কন্যাসন্তান জন্মের পর ফোন করলেই পৌঁছে যাচ্ছে উপহার

চুয়াডাঙ্গা জেলা পুলিশের উদ্যোগ
সংগৃহীত

কন্যাসন্তানের জন্মের খবর পাওয়ামাত্র চুয়াডাঙ্গা জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে উপহার। আজ শুক্রবার সকাল থেকে উপহার পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। সম্প্রতি সংবাদমাধ্যমে একটি সংবাদ প্রকাশের পরিপ্রেক্ষিতে এ উদ্যোগ নিয়েছেন চুয়াডাঙ্গা জেলা পুলিশ সুপার।

পুলিশ সুপার জাহিদুল ইসলাম বলেন, সম্প্রতি গণমাধ্যমে একটি সংবাদে তিনি চরমভাবে আহত হন। সংবাদটি ছিল ‘কন্যাসন্তান জন্ম দেওয়ায় উপহারের পরিবর্তে পেলেন তালাকনামা’। সেই থেকে তিনি সিদ্ধান্ত নেন কন্যাসন্তান ও সন্তানের মায়ের মর্যাদা রক্ষায় কাজ করবেন। তিনি আরও বলেন, ‘সংবাদটি দেখার পর কন্যাসন্তান বিষয়ে পবিত্র কোরআনের বাণীগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়ি এবং মায়ের জাতি কন্যাসন্তান ও সন্তানের মাকে মর্যাদা দিতে উদ্বুদ্ধকরণ কর্মসূচি নিই।’

‘কন্যাসন্তান বোঝা নয়, আশীর্বাদ, আল্লাহ তাআলার শ্রেষ্ঠ পুরস্কার। কন্যা মা-বাবার জন্য জান্নাতের সুসংবাদ নিয়ে দুনিয়ায় আগমন করে। তাই কন্যাসন্তান জন্ম হলে ফোন করুন, উপহার পৌঁছে যাবে সাথে সাথে।’ চুয়াডাঙ্গা জেলা পুলিশের ফেসবুক পেজে (Chuadanga District Police) বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকে এমন একটি বার্তা ভেসে বেড়াচ্ছে।

পুলিশ সুপার জাহিদুল ইসলাম
সংগৃহীত

নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে পুলিশ সুপার জাহিদুল ইসলামের পক্ষ থেকে এ বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তথ্য দিতে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের নিয়ন্ত্রণকক্ষে হটলাইন নম্বর (০১৩২০-১৪৯০৯৮) চালু করা হয়েছে। এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন অনেকেই।

জাহিদুল ইসলাম বলেন, প্রাথমিকভাবে চুয়াডাঙ্গা জেলায় কন্যাসন্তানের খবর পাওয়ামাত্রই পোশাকসহ প্রয়োজনীয় উপহারের ডালি নিয়ে পুলিশের বিশেষ দল শুক্রবার সকাল থেকেই সেখানে পৌঁছে যাচ্ছে। শিশুটির মা–বাবা যদি দরিদ্র হন, তাহলে মায়ের জন্য শাড়ি ও বাবার জন্য লুঙ্গি পৌঁছে দেওয়া হবে।

পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের নিয়ন্ত্রণকক্ষ সূত্রে জানা যায়, আজ বেলা একটা পর্যন্ত সাতজন অভিভাবক যোগাযোগ করেছেন। ৮ জানুয়ারি জন্ম নেওয়া কন্যাসন্তানের বাবা দর্শনা থানার বাটিকাডাঙ্গার বাসিন্দা সাধন কুমার, আলমডাঙ্গা উপজেলার ঘোষবিলার মাহবুবুর রহমান, আসমানখালীর জাহাঙ্গীর আলম, দামুড়হুদা উপজেলার হোগলডাঙ্গার ইমরান আলী, জীবননগর উপজেলার গঙ্গাদাসপুরের ইমরান হোসেন, সদর উপজেলার খেজুরা গ্রামের ইন্দ্রজিৎ কুমার ও বেলগাছি গ্রামের রওশন আলী আনন্দের সঙ্গে তাঁদের কন্যাসন্তান জন্মের খবরটি জানিয়েছেন।

নিয়ন্ত্রণকক্ষের দায়িত্বে নিয়োজিত পুলিশের একজন উপপরিদর্শক (এসআই) বলেন, বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকেই অনেকে ফোন করে ঘটনার সত্যতা যাচাই করছেন। নবজাতকের পাশাপাশি গত এক মাসে যেসব কন্যাসন্তান জন্ম নিয়েছে, তাঁদের মা-বাবারাও ফোন দিয়ে খোঁজ নিচ্ছেন।

আসমান খালীর জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আজ শুক্রবার বেলা একটার দিকে চুয়াডাঙ্গা শহরের একটি বেসরকারি ক্লিনিকে তাঁর স্ত্রী মুক্তা খাতুন কন্যাসন্তানের জন্ম দিয়েছেন। তাঁদের এটা দ্বিতীয় সন্তান। তাঁদের ১০ বছর বয়সী এক পুত্রসন্তান আছে, নাম শুভ। জাহাঙ্গীর বলেন, ‘ছেলের পরে মেয়ে হওয়ায় আমরা সবাই খুশি। তবে পুলিশ সুপার নিজে ফোন দিয়ে খোঁজ নেওয়ায় আরও বেশি আনন্দিত।’

জেলা পুলিশের ফেসবুক পেজে অনেকেই মন্তব্য করেছেন। শফিক আহমেদ নামের একজন লিখেছেন, এটি একটি চমৎকার উদ্যোগ। রফিকুল ইসলাম নামের একজন লিখেছেন, একে একে মহতী উদ্যোগ নিলে দেশের মানুষের জীবনমানের উন্নতি হতে বেশি সময় লাগবে না।