কারাগার থেকে জামিনে এসে ইউপি চেয়ারম্যানের তাণ্ডব
কারাগার থেকে জামিনে বেরিয়ে এসে কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী সদর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান এ কে এম মাহমুদুর রহমান রোজেন তাণ্ডব চালিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বুধবার রাতে উপজেলা সদরের বিভিন্ন স্থানে দলবল নিয়ে তিনি এ তাণ্ডব চালান। এ সময় এক সরকারি কর্মকর্তাকে লাঞ্ছিত ও এক শ্রমিকনেতাকে মারধর করা হয়েছে।
ভূরুঙ্গামারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) দীপক কুমার দেব শর্মা বলেন, চেয়ারম্যানের এমন আচরণে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে উপজেলাবাসী। হামলার বিষয়টি জেলা প্রশাসককে জানানো হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, মারধর ও হত্যাচেষ্টা মামলায় জামিন পেয়ে কুড়িগ্রাম কারাগার থেকে বুধবার রাতে এলাকায় ফেরেন ভূরুঙ্গামারী সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাহমুদুর রহমান। রাতে ভূরুঙ্গামারী বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছালে চেয়ারম্যানের কর্মী-সমর্থকেরা তাঁকে ফুলের মালা দিয়ে বরণ করে নেন। এরপর তাঁরা মিছিল নিয়ে ইউএনও কার্যালয়ে গিয়ে তালাবদ্ধ দরজা ভাঙচুর করেন। মিছিলটি ইউএনওর বাসভবনের দিকে যাওয়ার সময় ঘটনাস্থলে পুলিশ গিয়ে বাজারের দিকে ফেরত পাঠায়। তাঁরা উপজেলার পাবলিক লাইব্রেরির চেয়ার-টেবিল ও প্রেসক্লাবের দরজা-জানালা ভাঙচুর করেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মিছিল নিয়ে শহরে মহড়া দেওয়ার সময় ইউপি চেয়ারম্যান ও তাঁর লোকজন সাবরেজিস্ট্রার ফখরুল ইসলামকে লাঞ্ছিত করেন। উত্তর ধরলা মোটর-মালিক সমিতির সহসভাপতি ও স্থানীয় জননী বস্ত্রালয়ের মালিক মহাদেব সাহাকে দোকান থেকে টেনেহিঁচড়ে বের করে মাটিতে ফেলে তাঁকে মারধর করেন। পরে আহত মহাদেব সাহাকে উদ্ধার করে প্রথমে কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে এবং পরে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
হামলার শিকার মহাদেব সাহা বলেন, ‘আমি রাত আটটার দিকে দোকান বন্ধ করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। এ সময় চেয়ারম্যান মিছিল নিয়ে এসে আমার ওপর হামলা চালায়। আমাকে টেনেহিঁচড়ে দোকান থেকে বের করে মাটিতে ফেলে মারধর করে।’
বিরোধের জেরে ১১ ডিসেম্বর বিকেলে চেয়ারম্যান এ কে এম মাহমুদুর রহমান ভূরুঙ্গামারী প্রেসক্লাব সম্পাদক এমদাদুল হক মন্টুকে মাথায় আঘাত করে হত্যার চেষ্টা করেন বলে অভিযোগ আছে। এ ঘটনায় এমদাদুল হক বাদী হয়ে ১৩ ডিসেম্বর ভূরুঙ্গামারী থানায় মারধর ও হত্যাচেষ্টায় একটি মামলা করেন। ১৪ ডিসেম্বর অভিযুক্ত চেয়ারম্যানকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ জেলা কারাগারে পাঠায়।
উত্তর ধরলা মোটর-মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান বলেন, সাধারণ মানুষ প্রায়ই চেয়ারম্যানের হামলার শিকার হলেও অজ্ঞাত কারণে প্রশাসন নীরব ভূমিকা পালন করে আসছে। চেয়ারম্যানের প্রভাবে সাধারণ মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে।
ভূরুঙ্গামারী প্রেসক্লাবের সভাপতি আনোয়ারুল হক বলেন, চেয়ারম্যানের ভয়ে উপজেলার মানুষ ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছে। চেয়ারম্যান লোক ভাড়া করে এবং ৪০ দিনের কর্মসূচির সুবিধাভোগী নারী-পুরুষদের প্রলোভন দেখিয়ে মিছিলে নিয়ে এসেছেন। পরিকল্পিতভাবে আতঙ্ক ছড়ানোর উদ্দেশ্যে এমন হামলা চালানো হয়েছে। দ্রুত চেয়ারম্যানের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিও দাবি করেন তিনি।
এ বিষয়ে একাধিকবার মুঠোফোনে চেয়ারম্যান মাহমুদুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তাঁর সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। ভূরুঙ্গামারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতিয়ার রহমান বলেন, ‘ব্যবসায়ীকে মারধরের ঘটনা শুনেছি। তবে এখনো কেউ অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’