করোনাকালে ‘ই-প্রতিবেশী’ মোহাম্মদ আলীরা

একটি ফেসবুক পেজে প্রয়োজনীয় পণ্যের চাহিদার কথা জানান করোনায় আক্রান্তসহ ঘরবন্দী মানুষ। সে পণ্য ঘরে ঘরে পৌঁছে দেয় ‘ই-প্রতিবেশী’।

দিনাজপুরে করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয় গত বছরের ১৪ এপ্রিল। পরের দিন থেকে মানুষ ও যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে জেলা প্রশাসন। সেই থেকে এখন পর্যন্ত মানুষের চাহিদা অনুযায়ী দৈনন্দিন বাজার সামগ্রী, ওষুধ, ইলেকট্রনিক মিস্ত্রি ঠিক করা, বিদ্যুৎ বিল দেওয়া, কুরিয়ার করা, গৃহশিক্ষক ঠিক করে দেওয়া, এমনকি ব্যাংক থেকে টাকা জমা ও উত্তোলন করে দেওয়ার কাজও করছে ‘ই-প্রতিবেশী’।

দিনাজপুর শহরের বালুবাড়ি এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ আলী (৩১) ‘ই-প্রতিবেশী’র পরিচালক। করোনাকালে এ প্রতিষ্ঠানের ফেসবুক পেজে যোগাযোগ করে পণ্যের চাহিদার কথা জানালে তা বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার কাজ করেন। এই পেজের অনুসারী সংখ্যা এখন ১০ হাজারের বেশি। সরবরাহকারী কর্মী আছেন ২০ জন। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত সাইকেল কিংবা মোটরসাইকেলে মানুষের প্রয়োজনে ছুটছেন তাঁরা। জেলা শহরের পাশাপাশি আশপাশের উপজেলা শহরেও পণ্য পৌঁছে দেওয়ার কাজ করেন এ প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা।

করোনাকালের আগে শহরের মডার্ন মোড় এলাকায় ম্যাথ ক্লাব নামের একটি সংগঠন পরিচালনা করতেন মোহাম্মদ আলী। ওই ক্লাবে তৃতীয় থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের ভিড় লেগে থাকত। নিজেরাই সময় করে গণিত ও বিজ্ঞান বিষয়ের সমাধান করত। ক্লাবের সদস্যসংখ্যা ছিল দুই শতাধিক। প্রতি সদস্য বার্ষিক ফি দিত। তবে করোনা পরিস্থিতিতে ক্লাবের কর্মকাণ্ড বন্ধ হওয়ায় আয়–রোজগার বন্ধ হয় মোহাম্মদ আলীর। ক্লাব পরিচালনার পাশাপাশি স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবক হিসেবেও অনেকের কাছে পরিচিত তিনি। এ পরিচিতিকেই কাজ লাগিয়ে মোহাম্মদ আলী চালু করেন ‘ই-প্রতিবেশী’। বর্তমানে ম্যাথ ক্লাবটি ‘ই-প্রতিবেশী’র কার্যালয়। তৈরি করা হয়েছে গ্রাহকদের তথ্যভান্ডার। অফিসে সার্বক্ষণিক সেবাগ্রহীতাদের অর্ডার নেওয়ার কাজ করেন দুজন কর্মী।

মোহাম্মদ আলী জানান, প্রতিদিন গড়ে দুই শর বেশি পরিবারের কাছে থেকে চাহিদা আসে। প্রতি সেবার বিনিময়ে সর্বনিম্ন ৩০ থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত (দূরত্বভেদে) ফি নেওয়া হয়। দোকান থেকে পণ্য নিয়ে তা গ্রাহকের কাছে পৌঁছে দেন প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা। এরপর গ্রাহক মূল্য পরিশোধ করেন।

শুরু থেকে পণ্য সরবরাহকারী হিসেবে কাজ করছেন আবদুর রহিম। রংপুরে একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে খাদ্য ও পুষ্টিবিজ্ঞান বিষয়ে পড়াশোনা করছেন। তিনি বলেন, পণ্য পৌঁছানো বাবদ যা পান, তা দিয়ে নিজের খরচ চলে যায়।

গত দেড় বছরে ৭ হাজার ৮০০ গ্রাহককে সেবা দিয়েছে ‘ই-প্রতিবেশী’। প্রতিষ্ঠানটি থেকে সেবা নিয়েছেন এমন একজন গ্রাহক শহরের সুইহারি এলাকার বাসিন্দা প্রিয়াঙ্কা বর্মণ বলেন, চলতি বছরের মার্চে তিনিসহ পরিবারের চারজন সদস্য করোনায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। ওষুধ এনে দিতে পারেন, এমন কেউ ছিল না। পরে ফেসবুকে ই-প্রতিবেশীর সন্ধান পান। ফোন করলে প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা ওষুধ পৌঁছে দিতেন। এখনো কাঁচাবাজার থেকে শুরু করে প্রতিটি প্রয়োজনে ই-প্রতিবেশীকে পাশে পাওয়া যায়।