কাটা পড়েছে শিকড়, ঝুঁকিতে ৬২০টি শতবর্ষী গাছ
যশোর-বেনাপোল জাতীয় মহাসড়ক সম্প্রসারণ করা হচ্ছে। এ জন্য মহাসড়কের পাশের মাটি কেটে সাড়ে ৩ ফুট গভীর করা হচ্ছে। এতে পাশের ৬২০টি শতবর্ষী গাছের শিকড় কাটা পড়েছে। গাছগুলো ঝড়ে উপড়ে পড়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী।
যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার কলাগাছি এলাকায় এ মহাসড়কের দুটি বড় গাছ গত মাসের শেষ দিকে চার দিনের ঝড়বৃষ্টিতে উপড়ে পড়ে। বৃষ্টির আগে আরও দুটি বড় গাছ পড়ে যায়। এতে প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি। তবে পাশের বসতবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ ঘটনার পর মহাসড়কের পাশে বসবাসকারী মানুষদের মধ্য আতঙ্ক বিরাজ করছে। আবারও ঝড়বৃষ্টিতে গাছ উপড়ে পড়তে পারে। এতে গাছের নিচে চাপা পড়ে মানুষের জানমালের ক্ষতি হতে পারে। তাই উপড়ে পড়ার ঝুঁকিতে থাকা গাছগুলো অপসারণের দাবিতে ইতিমধ্যে ১০টি পরিবারের পক্ষ থেকে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের কাছে ১০টি চিঠি পাঠানো হয়েছে।
ঝিকরগাছা উপজেলার শরীফপুর নবীবনগর গ্রামের বাসিন্দা আবুল কাসেম ২৮ ফেব্রুয়ারি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের কাছে এ-সংক্রান্ত একটি চিঠি দেন। এতে বলা হয়, ‘যশোর-বেনাপোল মহাসড়কের পাশে নবীবনগর গ্রামে আমার বসতবাড়ি। বাড়ির সামনে সরকারি বড় শিশুগাছ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে। সড়ক পুনর্নির্মাণের কারণে গাছের শিকড় কাটা পড়েছে। এতে গাছটি আরও নাজুক অবস্থায় রয়েছে। বড় ধরনের ঝড়বৃষ্টি হলে ওই গাছ আমার বাড়ির ওপরে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছি। যে কারণে পরিবার নিয়ে অত্যন্ত আতঙ্কের মধ্যে বসবাস করতে হচ্ছে। এ অবস্থায় এখনই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।’
শুধু আবুল কাসেম নন, গদখালী ও নবীবনগর গ্রামের আরও নয়টি পরিবার একই দাবিতে আবেদন করেছে।
জানতে চাইলে নাগরিক অধিকার আন্দোলন যশোরের সমন্বয়কারী মাসুদুজ্জামান মিঠু বলেন, যশোর-বেনাপোল মহাসড়কের ৩৮ কিলোমিটার পুনর্নির্মাণের কাজ চলছে। রাস্তার দুই পাশে ৫ ফুট করে সম্প্রসারণ হচ্ছে। এ জন্য এক্সকাভেটর দিয়ে মাটি খোঁড়া হচ্ছে। এতে শতবর্ষী গাছগুলোর শিকড় কেটে যাচ্ছে। গাছগুলো অত্যন্ত ঝুঁকিতে রয়েছে। গত মাসের কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে দুটি গাছ উপড়ে পড়েছে। সামনে কালবৈশাখীর সময়। তখন আরও গাছ উপড়ে পড়ার আশঙ্কা আছে। এতে প্রাণহানির মতো ঘটনা ঘটতে পারে। এ বিষয়ে এখনই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।
সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা গেছে, ড্রিল-হ্যামার ও এক্সকাভেটর দিয়ে মহাসড়কের ঝিকরগাছা উপজেলার কীর্ত্তিপুর, পারবাজার, পুরন্দপুর বিহারি পাড়ার মোড়, মঠবাড়ি, কলাগাছি ও শার্শা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় চলছে ব্যাপক খোঁড়াখুঁড়ি। এতে কাটা পড়ছে গাছের মোটা মোটা শিকড়। পাশাপাশি গাছের গোড়াও নড়বড়ে হয়ে যাচ্ছে। সব মিলিয়ে হাজারখানেক বড় গাছ ক্ষতির মুখে রয়েছে।
যশোর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সাইফুজ্জামান বলেন, ‘যশোর-বেনাপোল মহাসড়কের পাশের বাসিন্দারা ঝুঁকিপূর্ণ গাছ অপসারণের দাবিতে আবেদন করেছেন। মানুষের জানমালের নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ গাছগুলো অপসারণ করা দরকার। কিন্তু গাছ না কাটার ব্যাপারে উচ্চ আদালতের নির্দেশ আছে। এ কারণে মানুষের জীবন বাঁচাতে আমরা কিছুই করতে পারছি না।’
এ বিষয়ে সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের যশোর কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী এস এম মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, ‘যশোর শহরের দড়াটানা থেকে বেনাপোল বন্দর পর্যন্ত ৩৮ কিলোমিটার মহাসড়ক পুনর্নির্মাণের জন্য ৩২৮ কোটি টাকা ব্যয় করা হচ্ছে। মহাসড়কের দুই পাশের শতবর্ষী গাছ রেখেই ৫ ফুট করে মোট ১০ ফুট সম্প্রসারণ করা হচ্ছে। যেখানে গাছ নেই, সেখানে রাস্তা হচ্ছে ৩০ ফুট, আর যেখানে গাছ আছে, সেখানে থাকছে ২৪ ফুটই। ৩ ফুটের বেশি গর্ত করে পুনর্নির্মাণের এ কাজ করা হচ্ছে। এতে হয়তো গাছের কিছু শিকড় কাটা পড়ছে। কিন্তু কিছুই করার নেই।’