তাঁদের নামে যে অভিযোগ করা হয়েছে তা সম্পূর্ণরূপে অমূলক। ওই আন্দোলনে তাঁরা দুজন কর্মী ছিলেন মাত্র।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রবিষয়ক পরিচালন ও শৃঙ্খলা বোর্ডের সদস্যসচিব অধ্যাপক মো. শরীফ হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ওই শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে আসলে কোনো অভিযোগ ছিল না। তদন্ত কমিটি তাঁদের ডেকেছিল অভিযোগের ব্যাপারে তথ্য অনুসন্ধানের জন্য। কিন্তু তাঁরা তদন্ত কমিটিকে কোনো তথ্য না দিয়ে অসহযোগিতা করেন এবং অনুমতি ছাড়া বক্তব্য রেকর্ড করার চেষ্টা করেন। যেহেতু তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল না এ কারণে তাঁদের অভিযোগের নথি দেওয়া হয়নি।
মো. শরীফ হাসান বলেন, চিঠি যাওয়ার ১০ দিনের মধ্যে শিক্ষার্থীরা চাইলে একাডেমিক কাউন্সিলে সাজা মওকুফের জন্য আবেদন করতে পারবেন।