‘কার্গোটি লঞ্চে ধাক্কা দিতে দিতে কাত করে ফেলে, চোখের সামনে লঞ্চটি ডুবে যায়’
‘আমাদের লঞ্চটা ছিল সামনে। পেছনে ছিল বড় একটা জাহাজ (কার্গো)। জাহাজটা পেছন থেকে আমাগো লঞ্চরে ধাক্কা দিল। এমনে ১০ মিনিটের মতো ধাক্কা দিতে দিতে সামনে লইল। এরপর লঞ্চের পশ্চিম পাশে পানি উঠে চোখের সামনে আমাদের লঞ্চটা ডুইব্বা গেল।’
এভাবেই লঞ্চডুবির ঘটনার বর্ণনা দেন এমএল আশরাফউদ্দিন লঞ্চের যাত্রী ও খানপুর হাসপাতালের কর্মী মোকসেদা বেগম। তাঁর বাড়ি মুন্সিগঞ্জের সদর উপজেলার গণকপাড়া এলাকায়। আজ বেলা দুইটার দিকে শীতলক্ষ্যা নদীর মাহমুদনগর কলাবাগান এলাকায় রূপসী-৯ নামের কার্গোর ধাক্কায় অন্তত ৩০ যাত্রীসহ এমএল আশরাফউদ্দিন নামের লঞ্চটি ডুবে যায়। লঞ্চটি নারায়ণগঞ্জ থেকে মুন্সিগঞ্জে যাচ্ছিল। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত দুজন নারী, দুটি শিশু ও একজন পুরুষের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে একজনের নাম জানা গেছে। তাঁর নাম জয়নাল আবেদীন (৫০)। তাঁর বাড়ি মুন্সিগঞ্জ সদরের ইসলামপুর এলাকায়। বাকিদের পরিচয় শনাক্ত করা যায়নি।
মোকসেদা প্রথম আলোকে বলেন, ‘ডুবন্ত লঞ্চ থেকে আমি লাফাইয়া পানিতে পড়লাম। পানিতে তলাইয়া যাইতাছিলাম, কোনো রকম সাঁতরাইয়া পানির ওপরে উঠি। এরপর একটা বস্তা ধইরা ভাইসা ছিলাম। চোখের সামনে ছোট বাচ্চা, মহিলা, কত মানুষ তলাইয়া গেল গো...’ বলেই আহাজারি করতে থাকেন মোকসেদা।
লঞ্চের আরেক যাত্রী সজীব মাহমুদ। তিনি তেজগাঁও টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটের অষ্টম সেমিস্টারের ছাত্র। সজীব প্রথম আলোকে বলেন, সামনেই তাঁর শেষ বর্ষের পরীক্ষা। এ জন্য প্রবেশপত্র আনতে ঢাকায় গিয়েছিলেন তিনি। বেলা ১টা ৫৮ মিনিটে তাঁদের লঞ্চ নারায়ণগঞ্জ থেকে ছাড়ে। তাঁর ভাষ্যমতে, লঞ্চের ওপরে ও নিচে ৩০ থেকে ৪০ জন যাত্রী ছিলেন। রোদের কারণে যাত্রীরা কেবিন ও নিচতলায় ছিলেন। তিনি লঞ্চের সামনের ফাঁকা জায়গায় ছিলেন। লঞ্চটি কয়লাঘাট এলাকায় আসার পর পেছন থেকে কার্গো জাহাজটি ধাক্কা দিতে থাকে। তিনি তখনই প্রবেশপত্র, বই–খাতাসহ পানিতে ঝাঁপ দেন। তাঁর সঙ্গে ঝাঁপ দেন আরও কয়েকজন। পরে তাঁরা নদীতে নোঙর করা একটি বাল্কহেডে ওঠেন।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে সজীব বলেন, ‘কার্গো জাহাজটি লঞ্চে ধাক্কা দিতে দিতে কাত করে ফেলে। চোখের সামনে লঞ্চটি ডুবে যায়। ভাগ্যের জোরে বেঁচে ফিরলাম। আমার সঙ্গে লঞ্চে ওঠা কত মানুষ ছিল! তারা মরে গেল।’
সজীব আরও বলেন, গত বছর এই নৌপথে লঞ্চডুবিতে কত মানুষ মরল। কিন্তু আবারও দুর্ঘটনা ঘটল। নারায়ণগঞ্জ-মুন্সিগঞ্জ নৌপথে দুর্ঘটনা ঘটছেই। মুন্সিগঞ্জের মানুষ মরে যাচ্ছে। নৌপথ সুরক্ষিত করতে প্রশাসন থেকে কোনো ব্যবস্থাই নেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন তিনি।
মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ হাসিব সরকার প্রথম আলোকে বলেন, ‘দুর্ঘটনাকবলিত লঞ্চের যাত্রীরা অধিকাংশই মুন্সিগঞ্জের বাসিন্দা বলে শুনেছি। খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমি ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে রওনা হয়েছি। সেই সঙ্গে জরুরি কেউ আহত থাকলে তাঁদের চিকিৎসাসেবা দিতে ফায়ার সার্ভিসের একটি দল মুন্সিগঞ্জের লঞ্চঘাটে রাখা হয়েছে। নৌ পুলিশ তৎপরতা চালাচ্ছে।’