২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

কর্ণফুলীতে চিহ্নিত হলো একাত্তরের গণকবর

চট্টগ্রামের কর্ণফুলীতে গনকবর চিহ্নিত ও পরিদর্শনে ্রউপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা। রোববার দুপুরে মরিয়ম আশ্রমে।
ছবি: সংগৃহীত

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের ৫০ বছর পর চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলায় একটি গণকবর চিহ্নিত হয়েছে। ওই গণকবরে পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের এ দেশীয় দোসরদের হাতে গণহত্যার শিকার ছয়জনকে সমাহিত করা হয়েছিল। তাঁরা সবাই  হিন্দুধর্মাবলম্বী ও জেলে সম্প্রদায়ের মানুষ। মরিয়ম আশ্রমের (মা মারিয়া) তৎকালীন ধর্মযাজক ব্রাদার ফ্লিভিয়ান গণহত্যার স্থান থেকে লাশগুলো এনে খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের সমাধিস্থলের এক পাশে সমাহিত করেন।
অর্ধশত বছর ধরে এই হত্যাকাণ্ড ও গণকবরের বিষয়ে এলাকাবাসী জানলেও এত দিন প্রশাসনিক জটিলতার কারণে আনুষ্ঠানিকভাবে চিহ্নিত করা যায়নি। রোববার একজন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে নিয়ে গণকবরটি পরিদর্শন করে চিহ্নিত করেন কর্ণফুলী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফারুক চৌধুরী, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহিনা সুলতানা, সহকারী কমিশনার (ভূমি) সুকান্ত সাহা ও বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ সাহাদুল হক।

উপজেলা প্রশাসন ও মুক্তিযোদ্ধারা জানান, ১৯৭১ সালের মে মাসে বড় উঠান এলাকার শাহমীর মাজারের পশ্চিমে আসকর মিয়াজি মসজিদের পাশে ফিরিঙ্গি পাড়াসংলগ্ন এলাকায় ছয়জন হিন্দু ও তিনজন মুসলমানকে হত্যা করে লাশ ফেলে রাখে পাকিস্তানি বাহিনী। ওই হত্যাকাণ্ডের পর সেখানে গিয়েছিলেন মুক্তিযোদ্ধা এম এন ইসলাম, নুর হোসেন, সাহাদুল হক ও প্রয়াত আমির আহমদ।
প্রত্যক্ষদর্শীদের মধ্যে যাঁরা বেঁচে আছেন, তাঁদের ভাষ্য অনুযায়ী, হত্যাকাণ্ডের দিন জুলধা এলাকার মুসলিম পরিবারের তিনজনকে নিয়ে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করেন। তবে ভয়ে লাশ নিতে পারেননি হিন্দু সম্প্রদায়ের ছয়জনের স্বজনেরা। ওই দিনই বিকেলে মরিয়ম আশ্রমের তৎকালীন ব্রাদার ফ্লিভিয়ান লাশগুলো উদ্ধার করে খ্রিষ্টানদের সমাধির পাশে সমাহিত করেন। গণকবরটি ঘটনাস্থলের আনুমানিক ৫০০ ফুট দূরত্বে অবস্থিত।

কর্ণফুলী উপজেলা সদর থেকে চার কিলোমিটার দূরে এই গণকবরের অবস্থান। দেয়াং পাহাড় এলাকার খ্রিষ্টানপল্লির মরিয়ম আশ্রমের সমাধির পাশেই সবুজ গাছগাছালি ঘেরা নিরিবিলি স্থানে সমাহিত করা হয়েছে ছয় শহীদকে।


একাত্তরের মে মাসের ওই গণহত্যার পরপরই হত্যাকাণ্ডের স্থানটি ঘুরে আসা বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ সাহাদুল হক প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন। মে মাসে ঠিক কোন দিন এই ঘটনা ঘটেছে, সে বিষয়ে সুস্পষ্ট বলতে পারেননি। তবে ঘটনার পূর্বাপর সবই মনে আছে তাঁর। তিনি বলেন, ঘটনার দিন দুপুরে মেরিন একাডেমি ক্যাম্প থেকে পাকিস্তানি বাহিনী এসে এ হত্যাযজ্ঞ চালায়। স্থানীয় রাজাকারেরা তাদের সহযোগী ছিল। তিনি আরও বলেন, ‘২০১৪ সালে আমরা গণকবরটি চিহ্নিত করে সংরক্ষণের জন্য আবেদন করেছিলাম। তখন একবার পরিদর্শনও হয়েছিল। কিন্তু প্রশাসনিক জটিলতায় বেশি দূর এগোনো যায়নি। দীর্ঘদিন পর হলেও গণকবরটি চিহ্নিত হওয়ায় আমরা আনন্দিত।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ছয় শহীদকে সমাহিত করা ব্রাদার ফ্লিভিয়ান ছিলেন মরিয়ম আশ্রমের (মা মারিয়া) প্রতিষ্ঠাতা। বিদেশি এই নাগরিক মারা যান ২০০৪ সালে। তবে গণকবরে শুয়ে থাকা ছয় শহীদের স্বজনদের পরিচয় জানতে পারেনি প্রশাসন।
ইউএনও শাহিনা সুলতানা বলেন, ‘আমরা চিহ্নিত গণকবর সংরক্ষণের জন্য প্রশাসনিক কার্যক্রম শুরু করব। শহীদদের পূর্ণাঙ্গ পরিচয় জানারও চেষ্টা হচ্ছে। কর্ণফুলী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফারুক চৌধুরী বলেন, ‘দীর্ঘদিন পর হলেও গণকবরটি চিহ্নিত হচ্ছে। আমরা নিহত ব্যক্তিদের খোঁজ নিয়ে পরবর্তী ব্যবস্থার জন্য এগোব।’