বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র
কয়লার সংকটে বিপর্যয়
আড়াই মাস আগে কেন্দ্রে উৎপাদিত হতো ৫২৫ মেগাওয়াট। বর্তমানে ৭৬ থেকে ৮০ মেগাওয়াট উৎপাদিত হচ্ছে। দেখা দিচ্ছে লোডশেডিং।
চাহিদার তুলনায় বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের উৎপাদন সক্ষমতা কম থাকায় রংপুরে নিয়মিত লোডশেডিং দেখা দিচ্ছে। জেলায় প্রতিদিনই লোডশেডিং দেখা দেওয়ায় ভোগান্তিতে পড়ছেন গ্রাহকেরা। গত চার বছরে জেলায় যে পরিমাণে গ্রাহকসংখ্যা বেড়েছে, বিদ্যুতের উৎপাদন ও সরবরাহ সে তুলনায় বাড়েনি।
জেলায় বর্তমানে প্রতিদিন বিদ্যুতের চাহিদা ১৫০ থেকে ১৫৫ মেগাওয়াট। বিপরীতে সরবরাহ করা হচ্ছে ১০০ থেকে ১০৫ মেগাওয়াট। এ কারণে এলাকাভেদে বিভিন্ন সময় দুই থেকে তিন ঘণ্টার লোডশেডিং হচ্ছে।
পল্লী বিদ্যুতের পাশাপাশি জেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করে নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি (নেসকো)। বর্তমানে রংপুর জেলায় নেসকো ও পল্লী বিদ্যুতের মোট গ্রাহক ১০ লাখ ৮ হাজার ৩০০। চার বছর আগে বিদ্যুতের চাহিদা ছিল প্রায় ৭০ মেগাওয়াট। অথচ এই চার বছরে গ্রাহক বেড়েছে প্রায় ৪ লাখ ৩৩ হাজার। সে তুলনায় উৎপাদন বেড়েছে প্রায় ৩০ মেগাওয়াট। প্রতিবছরই গ্রাহকসংখ্যা বাড়ছে।
বড়পুকুরিয়া কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রধান প্রকৌশলী ওয়াজেদ আলী বলেন, এখানে প্রতিদিন ৫২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হতো। গত জুলাই মাসের ২০ তারিখ থেকে কয়লা উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। বর্তমানে যে পরিমাণ কয়লা মজুত আছে, তা দিয়ে কোনোরকমে ৭৬ থেকে ৮০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হচ্ছে। বাকিটা সরবরাহ করা হচ্ছে জাতীয় গ্রিড থেকে। এই অবস্থায় পুরোদমে উৎপাদনে গেলে মজুত করা কয়লা শেষ হয়ে যাবে। তখন বিদ্যুৎ উৎপাদন করাই সম্ভব হবে না বলেও জানান ওয়াজেদ আলী।
এদিকে রংপুর শহরের বিভিন্ন এলাকায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদ্যুৎ না থাকায় গ্রাহকেরা অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন কেউ কেউ।
ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে বেশি দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে কারখানা ও গুদাম কর্তৃপক্ষকে। লোডশেডিংয়ের সময় এসব প্রতিষ্ঠান উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন নিজস্ব জেনারেটর দিয়ে বিদ্যুতের চাহিদা মেটায়। কিন্তু এতে পণ্যের উৎপাদন খরচ বেড়ে যায়।
রংপুরের নর্থ বেঙ্গল জুট মিলের স্বত্বাধিকারী আবুল কাশেম বলেন, বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক না থাকায় ডিজেল ব্যবহার করে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন জেনারেটর চালাতে হয়। এতে তাদের বাড়তি খরচ হয়। আর রংপুর চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি মোস্তফা সোহরাব চৌধুরী বলেন, তাঁদের কয়েকটি হিমাগার আছে। এগুলোতে যে মাত্রার বিদ্যুৎ প্রয়োজন, জেনারেটর দিয়ে তা পাওয়া যায় না। এতে হিমাগারের তাপমাত্রাও নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হয় না।
লোডশেডিংয়ের কারণে ক্ষতির মুখে পড়ছেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরাও। নগরের কাচারি বাজারের আদালত এলাকায় কম্পিউটার কম্পোজের কাজ করেন রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, কম্পিউটারের সাহায্যে বিভিন্ন কাজ হয়, এলাকায় এমন দুই শতাধিক দোকান আছে। আদালত এলাকা হওয়ায় ব্যস্ততাও বেশি থাকে। কিন্তু ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে কাজ করা যায় না।
রংপুরে নেসকোর আঞ্চলিক কার্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী শাহাদত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, এই অঞ্চলের বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র বড়পুকুরিয়া কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রে কয়লার স্বল্পতা তৈরি হয়েছে। ফলে চাহিদার তুলনায় উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে না। সংকট পূরণে রংপুর অঞ্চলে নতুন বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র গড়ে তোলা প্রয়োজন।