২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

‘কিসের ভোট, কিসের নির্বাচন, আমার ছেলেকে এনে দিতে বলেন’

চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার নলুয়া ইউনিয়নের বোর্ড অফিস কেন্দ্রের বাইরে সহিংসতা নিহত তাসিবের বাবার আহাজারিছবি: সৌরভ দাশ

ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনের সপ্তম ও শেষ ধাপের ভোটের দিন আজ সোমবার দুপুরে চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার নলুয়া ইউনিয়নে সহিংসতায় প্রাণ হারিয়েছে স্কুলছাত্র মো. তাসিব। ইউনিয়নের মরফলা গ্রামে তার বাড়িতে এখন মাতম।

আরও পড়ুন

তাসিবের লাশের পাশেই তার রিকশাচালক বাবা জসিম উদ্দিনের আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠেছে বাড়ির আশপাশের পরিবেশ। বুক চাপড়িয়ে তিনি বলছিলেন, ‘‌আমার ছেলেরে মেরে ফেলল। আর কারও বুক যেন খালি না হয়। আমার প্রাণের ছেলেরে মেরে ফেলল। আমি সবার ফাঁসি চাই।’

আজ সোমবার দুপুর ১২টার দিকে ভোট চলাকালে মরফলা বোর্ড অফিস কেন্দ্রে কুপিয়ে হত্যা করা হয় তাসিবকে। তার চাচা মিজানুর রহমান নলুয়া ২ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য প্রার্থী। কেন্দ্রের বাইরে থাকা তাসিবকে প্রতিপক্ষ মনে করে হত্যা করা হয় বলে ধারণা করছেন স্বজনেরা।

জসিম উদ্দিন বলেন, ‘আমার ভাই নির্বাচন করছিল। ছেলে উৎসুক হয়ে দেখতে গেছে। তখন তাকে কোপায় এক চেয়ারম্যান প্রার্থীর লোকজন। আমি সামান্য রিকশাচালক। আমার ছেলের কী দোষ?’

তাসিব সপ্তম শ্রেণির ছাত্র। জসিম উদ্দিনের দুই মেয়ে ও এক ছেলের মধ্যে তাসিব বড়। একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে জসিম পাগলপ্রায়। তাঁর আহাজারি দেখে পাড়া–প্রতিবেশীরাও কাঁদছিলেন।

তাসিবের মা সখিনা বেগম কান্নায় বুক ভাসাচ্ছিলেন। বেলা একটার দিকেও তাসিবের মরদেহ খাটে শোয়া অবস্থায় ছিল। দুই বোন খাটের পাশে বসে ভাইয়ের মাথায় হাত বুলাচ্ছিল। ছোট্ট ঘরটিতে পাড়া–প্রতিবেশীদের তিল ধারণের জায়গা ছিল না। সখিনা বলেন, ‘আমার ছেলে ঘুমাচ্ছে। দেখছ তোমরা। এখনো রক্ত চলাচল করছে।’

চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার নলুয়া ইউনিয়নের বোর্ড অফিস কেন্দ্রের বাইরে নিহত তাসিবের স্বজনদের আহাজারি
ছবি: সৌরভ দাশ

একটু থেমে সখিনা বিলাপ করে বলেন, ‘কিসের ভোট, কিসের নির্বাচন? আমার ছেলেকে এনে দিতে বলেন। আমার ছেলে নিরীহ, তাকে কেন হত্যা করা হলো? এর বিচার চাই আমি। আমার ছেলের জন্য তার বাবা রিকশা চালিয়ে টাকা রোজগার করছিল। পড়ালেখা চালাচ্ছিল। এখন আমি কাকে নিয়ে বাঁচব?’

বাড়ির পাশের বোর্ড অফিস কেন্দ্রে তাসিব মারা যায়। ঘটনার সময় কেন্দ্রটিতে চেয়ারম্যান প্রার্থী নৌকার লিয়াকত আলীর লোকজন অবস্থান নেয় বলে জানা যায়। বিদ্রোহী প্রার্থী মিজানুর রহমানের অনুসারীদের সঙ্গে তখন মারামারি শুরু হয়।

একপর্যায়ে কেন্দ্রের বাইরে দাঁড়ানো তাসিবকে কুপিয়ে চলে যায় কয়েকজন। শেষে নৌকার প্রার্থীর লোকজন কেন্দ্রটির নিয়ন্ত্রণ নেয়।

কেন্দ্রের নিরাপত্তায় দায়িত্বপ্রাপ্ত সাতকানিয়া থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) আবদুল মতিন বলেন, কেন্দ্রের বাইরে গন্ডগোল হয়েছে। এ সময় এক কিশোরের মৃত্যু হয়।

ঘটনার পর বেলা একটার দিকে চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার রশিদুল হক ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।

১৫ মিনিট পর মরফলার তাসিবদের বাড়ির সামনের সড়ক দিয়ে এসপির গাড়ি চলে যাচ্ছিল। তখনো জসিম উদ্দিনের ভাই মজিদ রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে বিলাপ করছিলেন, ‘আমার ভাইপোর কী অপরাধ? ও স্যার, আপনারা আমার ভাইপোকে এনে দেন।’