কিটের অভাবে পরীক্ষা না করে অনেকে ফিরে যাচ্ছেন, বাড়ছে সংক্রমণের ঝুঁকি

শনিবার বেলা ১১টা। রাজশাহী নগরের তালাইমারী মোড়ে র‍্যাপিড অ্যান্টিজেন প্রক্রিয়ায় করোনার নমুনা পরীক্ষা করাতে এসেছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। সঙ্গে তাঁর ছেলেও। কিন্তু এসে দেখেন আজকের মতো পরীক্ষা শেষ।

হাদির মোড় এলাকার বাসিন্দা রুমানা আহমেদ তাঁর মামা উজ্জ্বল হোসেনকে রিকশাযোগে নিয়ে এসেছিলেন করোনার পরীক্ষার জন্য। কিন্তু তিনিও পরীক্ষা করাতে পারেননি। তাঁদের সবাইকে করোনার পরীক্ষা না করেই চলে যেতে হয়েছে। তাঁদের বুথ থেকে বলা হয়েছে, আজকের মতো কিট শেষ। তাঁদের আগামীকাল সকালের দিকে পরীক্ষা করাতে আসতে অনুরোধ করা হয়েছে।

এর আগে রাজশাহী নগরে গত ৬ জুন থেকে পথচারীসহ নগরবাসীকে করোনা পরীক্ষা করানোর জন্য কিছু পয়েন্টে র‍্যাপিড অ্যান্টিজেন পরীক্ষা শুরু হয়। প্রথম দিকে এই পরীক্ষায় মানুষের আগ্রহ কম ছিল। পরে অ্যান্টিজেন পরীক্ষায় মানুষের আগ্রহ বেড়ে যায়। প্রথমে পাঁচটি পয়েন্টে শুরু হলেও পরে পয়েন্ট বাড়ানো হয়। তবে ১ জুলাই থেকে কিট–সংকটে কয়েক দিনের জন্য অ্যান্টিজেন পরীক্ষা বন্ধ হয়ে যায়। গত ঈদের আগে ও পরেও কয়েক দিন নমুনা পরীক্ষা বন্ধ ছিল। কিন্তু এরপর অ্যান্টিজেন পরীক্ষা শুরু হলেও তা পর্যাপ্ত নয়।

সিভিল সার্জন দপ্তরের দেওয়া কিটে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগ নগরজুড়ে স্থায়ী বুথ বসিয়ে অ্যান্টিজেন পরীক্ষা করছে। বুথগুলোর দায়িত্বপ্রাপ্ত স্বাস্থ্যকর্মীরা জানিয়েছেন, অ্যান্টিজেন পরীক্ষার শুরুর দিকে তাঁদের কাছে পর্যাপ্ত কিট ছিল। জুন মাসে পুরোদমে প্রতিদিন হাজার-পনেরো শ পর্যন্ত পরীক্ষা করলেও এখন পর্যাপ্ত কিট তাঁদের কাছে মজুত নেই। তাই প্রতি পয়েন্টে মাত্র ৫০টি করে পরীক্ষা করা হচ্ছে।

তালাইমারী মোড়ে বুথের সামনে দাঁড়িয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শফিকুল ইসলাম বলেন, গত এক সপ্তাহ আগে তিনি ও তাঁর ছেলে আব্দুল্লাহ র‍্যাপিড অ্যান্টিজেন পরীক্ষা করিয়েছিলেন। এতে তাঁর ছেলের করোনা পরীক্ষায় ফলাফল পজিটিভ আসে। তাঁর নেগেটিভ আসে। বুথ থেকে ওই দিন বলা হয়েছিল এক সপ্তাহ পর পুনরায় পরীক্ষা করাতে। কিন্তু আজ বেলা ১১টার দিকে এসে দেখেন পরীক্ষা বন্ধ। বুথ থেকে বলা হয়েছে কিট নেই। এ সময় পর্যাপ্ত পরিমাণে করোনার পরীক্ষা করানো দরকার। তা না হলে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

