৫০ লাখ টাকার চাঁদা না পেয়ে দুই ভাইসহ এক পরিবারের তিনজনকে ক্রসফায়ারে হত্যার অভিযোগে টেকনাফ থানার বরখাস্ত হওয়া ওসি প্রদীপ কুমার দাশসহ ৪১ জনের বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা হয়েছে। আজ সোমবার কক্সবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের রঙ্গিখালী গ্রামের গৃহবধূ সুলতানা রাবিয়া মামলাটি করেন।
গত ৬ মে ভোররাতে বাড়ির পাশের একটি পাহাড়ের নিচে ধানখেতে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন সুলতানা রাবিয়ার স্বামী সৈয়দ আলম, স্বামীর ভাই নুরুল আলম ও ভাগনে সৈয়দ হোছন প্রকাশ আবদুল মোনাফকে।
পুলিশ তখন দাবি করেছিলেন, নিহত তিনজন চিহ্নিত ইয়াবা ব্যবসায়ী ও ডাকাত দলের সক্রিয় সদস্য। তাঁদের প্রত্যেকের নামে হত্যা, অস্ত্র, মাদক মামলাসহ সাত থেকে আটটি করে মামলা রয়েছে।
বাদীপক্ষের আইনজীবী মো. কাশেম আলী বলেন, সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. হেলাল উদ্দিন মামলাটি আমলে নেন এবং ওই সময়ে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় থানার দায়ের করা মামলার কাগজপত্র, নিহত ব্যক্তিদের ময়নাতদন্ত রিপোর্ট আগামী ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে আদালতে দাখিল করতে টেকনাফ থানার ওসিকে নির্দেশ দিয়েছেন।
এর আগে কক্সবাজারের বিভিন্ন আদালতে ওসি প্রদীপ কুমার দাশসহ অন্যান্য পুলিশের বিরুদ্ধে চাঁদার টাকা না পেয়ে ক্রসফায়ারে হত্যার অভিযোগে আরও চারটি পৃথক মামলা হয়েছে।
মামলার এজাহারে বলা হয়, গত ৬ মে রাত দুইটায় ওসি প্রদীপের নেতৃত্বে অভিযুক্ত ব্যক্তিরা রঙ্গিখালী এলাকার সুলতানা রাবিয়ার বাড়িতে ঢুকে তাঁর স্বামী সৈয়দ আলম, স্বামীর ভাই নুরুল আলম ও ভাগনে সৈয়দ হোছন প্রকাশ আবদুল মোনাফকে আটক করে থানায় নিয়ে যান। এ সময় ঘরের আসবাব ভাঙচুর-লুট এবং পরিবারের অন্য সদস্যদের ঘরছাড়া করা হয়। এরপর তিনজনকে ছেড়ে দেওয়ার বিপরীতে ওসি প্রদীপ ও এসআই মশিউর রহমান ৫০ লাখ টাকার চাঁদা দাবি করেন। চাঁদার টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে ওই দিন ভোররাত পৌনে পাঁচটার দিকে তিনজনকে (সৈয়দ আলম, নুরুল আলম ও সৈয়দ হোছন) বাড়ির পশ্চিম দিকে পাহাড়ের নিচে ধানখেতে নিয়ে বন্দুকযুদ্ধের নাটক সাজিয়ে গুলি করে হত্যা করা হয়। এজাহারে আরও বলা হয়, হত্যাকাণ্ডের পর ওসি প্রদীপ ও এসআই লিয়াকত মামলার বাদী সুলতানা রাবিয়া মুন্নিসহ পরিবারের অন্য সদস্যদের হুমকি দেন যে ঘটনার বিষয়ে কাউকে বললে কিংবা আইনের আশ্রয় নিলে পরিবারের অন্যান্য সদস্যেরও একই পরিণতি ভোগ করতে হবে।
ওসি প্রদীপ কুমার দাশ বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলায় চতুর্থ দফায় রিমান্ডে রয়েছেন। এর আগে তিন দফায় টানা ১৪ দিন তাঁকে (প্রদীপকে) রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে মামলার তদন্তকারীরা।
মামলার অন্য আসামি যারা
হোয়াইক্যং পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই মশিউর রহমান, রাসেল আহমেদ, নাজিম উদ্দিন, কামরুজ্জামান, জামশেদ আলম, সুজিত চন্দ্র দে, অরুণ কুমার চাকমা, মো. নাজিম উদ্দিন ভুঁইয়া, এএসআই কাজী সাইফুদ্দিন, ফখরুজ্জামান, মো. জামাল উল্লাহ, মো. মাযহারুল ইসলাম, মাঈন উদ্দিন, নাঈমুল হক, মিসকাত উদ্দিন, রামধন চন্দ্র দাশ, আমির হোসেন, অহিদ উল্লাহ, সনজিব দত্ত, মিঠুন কুমার ভৌমিক এবং কনস্টেবল সাগর দেব, আবু হানিফ, হেলাল উদ্দিন, আমজাদ হোসেন, মো. মামুন, নাজমুল হাসান, মো. জসিম উদ্দিন, মো. আমজাদ হোসেন, মো. কামরুল হাসান, মো. জাহাঙ্গীর, মো. হাবিব, মো. নুর নবী, আনোয়ার হোসেন, সৈকত বড়ুয়া এবং রঙ্গিখালী এলাকার বাসিন্দা গিয়াস উদ্দিন, আনোয়ার হোছন প্রকাশ লেডাইয়া ডাকাত, লুৎফর রহমান, সরোয়ার আলম, নুরুন্নবী ও বোরহান উদ্দিন। আসামিদের মধ্যে প্রথম ৩৫ জন পুলিশের সদস্য। অন্যরা রঙ্গিখালী এলাকার বাসিন্দা। মামলায় ওসি প্রদীপকে ১ নম্বর এবং হোয়াইক্যং পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মশিউর রহমানকে ২ নম্বর আসামি করা হয়েছে।