কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আরফানুল হক রিফাতের বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসায়ীদের পৃষ্ঠপোষকতার অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করা হয়েছে। গণমাধ্যমে তাঁকে নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা। আজ মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কুমিল্লা টাউন হল মিলনায়তনে এই মতবিনিময় হয়। সেখানে এমন দাবি করা হয়।
মেয়র প্রার্থী আরফানুল হক কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। তাঁকে ‘কষ্টিপাথরে যাচাই করে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা মনোনয়ন দিয়েছেন’ বলে মতবিনিময় সভায় দাবি করা হয়।
মতবিনিময় সভায় গণমাধ্যমকর্মীদের উদ্দেশে কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আতিকউল্লাহ বলেন, ‘আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আরফানুলের বিরুদ্ধে মাদক নিয়ে মনোনয়ন পাওয়ার আগে লেখা হয়নি। মনোনয়ন পাওয়ার পর লেখা হয়েছে। ২০১৮ সালের একটি তালিকা নিয়ে ২০২২ সালে প্রতিবেদন করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীর বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসায়ীদের পৃষ্ঠপোষকতার অভিযোগ ভিত্তিহীন, অসত্য। এটা আমরা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছি না। আমাদের প্রার্থী এই অসত্য প্রতিবেদনের বিষয়ে মানহানির মামলা করবেন।’
কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবিদুর রহমান বলেন, ‘পঁচাত্তরের পর খন্দকার মোশতাকের কুমিল্লা টাউন হলের জনসভা ভেঙে দিয়েছেন আজকের মেয়র পদপ্রার্থী আরফানুলসহ দলীয় নেতা-কর্মীরা। তখন সামরিক আদালতে তাঁর সাড়ে তিন বছরের কারাদণ্ড হয়। ১৯৮১ সালে তিনি কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ ছাত্রসংসদের বহিঃক্রীড়া সম্পাদক ছিলেন। ১৯৮২ সালের ১ জানুয়ারি তাঁকে ছাত্রশিবিরের ক্যাডাররা হাত ও পায়ের রগ কেটে দেয়। তাঁর শরীরে জখম করে। তাঁকে তখন ৩৫ ব্যাগ রক্ত দেওয়া হয়। সিঙ্গাপুরে পাঠানো হয় চিকিত্সার জন্য।’ তিনি আরও বলেন, ‘কুমিল্লা সিটি করপোরেশন প্রতিষ্ঠার পর আরফানুল হক ২০১২ ও ২০১৭ সালে মেয়র পদে প্রার্থী ছিলেন। দলীয় ষড়যন্ত্র ও কোন্দলের কারণে তিনি পরপর দুবার দলীয় মনোনয়ন পাননি। এবার তিনি মেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন। কষ্টিপাথরে যাচাই করে নেত্রী মনোনয়ন দিয়েছেন। তাঁর মনোনয়ন পাওয়ার পর পত্রিকায় তাঁর বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসায়ীদের পৃষ্ঠপোষকতার অভিযোগ আনা হয়। এ অভিযোগ ভিত্তিহীন।’
মতবিনিময় সভায় বক্তব্য দেন কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবিদুর রহমান ও আতিকউল্লাহ। এ সময় উপস্থিত ছিলেন কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক চিত্তরঞ্জন ভৌমিক ও আবদুল হাই, মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্য হেলাল উদ্দিন আহমেদ, মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক জি এস সহিদ, আদর্শ সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আমিনুল ইসলাম, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাদেকুর রহমান ও মহানগর ছাত্রলীগের আহ্বায়ক আবদুল আজিজ সিহানুক।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, গত শুক্রবার আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি মনোনয়ন বোর্ড আরফানুল হককে মেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন দেওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁর মাদকসংশ্লিষ্টতা নিয়ে বিভিন্নজন পোস্ট দেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের করা একটি তালিকা ছড়িয়ে পড়ে। গণমাধ্যমে এ নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হয়।
২০১৮ সালের ৯ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে চট্টগ্রাম বিভাগের কয়েকটি জেলায় মাদক চোরাকারবারি, তাদের পৃষ্ঠপোষক ও জড়িত ব্যক্তিদের সম্পর্কে বিশেষ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের তৎকালীন যুগ্ম সচিব (পরিচালক-১২) ফরিদ আহাম্মদ বিষয়টি যাচাই-বাছাই করে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব ও জননিরাপত্তা বিভাগের সচিবকে চিঠি দেন। চিঠিতে তিনি ১৫ পাতার তালিকাটি যুক্ত করে দেন। ওই তালিকায় চট্টগ্রাম বিভাগের কুমিল্লা জেলার ১৬ জনের নাম ছিল। এই ১৬ জনের মধ্যে প্রথম নামটি আরফানুলের।
জানতে চাইলে মেয়র প্রার্থী আরফানুল হক বলেন, ‘এই অভিযোগ ভিত্তিহীন। এ ঘটনায় মানহানির মামলা করব।’