বরিশাল সিটি করপোরেশনের সড়ক পরিদর্শককে মারধর করার অভিযোগ উঠেছে একজন ওয়ার্ড কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে। এর প্রতিবাদে নগরের বিএম কলেজ সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এই ঘটনাকে উদ্দেশ্যমূলক দাবি করে পাল্টা আরেকটি সড়কে অবরোধ করেন নগরের ২০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর জিয়াউর রহমান ওরফে বিপ্লবের সমর্থকেরা। এতে বরিশাল শহরে যান চলাচল বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়। প্রায় তিন ঘণ্টার অবরোধ শেষে সন্ধ্যার দিকে পুলিশের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
গত বছরের ১৮ আগস্ট বরিশাল সদর উপজেলা পরিষদের অভ্যন্তরে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী ও সদর আসনের সাংসদ জাহিদ ফারুকের ব্যানার-ফেস্টুন অপসারণ করা নিয়ে মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ সমর্থিত আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এরপর সিটি করপোরেশনের ১০ জন কাউন্সিলর মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর বিপক্ষে অবস্থান নেয় এবং পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী ও জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি জাহিদ ফারুকের সঙ্গে যোগ দেন। জিয়াউর তাঁদের একজন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা ব্যক্তিরা বলেন, বেলা তিনটার দিকে নগরের বিএম কলেজ রোডে বিভাগীয় গণগ্রন্থাগারের সামনে কাউন্সিলর জিয়াউরের কার্যালয় ঘেরাও ও সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভে নামেন সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এ সময় করপোরেশনের ময়লার গাড়ি দিয়ে সড়কে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়। ফলে ওই সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এর প্রতিবাদে ঢাকা–বরিশাল মহাসড়কের সিঅ্যান্ডবি রোডে অবস্থান নেন কাউন্সিলর জিয়াউর রহমানের সমর্থকেরা। এতে যোগ দেন সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন ওয়ার্ডের প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুকের সমর্থক কাউন্সিলর ও তাঁদের অনুসারীরা। ফলে ওই মহাসড়কেও যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
সিটি করপোরেশনের ২০ নম্বর ওয়ার্ডের রোড ইন্সপেক্টর রাজীব হোসেন খান অভিযোগ করে বলেন, ‘রোববার দুপুরে বিএম কলেজ এলাকায় নির্মাণাধীন একটি ভবনের নকশা (প্ল্যান) যাচাই করতে যাওয়ার পর কাউন্সিলর জিয়াউর রহমান আমাকে ফোন দিয়ে নানা কথা বলে স্থানীয় হোসাইনিয়া মাদ্রাসায় ডেকে নেন। এরপর আমাকে আটকে মারধর করেন এবং জানতে চান কেন আমি তাঁকে (কাউন্সিলর) না বলে নকশা যাচাই করতে গেছি। এরপর অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারী এসে আমাকে উদ্ধার করেন। বিক্ষুব্ধ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এরপর কাউন্সিলর জিয়াউরের বিচার দাবিতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন।’
সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা–কর্মচারীদের দিয়ে উদ্দেশ্যমূলকভাবে এসব করানো হচ্ছে বলে অভিযোগ কাউন্সিলর জিয়াউর রহমানের। তিনি বলেন, ‘আমার ওয়ার্ডের একজন ভোটারের নির্মাণাধীন বাড়ির নকশা যাচাই করতে আসবে, কিন্তু সেটা আমাকে জানানো হয়নি। নিয়মানুসারে এটা আমাকে জানানোর কথা। এ জন্য আমি শুধু ওই স্টাফকে ডেকে এনে এটা জিজ্ঞাসা করেছি, মারধর করিনি। এরপর তাঁরা মিথ্যা অভিযোগ তুলে এসে আমার অফিস ঘেরাও করে বিক্ষোভ শুরু করেন। এটা অজুহাত কেবল। এটা আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অংশ। বিষয়টি জানতে পেরে আমার এলাকার মানুষ এই ষড়যন্ত্রের বিচার চেয়ে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। এতে অপর ৯ জন কাউন্সিলরও যোগ দেন।’
এ ব্যাপারে বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) লোকমান হোসেন বলেন, দুই পক্ষ দুটি সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে যান চলাচল স্বাভাবিক করা হচ্ছে।