করোনায় আক্রান্ত বাবাকে বাঁচাতে তরুণীর একাকী লড়াই
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করোনায় সংক্রমিত হয়ে চিকিৎসাধীন আবদুল মালেককে (৬০) বাঁচাতে একা লড়ে যাচ্ছেন তাঁর মেয়ে আইরিনা খাতুন (১৯)। তবে পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হাসপাতালে রেখে এই লড়াইয়ে অর্থের জোগান কীভাবে করবেন, এ নিয়ে দুশ্চিন্তার শেষ নেই তাঁর।
আইরিনা জানালেন, প্রথমে বাবার, পরে মায়ের করোনা শনাক্ত হয়। মায়ের করোনা নেগেটিভ হয়েছে। তবে বাবা হাসপাতালে থাকায় তিনি আর বাড়ি যেতে পারেননি। করোনা–পরবর্তী জটিলতায় তাঁর অবস্থা বেশ কাহিল। বাবার ফুসফুসের ৭৫ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন। খেতে না পারাসহ অন্য জটিলতাও আছে। চিকিৎসকেরা তাঁর বাবাকে আইসিইউতে নিতে বলেছিলেন। তবে সেখানে শয্যা খালি না থাকায় ওয়ার্ডে রেখেই চিকিৎসা চলছে। এরই মধ্যে প্রায় ৬০ হাজার টাকার ওষুধ লেগেছে বলে তাঁর দাবি।
আইরিনাদের বাড়ি রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার কিশোরপুর গ্রামে। তাঁর বাবা আবদুল মালেক, মা মহসিনা বেগম ও এক ভাইকে নিয়ে আইরিনাদের পরিবার। তিনি দুর্গাপুর উপজেলার দাউকান্দি কলেজের সম্মান প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। তাঁর বাবা ছোট একটি মুদির দোকান চালান। সেটিই তাঁদের পরিবারের আয়ের একমাত্র উৎস। বাবা অসুস্থ হয়ে পড়ার পর থেকে দোকানটি বন্ধ। ছোট ভাইটিও তাঁর সঙ্গে হাসপাতালে দৌড়াদৌড়ি করছে।
আইরিনার ভাষ্য, তিনি হাসপাতালে অসচ্ছল রোগীদের আর্থিক সহায়তার জন্য থাকা সমাজসেবার শাখায় যোগাযোগ করেন। সেখান থেকে এক দিন মাত্র দুই হাজার টাকার ওষুধ কিনে দেওয়া হয়েছে। এরপর আর কোনো সহায়তা তাঁরা পাননি। তারা সব ওষুধ কিনে দেয় না, হাসপাতাল থেকে যেসব ওষুধ পাওয়ার কথা, সেগুলো বাদ দিয়ে দেয়।
আইরিনার অভিযোগ, সমাজসেবার লোকজন তালিকা দেখে যে ওষুধগুলো বাদ দিয়েছেন, সেগুলো তাঁকে কিনতে হচ্ছে। হাসপাতাল থেকে দেওয়া হচ্ছে না। সাধারণ স্যালাইনটাও বাইরে থেকে কিনতে হয়। চিকিৎসার খরচ জোগাতে যখন হিমশিম অবস্থা, তখন আইরিনা রাজশাহীর জেলা প্রশাসকের কাছে যান। গত ২৯ জুন জেলা প্রশাসক মো. আবদুল জলিল তাঁকে ৬০ হাজার টাকা দেন। চিকিৎসার বিষয়ে পরবর্তী সময়ে তাঁদের কোনো সমস্যা হলে পাশে থাকার আশ্বাস দেন।
আইরিনা খাতুন জানালেন, তাঁদের বাড়িতে একটি টিয়া পাখি আছে। হাসপাতাল থেকে পাঁচ দিন পর ফিরে দেখেন, পাখিটি খাবার না পেয়ে মৃতপ্রায় অবস্থা। মা–বাবার করোনার কথা শুনে প্রতিবেশীরা কেউ তাঁদের বাড়িতে আসেন না, পাখিটিকে কেউ একটু খাবারও দেননি। প্রিয় বাবা, প্রিয় পাখি, করোনার থাবায় আর্থিক অনিশ্চয়তা—সব মিলিয়ে দিশেহারা অবস্থা আইরিনার।