২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

কমিটি-বাণিজ্যের অভিযোগ, বরিশাল জেলা ছাত্রদলের সভাপতির পদ স্থগিত

বরিশাল জেলা ছাত্রদলের সভাপতি মাহফুজুল আলম
সংগৃহীত

বরিশাল জেলা ছাত্রদলের সভাপতি ও কেন্দ্রীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক মাহফুজুল আলম মিঠুর সাংগঠনিক সব পদ সাময়িক স্থগিত করেছে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটি। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় নেতারা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সহদপ্তর সম্পাদক আজিজুর রহমান এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। একই সঙ্গে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত জেলা ছাত্রদলের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি তারেক আল ইমরানকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি ফজলুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেনের নির্দেশে বরিশাল জেলা ছাত্রদলের সভাপতি মাহফুজুল আলমের বিরুদ্ধে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার সুস্পষ্ট অভিযোগ থাকায় তাঁর বিরুদ্ধে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

আগের কমিটি গঠনের সাত বছর পর ২০১৮ সালের ১৯ আগস্ট বরিশাল জেলা ও নগর ছাত্রদলের আংশিক কমিটি ঘোষণা করে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটি। ঘোষিত ওই কমিটিতে বরিশাল জেলা ছাত্রদলের কমিটিতে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক করা হয় যথাক্রমে মাহফুজুল আলম ও কামরুল হাসানকে। এ ছাড়া জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি করা হয় তারেক আল ইমরান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তৌফিকুল ইসলাম ও সাংগঠনিক সম্পাদক করা হয় সোহেল রাঢ়ীকে। তবে সোহেল রাঢ়ী সে সময় পদ প্রত্যাখ্যান করেন।

পাশাপাশি বরিশাল নগর ছাত্রদলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক করা হয় যথাক্রমে রেজাউল করিম ও হ‌ুমায়ূন কবিরকে। এ ছাড়া ওই কমিটিতে জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি করা হয় তরিকুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহামুদ হাসান ও সাংগঠনিক সম্পাদক করা হয় এনামুল হাসানকে।

কমিটি ঘোষণার পর ওই দিন রাতেই পদবঞ্চিত নেতা-কর্মীরা কমিটি বিতর্কিত দাবি করে, তা বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ করেন এবং জেলা ও নগর বিএনপির কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দেন। পরের দিন একই দাবিতে তাঁরা নগরে ঝাড়ুমিছিলের পাশাপাশি কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সভাপতি রাজীব আহসানের ছবিতে অগ্নিসংযোগ করেন।

নেতা-কর্মীরা জানান, গত মার্চে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের পক্ষ থেকে তৃণমূল পর্যায়ে মেয়াদোত্তীর্ণ ইউনিটগুলোতে নতুন কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ ক্ষেত্রে কমিটিতে পদপ্রার্থীদের জন্য কিছু শর্ত ঠিক করে দেওয়া হয়। শর্ত অনুযায়ী বিবাহিত, অছাত্র, মাদকাসক্ত এবং ২০০৫ সালের আগে মাধ্যমিক (এসএসসি) পাস কাউকে পদ দেওয়া হবে না বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

বিতর্কিত ও বিবাহিতদের নিয়ে মেহেন্দীগঞ্জসহ বিভিন্ন উপজেলা কমিটি করতে বাণিজ্য করেছেন জেলা সভাপতি মাহফুজুল আলম। উপজেলা ও পৌর কমিটি করতে কেন্দ্রের যে নির্দেশনা রয়েছে, জেলা সভাপতি তা অনুসরণ না করে বিবাহিত, বিতর্কিতদের নিয়ে কমিটি গঠনের পাঁয়তারা চালাচ্ছেন।
মাসুদ রানা, মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলা ছাত্রদলের সভাপতি পদপ্রার্থী

এ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বরিশালের ১০ উপজেলা ও ৬ পৌর ছাত্রদলের কমিটি গঠনের তোড়জোড় শুরু হয়। মাহফুজুল ও পাঁচ সদস্যের জেলা কমিটির নেতারা এসব উপজেলা ও পৌর কমিটি গঠনের জন্য পদপ্রত্যাশীদের জীবনবৃত্তান্ত নিয়ে কমিটি চূড়ান্ত করে কেন্দ্রীয় বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় সহসভাপতি মাহমুদুল হাসানের কাছে জমা দিয়েছেন। তবে প্রতিদ্বন্দ্বী পক্ষের নেতারা অভিযোগ তোলেন, বর্তমান সভাপতি মাহফুজুল আলম বিভিন্ন উপজেলা ছাত্রদলের কমিটি গঠন করতে গিয়ে বিবাহিত ও মাদক ব্যবসায়ীদের ছাত্রদলের পদ দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে তাঁদের কাছ থেকে বিপুল অঙ্কের উৎকোচ নিয়েছেন।

মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলা ছাত্রদলের সভাপতি পদপ্রার্থী মাসুদ রানা অভিযোগ করেন, বিতর্কিত ও বিবাহিতদের নিয়ে মেহেন্দীগঞ্জসহ বিভিন্ন উপজেলা কমিটি করতে বাণিজ্য করেছেন জেলা সভাপতি মাহফুজুল আলম। উপজেলা ও পৌর কমিটি করতে কেন্দ্রের যে নির্দেশনা রয়েছে, জেলা সভাপতি তা অনুসরণ না করে বিবাহিত, বিতর্কিতদের নিয়ে কমিটি গঠনের পাঁয়তারা চালাচ্ছেন।

হিজলা, মেহেন্দীগঞ্জ, মুলাদীর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদপ্রত্যাশী একাধিক ছাত্রদল নেতা অভিযোগ করেন, জেলা সভাপতি মাহফুজুল আলম কোনো উপজেলায় গিয়ে সম্মেলন কিংবা সভা না করে ঢাকায় বসে টাকা নিয়ে জেলার ১০ উপজেলা ও ৬ পৌর ছাত্রদলের কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করছেন।

আমার প্রতিপক্ষ এসব অভিযোগ দিয়েছেন। আমাকে সাত দিন সময় দেওয়া হয়েছে এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন, তা প্রমাণে। আমি সেটা প্রমাণ করতে পারব আশা করি।
মাহফুজুল আলম, অভিযুক্ত সভাপতি, বরিশাল জেলা ছাত্রদল

বাকেরগঞ্জ ছাত্রদলের এক নেতা অভিযোগ করেন, কমিটিতে শীর্ষ পদ দেওয়ার কথা বলে বাকেরগঞ্জ ছাত্রদলের পাঁচ থেকে সাতজন নেতার কাছ থেকে ৫০ হাজার করে টাকা নিয়েছেন সভাপতি মাহফুজুল আলম।

জেলা ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক সোহেল রাঢ়ী অভিযোগ করেন, ‘সভাপতি মাহফুজুল আলম বিতর্কিতদের নিয়ে উপজেলা ও পৌর কমিটি চূড়ান্ত করে সাংগঠনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতার কাছে জমা দিয়েছেন বলে অভিযোগ পেয়েছি। এসব কমিটি করতে তিনি আর্থিক সুবিধা নিয়েছেন বলে শুনেছি। অভিযোগগুলো কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে জানানো হয়েছে।’

এসব অভিযোগের বিষয়ে অভিযুক্ত মাহফুজুল আলম আজ বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা সব কটি উপজেলা ও পৌর কমিটির সম্ভাব্য প্রার্থীদের জীবনবৃত্তান্ত যাচাই-বাছাই করে বিভাগীয় সহসভাপতির কাছে জমা দিয়েছি।’ তিনি দাবি করেন, ‘আমার প্রতিপক্ষ এসব অভিযোগ দিয়েছেন। আমাকে সাত দিন সময় দেওয়া হয়েছে এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন, তা প্রমাণে। আমি সেটা প্রমাণ করতে পারব আশা করি।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রতিপক্ষের নেতারা তাঁদের অনুগত লোকদের দিয়ে কমিটি করার জন্য আমাকে সুপারিশ করলে আমি সেসব অযোগ্য লোকদের কমিটির নেতৃত্বে আনিনি বলে এসব ভিত্তিহীন অভিযোগ দিয়েছেন।’

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে বরিশাল বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় সহসভাপতি মাহমুদুল হাসান আজ সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা সব পক্ষের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা ও সমন্বয় করে ১০ উপজেলা ও ৬ পৌর কমিটি করার ব্যাপারে কাজ এগিয়ে নিচ্ছি। এখনো চূড়ান্ত হয়নি। তবে সভাপতির বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ এসেছে, সেসব অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে এবং তাঁর পদ আপাতত স্থগিত রাখা হয়েছে।’