কুড়িগ্রামে টানা বৃষ্টি, ফসলের ক্ষতি
প্রায় এক সপ্তাহ ধরে কুড়িগ্রামে ঝড়বৃষ্টি হচ্ছে। গতকাল মঙ্গলবার রাতেও হয়েছে ঝড় ও শিলাবৃষ্টি। এতে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। অনেক স্থানে ঘরের চাল ও গাছপালা পড়ে গেছে। নদনদীর তীরে বাঁধা ছোট ছোট জেলেনৌকা বাতাসে ভেসে গেছে।
রাজারহাট কৃষি ও আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রর ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বিমল চন্দ্র জানান, ২০ মে রাত থেকে ২৭ মে বিকেল পর্যন্ত এখানে গড় বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ৩৪ দশমিক ৯৭ মিলিমিটার। কিছু উপজেলায় বৃষ্টিপাতের হার ছিল অনেক বেশি। সঙ্গে ছিল শিলাবৃষ্টি ও ঝোড়ো হাওয়া।
কুড়িগ্রামের ৯টি উপজেলায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত সাত দিনের ব্যাপক বৃষ্টিপাতে নিম্নাঞ্চলের উঠতি ইরি-বোরো ধান, পাট ও ভুট্টাসহ বিভিন্ন প্রকার সবজির খেত ডুবে গেছে। তার ওপর গতকাল রাতের শিলাবৃষ্টি ও ঝোড়ো হাওয়ার এসব ফসলের আরও ক্ষতি হয়েছে। কৃষক কিছু ধান কাটলেও বৃষ্টির কারণে মাড়াই করতে পারছে না। এতে ধান উঠানেই নষ্ট হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে।
উলিপুর উপজেলায় ব্রহ্মপুত্র নদের মধ্যবর্তী আইরমারীর চরের আইযুব আলী বলেন, ‘চরে সবাই গরিব দিনমজুর। সবাই কষ্ট করে ধান গারছে। ঝড়ে সব মাটিতে হোতায় দিছে। কাঁচা ঘরবাড়ির পড়ে গেছে।’
একই গ্রামের নৌকার মাঝি সহিদুল ইসলাম বলেন, গতকাল সন্ধ্যা থেকে প্রবল বৃষ্টি শুরু হয়। রাত বাড়ার সঙ্গে ঝড় শুরু হয়। আজ বুধবার সকালে উঠে দেখি, ঘাটে নৌকা নেই। অনেক খোঁজাখুঁজির পর দূরে গিয়ে পাওয়া যায়।
ফুলবাড়ী উপজেলার নাওডাঙ্গা, শিমুলবাড়ী ও ভাঙ্গামোড় এবং রাজারহাটের ছিনাই ও ঘড়িয়ালডাঙা ঘুরে দেখা যায়, খেতের পাট, পাকা ধান, সবজিসহ সব ধরনের ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
ফুলবাড়ীর নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের তৈয়ব আলী, আবদুর রহিম ও তপন চন্দ্র জানান, শিলাবৃষ্টিতে তাঁদের পাটের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
ভাঙ্গামোড় ইউনিয়নের কার্তিক চন্দ্র সরকার বলেন, শিলাবৃষ্টিতে তাঁর তিন বিঘা খেতের পাকা ধান মাটিতে পড়ে গেছে। এগুলো চিটা হবে।
ভূরুঙ্গামারীর খাটামারী গ্রামের আমিনুর রহমান, নলেয়া গ্রামের শহিদুল ইসলাম, আসামপাড়া গ্রামের আনোয়ার ও চর ভূরুঙ্গামারীর আমিনুর জানান, তাঁদের ধান পেকেছে। ভেবেছিলেন, প্রথম দিনের বৃষ্টি শেষ হলেই ধান কাটবেন। কিন্তু সাত দিনেও বৃষ্টি বন্ধ না হওয়ায় ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। ধানের শিষ নিচের দিক থেকে পচে যাচ্ছে।
জানতে চাইলে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মোস্তাফিজার রহমান প্রধান বলেন, কুড়িগ্রামে এবার ১ লাখ ১৫ হাজার হেক্টর জমিতে ইরি বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। এখন পর্যন্ত ৭৩ ভাগ ধান কাটা হয়েছে। বাকি রয়েছে ২৭ ভাগ ধান। এর মধ্যে বেশির ভাগ বিআর ২৯ ও উচ্চ ফলনশীল জাত। ঘূর্ণিঝড় আম্পান–পরবর্তী এ জেলায় কৃষিতে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১ কোটি ১৫ লাখ টাকা।