করোনা সন্দেহে ফেলে গেল বাসস্ট্যান্ডে, দেখেও কাছে ঘেঁষলেন না কেউ
করোনাভাইরাসের আতঙ্কে ঢাকা থেকে রংপুরে পরিবারের কাছে ফিরছিলেন শ্রমজীবী এক ব্যক্তি। গতকাল শনিবার রাতে পণ্যবাহী ট্রাকে রওনা দেন তিনি। পথে শুরু হয় শ্বাসকষ্ট ও কাশি। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত সন্দেহে আজ রোববার ভোররাতে তাঁকে ট্রাক থেকে ফেলে যাওয়া হয় বগুড়ার শিবগঞ্জের মহাস্থান বাসস্ট্যান্ডে। তাঁকে সেখানে অসহায় অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেও কেউ এগিয়ে আসেননি। পরে পুলিশের সহায়তায় তাঁর ঠাঁই হয় হাসপাতালে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, মহাস্থান বাসস্ট্যান্ডের রাস্তার পাশে প্রচণ্ড শ্বাসকষ্টে ভুগতে থাকা এক ব্যক্তি পড়ে ছিলেন সকালে। তিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারেন সন্দেহে কেউ তাঁর কাছে ঘেঁষেননি। সকাল সাড়ে নয়টার দিকে সেলিম উদ্দিন নামে স্থানীয় এক সাংবাদিক রাস্তার পাশে একজনকে পড়ে থাকতে দেখে প্রশাসনে খবর দেন।
শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আলমগীর কবির দ্রুত ব্যবস্থা নিতে বলেন স্থানীয় রায়নগর ইউনিয়নের (ইউপি) চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলামকে। ইউপি চেয়ারম্যান নিজে না গিয়ে পুলিশকে জানান। পরে শিবগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক মোহাম্মদ আলীসহ তিন পুলিশ সেখানে যান। তাঁরা একজন ভ্যানচালককে ডেকে সকাল সোয়া ১০টার দিকে তাঁকে শিবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠান।
শিবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ওই ব্যক্তির বাড়ি রংপুর শহরে। প্রাথমিক উপসর্গ দেখে মনে হয়েছে, তিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত নন। আগে থেকেই তাঁর অ্যাজমা ও বক্ষব্যাধির সমস্যা ছিল। প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পর উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে অ্যাম্বুলেন্সে করে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
রায়নগর ইউপি চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘করোনাভাইরাসে আক্রান্ত সন্দেহে ওই ব্যক্তির কাছে কেউ যেতে চাননি। আমি অন্য কাজে ব্যস্ত থাকায় একজনকে সেখানে পাঠিয়েছিলাম। তাঁর মাধ্যমে জেনেছি, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত সন্দেহে ওই ব্যক্তিকে ট্রাক থেকে ভোররাতে নামিয়ে দেওয়া হয়।’
স্থানীয় সাংবাদিক সেলিম উদ্দিন বলেন, মহাস্থান বাসস্ট্যান্ডে অনেকে ছিলেন। কিন্তু ভয়ে কেউ তাঁর কাছে যাননি। বিষয়টি পুলিশকে জানানো হলে তারা ঘটনাস্থলে এসে নিজেরা হাত লাগাননি। একটা ভ্যান ডেকে ওই ব্যক্তিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠিয়ে দেন।
ইউএনও আলমগীর কবির বলেন, ওই ব্যক্তি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আইসোলেশন ঘোষণা করা বগুড়ার মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে যোগাযোগ করেন তিনি।
মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা শফিক আমিন বলেন, ‘ওই রোগীকে প্রথমে শিবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠানো হয়। তাই তাঁর ব্যাপারে সেখানকার আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করি। তিনি জানান যে করোনাভাইরাসে নয়, ওই ব্যক্তি অ্যাজমা ও হৃদরোগে আক্রান্ত। এ কারণে তাঁকে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।’