করোনার থাবায় নিঃস্ব দুধ ব্যবসায়ীরা

করোনার পর প্রতিকূল পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার মতো আর্থিক সক্ষমতা ছোট প্রতিষ্ঠান ও সাধারণ দুধ ব্যবসায়ীদের নেই।

বন্ধ হয়ে গেছে পাবনার অনেক দুধ ব্যবসায়ীর শীতলীকরণকেন্দ্র ও প্রক্রিয়াজাতকারী কারখানা। সাঁথিয়ার আমাইকোলা গ্রামে।

পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার আমাইকোলা গ্রামে সরকারি অনুমোদন নিয়ে ‘তানিয়া ডেইরি অ্যান্ড ফুড প্রোডাক্ট’ নামের একটি দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাতকারী কারখানা স্থাপন করেন মাসুদ শেখ। এতে বিনিয়োগ করেছিলেন দুই কোটি টাকার বেশি। কারখানা থেকে ভালোই আয় হতো। কিন্তু করোনার প্রভাবে বিধিনিষেধ দেওয়ার পর থেকে লোকসান হতে শুরু করে। এভাবে ৬০ থেকে ৭০ লাখ টাকা লোকসান হয়ে যাওয়ার পর কারখানাটি বন্ধ করে দিতে বাধ্য হন মাসুদ শেখ।

মাসুদ বলেন, তাঁর কারখানায় ৪০ জনের মতো কর্মকর্তা-কর্মচারী কাজ করতেন। স্থানীয় খামারিদের কাছ থেকে প্রতিদিন প্রায় পাঁচ হাজার লিটার দুধ সংগ্রহ করে তা প্যাকেটজাত করার পর ঢাকার বাজারে সরবরাহ করতেন তিনি। এখন বিশাল অঙ্কের ঋণের বোঝা নিয়ে আর্থিক কষ্টে দিন কাটছে তাঁর। একই সঙ্গে কারখানার কর্মকর্তা-কর্মচারী বেকার হয়ে পড়েছেন। যে আড়াই শতাধিক খামারি এ কারখানায় দুধ সরবরাহ করতেন, তাঁরাও বিপাকে পড়েছেন। মাসুদ শেখ বলেন, ‘নগদ লোকসান হয়েছে ৬০ থেকে ৭০ লাখ টাকা। এ ছাড়া কারখানার যন্ত্রগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। করোনার থাবায় আমার মতো শতাধিক দুধ ব্যবসায়ী নিঃস্ব।’

পাবনার অনেক দুধ ব্যবসায়ীর অবস্থা এখন মাসুদ শেখের মতো। খামারি ও দুধ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বেড়া, সাঁথিয়া, ফরিদপুর, ভাঙ্গুড়া, চাটমোহর উপজেলা নিয়ে গড়ে উঠেছে দেশের প্রধান গরুর দুধ উৎপাদনকারী এলাকা। সারা দেশে সরকার অনুমোদিত ১৪টি দুধ সংগ্রহ ও প্রক্রিয়াজাতকারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এগুলোর বেশির ভাগেরই এই এলাকায় দুধ সংগ্রহকেন্দ্র রয়েছে। এর মধ্যে ইছামতী ডেইরি অ্যান্ড ফুড প্রোডাক্ট (পিওরা মিল্ক) ও তানিয়া ডেইরি অ্যান্ড ফুড প্রোডাক্ট (সেইফ মিল্ক) নামের প্রতিষ্ঠান দুটি ছিল স্থানীয় উদ্যোক্তাদের।

ইছামতী ডেইরির মালিক আবদুর রউফ জানান, তাঁর কারখানায় করোনার আগে ৫০ জন শ্রমিক ছিলেন। প্রতিদিন ঢাকায় দুধ পাঠানো হতো প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার লিটার। অথচ এখন প্রতিদিন সাত থেকে আট শ লিটার দুধই পাঠানো যাচ্ছে না। ৫০ জনের জায়গায় কারখানায় এখন কাজ করেন ১২ থেকে ১৫ জন। ইতিমধ্যেই তাঁর ৫০ লাখ টাকার বেশি লোকসান হয়েছে। কারখানা বন্ধ করে দেওয়ার কথা ভাবছেন তিনিও।

মাসুদ শেখ ও আবদুর রউফ বলেন, ঢাকায় তাঁদের বাজারজাত করা দুধের বাজারও তৈরি হয়েছিল। কিন্তু করোনার কারণে অনেক লোক ঢাকা ছেড়ে চলে যাওয়ায় ওই বাজার হারান তাঁরা। পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও হারানো বাজার তাঁরা আর ফিরে পাননি। করোনার প্রভাবে সৃষ্ট প্রতিকূল পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার মতো আর্থিক সক্ষমতা বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর থাকলেও তাঁদের মতো ছোট প্রতিষ্ঠান ও সাধারণ দুধ ব্যবসায়ীদের নেই।

দুধ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে আরও জানা যায়, বেড়া, সাঁথিয়াসহ পাবনার বিভিন্ন উপজেলায় কয়েক শ সাধারণ দুধ ব্যবসায়ী রয়েছেন। তাঁদের মতো শতাধিক ব্যবসায়ী পুঁজি হারিয়ে এ ব্যবসা বন্ধ করে দিয়েছেন।

বেড়া পৌর এলাকার বৃশালিখা মহল্লার আবু সাঈদ বলেন, বেড়া ও সাঁথিয়ার বিভিন্ন স্থানে দুধ সংগ্রহের জন্য তাঁর অনেক শীতলীকরণকেন্দ্র ছিল। খামারি ও ছোট দুধ ব্যবসায়ীদের কাছে অগ্রিম টাকা দেওয়া ছিল। লকডাউনে (বিধিনিষেধ) দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় শীতলীকরণকেন্দ্রের যন্ত্রগুলো নষ্ট হয়ে যায়। এ ছাড়া অগ্রিম দেওয়া টাকাগুলোও আর ফেরত পাওয়া যায়নি। প্রায় ৩০ লাখ টাকা লোকসান হওয়ার পর দুধের ব্যবসা বাদ দিয়েছেন।

পাবনার ফরিদপুর, সাঁথিয়া ও বেড়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা পদে দায়িত্ব পালন করছেন জহুরুল ইসলাম। তিনি বলেন, করোনার কারণে খামারি ও দুধ ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তিনি এ বিষয়ে খোঁজ নেবেন।