খুলনার ফুলতলা উপজেলায় ধানখেত থেকে উদ্ধার হওয়া নারীর লাশের মাথার সন্ধান এখনো মেলেনি। গতকাল বুধবার সকালে লাশ উদ্ধারের পর আজ বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত বিভিন্ন জায়গায় তা খুঁজেছে পুলিশ। নিহত নারীর বড় বোন বাদী হয়ে গতকাল রাতে ফুলতলা থানায় হত্যা মামলা করেছেন। এ মামলায় এখন পর্যন্ত কেউ গ্রেপ্তার হয়নি।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, নিহত নারীর নাম মুসলিমা খাতুন (২০)। তাঁদের বাড়ি সাতক্ষীরায়। সাত বছর ধরে তাঁরা ফুলতলা উপজেলায় ভাড়া থাকতেন। মুসলিমা স্থানীয় একটি কারখানায় কাজ করতেন।
থানা-পুলিশ জানায়, গতকাল সকালে ফুলতলার উত্তরডিহি এলাকার একটি ধানখেত থেকে এক নারীর মাথাবিহীন লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। প্রথমে অজ্ঞাত পরিচয় হিসেবে লাশটি উদ্ধার করা হলেও দুপুরের দিকে নিহত নারীর দুই বোন লাশের হাত-পা দেখে সেটি শনাক্ত করেন। পরে মুসলিমার বড় বোন আকলিমা বেগম এ ঘটনায় মামলা করেন।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, আকলিমা গত মঙ্গলবার রাত সাড়ে আটটার দিকে তাঁদের ভাড়া বাসায় গিয়ে মুসলিমাকে খুঁজে পাননি। এরপর লোক মারফত বিভিন্ন জায়গায় খুঁজেও তাঁকে পাওয়া যায়নি। পরে রাতে আকলিমার মুঠোফোনে একটি খুদে বার্তা (এসএমএম) পাঠায় মুসলিমা। তাতে লেখা ছিল, ‘অজ্ঞাতনামা ৫ থেকে ৬ জন যুবক তাঁকে একটি বাগানে আটকে রেখেছে।’ এরপর বিভিন্ন জায়গায় খুঁজেও মুসলিমার খোঁজ পাননি পরিবারের লোকজন। সকালের দিকে ধানখেতে নারীর লাশ পড়ে থাকার কথা শুনে মুসলিমার বোনেরা গিয়ে লাশের পরিচয় শনাক্ত করেন।
ফুলতলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইলিয়াস তালুকদার বলেন, মেয়েটি আশপাশের এলাকায় পরিচিত মুখ। ধারণা করা হচ্ছে, হত্যার পর তাঁর পরিচয় যেন কেউ শনাক্ত করতে না পারে, সে জন্য তাঁর মাথা অন্য কোথাও সরিয়ে ফেলেছেন অপরাধীরা। পুলিশ তাঁর কাটা মাথাটি খোঁজার চেষ্টা করছে। গত দুই দিনে লাশ পাওয়ার স্থানসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকা, সেপটিক ট্যাংক, বাগানে খুঁজে কিছুই পাওয়া যায়নি।
ইলিয়াস তালুকদার বলেন, মামলাটি একেবারে সূত্রহীন নয়। এ কারণে তদন্ত করে প্রকৃত দোষীদের গ্রেপ্তারের জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কয়েকজনকে থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। এক ব্যক্তি মুসলিমাকে উত্ত্যক্ত করতেন বলে এজাহারে উল্লেখ করেছেন তাঁর বোন। পুলিশ এখন তাঁকে খুঁজে পাচ্ছে না।
থানা-পুলিশ আরও জানায়, লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন করে ময়নাতদন্তের জন্য খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠাতে বুধবার বিকেল হয়ে যায়। এ কারণে ওই দিন ময়নাতদন্ত করা হয়নি। তবে আজ ময়নাতদন্ত করে দুপুরের দিকে লাশটি পরিবারের সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
আকলিমা বেগম বলেন, তাঁদের বাবা গুরুতর অসুস্থ। তাঁকে দেখাশোনার কেউ নেই। বাবাকে রেখে যে মুসলিমার লাশ গ্রহণ করবেন, তা–ও পারেননি। মুসলিমার মারা যাওয়ার কথা শুনে তাঁদের বাবা আরও বেশি ভেঙে পড়েছেন। মুসলিমার লাশ পরিবারের অন্য সদস্যরা গ্রহণ করেছেন। লাশ দাফনের প্রস্তুতি চলছে।