কলকারখানার শহরে তিনি গাছের ফেরিওয়ালা
২৫ বছর ধরে নিজের জমিতে নার্সারির ব্যবসা করছেন গাজীপুরের শ্রীপুরের কেওয়া পশ্চিমখণ্ড গ্রামের হেলাল উদ্দিন। সময়ের পরিবর্তনে নার্সারির আকার ছোট হয়েছে। তবে গাছের চারা বিক্রির পেশা ছাড়েননি। তিনি এখন শহরে গাছের ফেরিওয়ালা।
হেলাল উদ্দিন বলেন, গাছের প্রতি তাঁর একটা দুর্বলতা ও মায়া কাজ করে। সেই মায়া থেকেই এখনো গাছের চারা উৎপাদন ও বিক্রির কাজে নিজেকে ব্যস্ত রেখেছেন। শ্রীপুর শিল্পাঞ্চলের সবচেয়ে ব্যস্ততম মাওনা চৌরাস্তার ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক, শ্রীপুর-ফুলবাড়িয়ার আঞ্চলিক সড়কসহ আশপাশের গলিতে গলিতে তাঁর দেখা মেলে প্রায় প্রতিদিন। একটি ভ্যানগাড়িতে গাছের চারার পসরা সাজিয়ে সারা শহরে ফেরি করে বেড়ান তিনি। গাছের পসরা সাজিয়ে বেরিয়ে পড়েন সকাল ১০টার মধ্যে। পুরো শহর ঘুরে এসে সময় থাকলে বিকেলে আবারও বের হন। এতে প্রতিবার হাজার খানেক টাকার গাছের চারা বিক্রি হয় তাঁর।
হেলাল উদ্দিনের বয়স ৫২ বছর। চার মেয়ে তাঁর। গাছ বিক্রি করে যে আয়, তা দিয়েই চলে তাঁর সংসার।
গতকাল শুক্রবার বিকেলে হেলাল উদ্দিনকে পাওয়া গেল কেওয়া পূর্বখণ্ড গ্রামে। নিজের ছোট্ট ভ্যানগাড়িতে বিভিন্ন ছোট-বড় গাছের চারা ভর্তি করে ফেরি করছিলেন সেখানে। তাঁর ভ্যান গাড়িতে আছে পেঁপে, মরিচ, বেগুন, চায়না কমলা, আম, জাম, লিচুসহ বিভিন্ন চারা। বলেন, ২৫ বছর ধরে তিনি গাছের চারা বিক্রি করছেন। কেওয়া পূর্বখণ্ড গ্রামে নিজের এক বিঘা জমিতে ২০০৭ সালে নার্সারি গড়ে তোলেন তিনি। এরপর ২০১০ সালের দিকে মাওনা চৌরাস্তা ও এর আশপাশজুড়ে কারখানা গড়ে ওঠে। সেখানে পড়ে থাকা জায়গার চাহিদা বেড়ে যায়। ফলে নার্সারির ব্যবসার চেয়ে বেশি লাভজনক হয়ে ওঠে ঘর ভাড়া। কিন্তু তিনি তখন জমিটুকু নার্সারির কাজে ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নেন। কারণ, গাছপালা নিয়ে থাকতে তাঁর ভালো লাগে।
হেলাল উদ্দিন বলেন, অর্থনৈতিক টানাপোড়েন শুরু হলে অনেকটা বাধ্য হয়েই নার্সারির কিছু অংশ টিন দিয়ে ঘর তৈরি করে সেগুলো ভাড়া দেন। এর কিছুদিন পর নার্সারির বেশির ভাগজুড়েই ঘর তোলেন। বাকি অংশে বর্তমানে তিনি বিভিন্ন গাছের চারা উৎপাদন করছেন। আগে নার্সারি থেকে লোকজন গাছ কিনে নিয়ে যেতেন। এখন সবাই সবকিছু সহজে পেতে চায়। তাই মানুষের দোরগোড়ায় গাছের চারা নিয়ে যাওয়ার জন্য তিনি ভ্যান কিনেছেন।
হেলাল উদ্দিনের কাছ থেকে পাঁচটি পেঁপের চারা দশ টাকা করে কিনেছেন মো. এমদাদুল হক। তিনি বলেন, সাত থেকে আট বছর ধরে তিনি হেলালের কাছ থেকে বিভিন্ন ধরনের চারা কেনেন।
মরিচের চারার ক্রেতা মোছা. আমিনা বেগম বলেন, বাসায় যাওয়ার সময় সড়কের পাশে ভ্যানগাড়িতে চারা দেখতে পেয়ে সেখান থেকে কিনেছেন তিনি। তিনি বলেন, শহর এলাকায় নার্সারি নেই। তাই কারও বাড়ির পাশে খোলা জায়গা কিংবা ছাদে গাছ লাগানোর জন্য চারা সংগ্রহ করা কঠিন। কিন্তু ইদানীং শহরের অলিগলিতে গাছের চারা বিক্রির বিষয়টি যুগোপযোগী। গাছপ্রেমীদের জন্য এটি সহায়ক বলে মনে করেন তিনি।
সব শেষে ফেরার সময় হেলাল উদ্দিন বলেন, গাছের চারা বিক্রির পেশাটা তাঁর ভীষণ ভালো লাগে। এই বয়সে নিজেকে গাছের পরিচর্যায় ব্যস্ত রাখতে পারছেন বলেই তিনি এখনো শারীরিকভাবে ভালো আছেন। জানিয়েছেন, পুরো এলাকা যতই আধুনিক হোক; তিনি গাছের চারা বিক্রি ছাড়বেন না।