রুমানা তাঁর মামা উজ্জ্বলকে নিয়ে নগরের প্রায় সব কয়টি বুথে ঘুরে তালাইমারী মোড়ে এসেছিলেন। তিনি বলেন, সব কেন্দ্রে পরীক্ষা শুরুর এক ঘণ্টার মধ্যেই কিট শেষ হয়ে গেছে। সবশেষ তাঁরা তালাইমারী এই বুথে এসেছেন। এ রকম ভোগান্তি আসলে মানা যায় না। মামার করোনার উপসর্গ রয়েছে, পরীক্ষাটা খুবই দরকার।

নগরের খড়খড়ি বাইপাস মোড় থেকে দুই মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে এসেছিলেন জয়নাল আবেদিন। কিন্তু কিট না থাকায় কেবল তাঁর স্ত্রীর পরীক্ষা করাতে পেরেছেন। তাঁরা আগামীকাল এসে পরীক্ষা করাবেন।

এই বুথে দায়িত্ব পালনকারী সিটি করপোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগের স্বাস্থ্যকর্মী সাঈদ হোসেন বলেন, তাঁদের কিট–সংকট চলছে। সিভিল সার্জন দপ্তর থেকে তাঁরা যে পরিমাণ কিট পাচ্ছেন, তাই দিয়েই পরীক্ষা চালাচ্ছেন। এতে তাঁদের গাফিলতি নেই। তিনি আরও বলেন, মানুষের পরীক্ষার আগ্রহ বেড়েছে। কিন্তু সকালে এক-দেড় ঘণ্টার মধ্যেই নির্ধারিত ৫০টি কিট শেষ হয়ে গেছে। এই বুথে আজ শনিবার ৫০টি পরীক্ষায় সাতজনের করোনা পজিটিভ এসেছে। শনাক্তের হার ১৪ শতাংশ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজশাহী নগরের বিভিন্ন স্থানে ৮টি বুথে করোনার অ্যান্টিজেন পরীক্ষা করা হচ্ছে। কয়েক দিন ধরে করোনা পরীক্ষার চাপ বাড়লেও কিট বাড়েনি। আজ শনিবার রাজশাহী নগরের মোট অ্যান্টিজেন পরীক্ষার ফলাফল বেলা ৩টা পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। আগের দিন শুক্রবার পরীক্ষা হয়েছিল ১৮৬ জনের। করোনা শনাক্ত হয়েছে ৩৯ জনের। শনাক্তের হার ২০ দশমিক ৯৭ শতাংশ।

রাজশাহী সিটি করপোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা এফ এ এম আঞ্জুমান আরা বেগম বলেন, যাঁদের জ্বর-ঠান্ডাসহ উপসর্গ আছে, তাঁদেরই পরীক্ষার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে।

অনেকে পরীক্ষা করাতে এসে কিট–সংকট থাকায় ফিরে যাচ্ছেন, এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে আঞ্জুমান আরা বেগম বলেন, তিনি বিষয়টি দেখবেন। আরও কীভাবে পরীক্ষা বাড়ানো যায়, সেটাও দেখবেন।

রাজশাহী জেলা সিভিল সার্জন মো. কাইয়ুম তালুকদার বলেন, এখন একান্ত প্রয়োজন ছাড়া গণহারে তাঁরা অ্যান্টিজেন পরীক্ষা করাচ্ছেন না। যার প্রয়োজন হবে, উপসর্গ আছে—কেবল তারাই করোনার পরীক্ষা করুক, এটা তাঁরা চান। এভাবেই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

কিটের সংকট আছে কি না, এ বিষয়ে তিনি বলেন, কিটের সংকট এ মুহূর্তে নেই। কিন্তু কিটের পর্যাপ্ত মজুত আগের মতো নেই। কিট আছে, কিন্তু গণহারে পরীক্ষার মতো কিট নেই।