কুড়ানো আলুই সারা বছরের আহার
করোনাকালে কাজকর্ম না থাকায় নুন আনতে পান্তা ফুরানোর দশা দিনমজুর পরিবারের। তাই মা-বাবাকে সাহায্য করতে হাত বাড়িয়েছে ওরা। এই মহামারিতে স্কুল বন্ধ। ক্লাসে যাওয়ার বালাই নেই। এদিকে মাঠের আলু তোলা শুরু হয়েছে কয়েক দিন আগেই। মালিক খেত থেকে আলু তুলে নেওয়ার পরও মাটিতে কিছু আলু চাপা পড়ে থাকে। জমির মালিক বোরো ধান, পাট বুনবেন বলে ট্রাক্টর দিয়ে সেই জমি চাষ করতে শুরু করেছেন। ট্রাক্টরের লাঙলের আঁচড়ে উঠে আসছে মাটিতে চাপা পড়ে থাকা আলু। ট্রাক্টরের পেছন পেছন ছুটে সেই আলু সংগ্রহে নেমেছে রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার দরিদ্র পরিবারের স্কুলপড়ুয়া শিশুরা।
স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কৃষকেরা সাধারণত খেতের আলু নারী শ্রমিক দিয়ে তুলে থাকেন। আলু তোলার সময় কিছু কিছু আলু মাটিতে চাপা পড়ে যায়। ওই শিশুদের মূল টার্গেট হলো এসব আলু সংগ্রহ করা। তারা বাশিলা, কোদাল প্রভৃতি দিয়ে মাটি খুঁড়ে ওই আলু বের করে আনে। জমি চাষ করার সময়ও ট্রাক্টরের আঁচড়ে উঠে আসা আলুও মহা আনন্দে তারা দল বেঁধে কুড়িয়ে থাকে। এতে মাঝেমধ্যে জমির মালিকের গালমন্দও তাদের কপালে জোটে।
আলু তোলার সময় কিছু কিছু আলু মাটিতে চাপা পড়ে যায়। ওই শিশুদের মূল টার্গেট হলো এসব আলু সংগ্রহ করা। তারা বাশিলা, কোদাল প্রভৃতি দিয়ে মাটি খুঁড়ে ওই আলু বের করে আনে।
ট্রাক্টরের পেছনে ছুটে আলু কুড়াচ্ছিল পঞ্চম শ্রেণি পড়ুয়া শিশু শাহিদা খাতুন। সে বলে, ‘অ্যালা হামার স্কুল বন্ধ। বাড়িত কোনো কামকাজ নাই। ওই তকনে আলু কুড়ার আসছি। সারা দিন চার-পাঁচ কেজি আলু কুড়ি পাই। এগলা আলু বাড়িত নিগি দেই। আম্মা হামাক আলু দিয়ে ভর্তা, ডাইল বানে খাওয়ায়।’
প্রত্যেক বছর আলুর মৌসুমত হামরা স্কুল ছুটির পর দল বাঁধি আলু কুড়াবার ব্যার হই। সন্ধ্যা পর্যন্ত আলু কুড়িয়া যা পাই, তা মার কাছত জমা দেই। এই বছর স্কুল বন্ধ থাকায় সারা দিন হামরা আলু খুঁজি বেড়াই। মা এই সব আলু হাঁড়ি-পাতিল, বালুত সংরক্ষণ করি রাখে। অভাবের সময়টাত হামরা এই আলু খায়া বাঁচি।
কথা হয় বামনদীঘি গ্রামের আলু কুড়ানি দলের আরেক খুদে সদস্য ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ুয়া জয়দুল ইসলামের সঙ্গে। সে বলে, প্রত্যেক বছর আলুর মৌসুমে তারা স্কুল ছুটির পর দল বেঁধে আলু কুড়াতে বের হয়। সন্ধ্যা পর্যন্ত আলু কুড়িয়ে যা পায়, তা তারা মায়ের কাছে জমা দেয়। এ বছর স্কুল বন্ধ থাকায় সারা দিন তারা আলু খুঁজতে বেড়ায়। দিন শেষে সেই আলু মার কাছে নিয়ে জমা দেয়। মা এসব আলু হাঁড়ি-পাতিল, বালুতে সংরক্ষণ করে রাখেন। অভাবের সময়টাতে তারা এ আলু খেয়ে বাঁচে।
পোদ্দারপাড়ার মাঠে কথা হয় আলু খেতের শ্রমিক স্বামীহারা মঞ্জিলা বেগমের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘করোনায় মানুষোক বেকার করি দিছে। গ্রামোত কামকাজ নাই। এখন আলু তুলার কাম পাইছি। তাও মজুরি কম। সারা দিন কাজ করি ১৫০ টাকা পাই। এতে কোনো রকমে কয়টা দিন সংসার চলবে। যখন কাজ থাকবে না, তখন খুব কষ্টে দিন যাইবে। আলুর যে দাম, হামার মতোন গরিব মানুষের তাক কিনি খাবার সামর্থ্য নাই। ছাওয়াগুলা যেকনা আলু কুড়ায়, তাকে সারা বছর খাই।’
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ঊর্মি তাবাসসুম বলেন, করোনাকালের বছরে দেশে আলুর চাহিদা বেড়ে ছিল দ্বিগুণ। তাই আলু দামও বেড়ে গিয়েছিল আকাশছোঁয়া। গত বছর আলুর ভালো দাম পাওয়ায় অনেক কৃষক আলু চাষ বাড়িয়েছে। এ কারণে গত বছরের চেয়ে এ বছর ৬৭০ হেক্টর জমিতে বেশি আলুর চাষ হয়েছে। এখন চলছে আলু তোলার মৌসুম।