করোনা রোগীর স্বজনেরা ‘অবাধে’ বাইরে যাচ্ছেন

চলতি মাসের প্রথম পাঁচ দিনে মাগুরা জেলায় নমুনা পরীক্ষায় ১৯১ জন করোনা শনাক্ত হয়েছেন।

করোনা সন্দেহে তাপমাত্রা পরীক্ষার প্রতীকী ছবি।

মাগুরা ২৫০ শয্যার সদর হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে দুদিন ধরে ভর্তি শালিখা উপজেলার শহিদুল ইসলামের স্ত্রী। দুই ছেলে নিয়ে হাসপাতালেই অবস্থান করছেন শহিদুল। ওষুধ বা খাবার কেনা থেকে শুরু করে নানা কাজে হাসপাতালের বাইরে যাচ্ছেন ওই পরিবারের একাধিক সদস্য।

গতকাল মঙ্গলবার হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়, করোনা রোগীদের স্বজনেরা অবাধে চলাচল করছেন। হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের এক বা একাধিক স্বজন ওয়ার্ডে অবস্থান করছেন। গতকাল শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘হাসপাতালের এখানে–ওখানে বসে রাত কাটাচ্ছি। সাবধানতা অবলম্বন করলেও ওষুধ, পানি ও খাবার আনতে বাইরে তো যেতেই হচ্ছে।’

হাসপাতালের পুরোনো ভবনে করোনা আইসোলেশন ওয়ার্ডেও মানুষের অবাধ যাতায়াত লক্ষ করা গেছে। এতে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ছে।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অবশ্য বলছে, রোগীর সঙ্গে একজনের বেশি স্বজন থাকার সুযোগ নেই। করোনা ওয়ার্ডে মানুষের যাতায়াত নিয়ন্ত্রণ করতে গেট বন্ধ রাখা হয়। তাঁরা যেন বাইরে না যান। সে বিষয়েও নিয়মিত তদারকি করছেন নার্সরা। তবে মানুষের সচেতনতার কমতি থাকায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

হাসপাতালের নতুন ভবনের পঞ্চম ও ষষ্ঠ তলায় ৫০ শয্যার করোনা ওয়ার্ড রয়েছে। আর সন্দেহভাজন রোগীদের জন্য হাসপাতালের পুরোনো ভবনে রয়েছে আইসোলেশন ওয়ার্ড। গতকাল হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে ভর্তি ছিলেন ৪৫ জন রোগী। আর আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি ৪১ জন।

হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের কার্যালয় সূত্র বলছে, করোনা ওয়ার্ডে হাসপাতালের কেন্দ্রীয় অক্সিজেন ব্যবস্থার মাধ্যমে অক্সিজেন সরবরাহ করা হচ্ছে। আর হাসপাতালের অন্যান্য ওয়ার্ডের জন্য ছোট–বড় দেড় শতাধিক অক্সিজেন সিলিন্ডার মজুত রয়েছে। এ ছাড়া ছয়টি হাই ফ্লো নাজাল ক্যানুলা রয়েছে জেলা সদরের এই হাসপাতালে।

জানতে চাইলে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক চিকিৎসক স্বপন কুমার কুন্ডু বলেন, আইসিইউ ব্যবস্থা না থাকায় জটিল রোগীদের অন্য হাসপাতালে পাঠাতে হচ্ছে। করোনার দ্বিতীয় ধাক্কায় হাসপাতালে ভর্তি অবস্থায় দুজন করোনা রোগীর মৃত্যু হয়েছে। হাসপাতালে রোগীর চাপ এখনো সহনীয় পর্যায়ে আছে। তবে সংক্রমণ বাড়তে থাকলে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে।

মাগুরা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, জুন মাসের শুরু থেকে জেলায় করোনা সংক্রমণের হার ক্রমেই বাড়ছে। মে মাসে জেলায় ৬০৫টি নমুনার মধ্যে করোনায় সংক্রমিত রোগী ছিলেন ৩৪ জন। সংক্রমণ ৫ শতাংশের একটু বেশি। সেখানে জুন মাসে সংক্রমণ দাঁড়িয়েছে ৩০ শতাংশ। জুনে ১ হাজার ৮৪টি নমুনার মধ্যে ৩১৯ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। একই রকম ঊর্ধ্বগতি লক্ষ করা যাচ্ছে জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহেও। চলতি মাসের প্রথম পাঁচ দিনে জেলায় ১৯১ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন।

গতকাল পর্যন্ত জেলায় করোনায় সংক্রমিত হয়ে মারা গেছেন ৩১ জন। এর মধ্যে জুন ও চলতি জুলাইয়ের প্রথম পাঁচ দিনে মারা গেছেন সাতজন। পরিস্থিতি বিবেচনায় হাসপাতালে শয্যাসংখ্যা বাড়ানোর পাশাপাশি নানা রকম প্রস্তুতি নিচ্ছে স্বাস্থ্য বিভাগ। এর অংশ হিসেবে মহম্মদপুর, শ্রীপুর ও শালিখা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রতিটিতে করোনা ওয়ার্ডে শয্যার সংখ্যা ৫ থেকে বাড়িয়ে ১০ করা হয়েছে।