কক্সবাজারে সেবা বন্ধ রেখে কর্মবিরতিতে পৌরসভার কর্মীরা, দুর্ভোগ
কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে আজ সোমবার সকাল থেকে কর্মবিরতি পালন করছেন পৌরসভার কাউন্সিলসহ কর্মীরা। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন পৌরসভার নাগরিকেরা।
সকাল থেকে পৌরভবনে এসে কাঙ্ক্ষিত সেবা না পেয়ে হতাশ মনে বাড়িতে ফিরছেন অনেকে। পৌরভবনের সব কক্ষের দরজায় তালা ঝুলছে। কাউন্সিলরসহ পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ভবনের পাশে বসে কর্মবিরতি পালন করছেন।
গতকাল রোববার বিকেলে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় মেয়র মুজিবুর রহমানকে প্রধান আসামি করে আটজনের বিরুদ্ধে একটি হত্যাচেষ্টা মামলা করেন শহরের পেশকার পাড়ার বাসিন্দা মো. শাহজাহান। গত ২৭ অক্টোবর রাতে তাঁর ছোট ভাই ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি মোনাফ সিকদারকে গুলি করে দুর্বৃত্তরা।
মোনাফ বর্তমানে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। গুলির ঘটনায় নির্দেশদাতা হিসেবে মেয়রকে আসামি করা হয়। মেয়রের নামে করা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে গতকাল চার ঘণ্টা পর্যটন শহর কক্সবাজার অচল করে রাখা হয়। মেয়রের সমর্থকেরা এ সময় বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশের পাশাপাশি টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে প্রধান সড়ক অবরোধ করেন।
আজ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে পৌর ভবনে গিয়ে দেখা গেছে, সব কক্ষের দরজায় তালা ঝুলছে। কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বাইরে বসে কর্মবিরতি পালন করছেন। জন্মসনদ, ওয়ারিশ সনদ, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের ট্রেড লাইসেন্স, জাতীয়তার সনদপত্র, মৃত্যুসনদ, জন্মনিবন্ধন কার্যক্রম—সবই বন্ধ রাখা হয়েছে। শত শত মানুষ সেবার জন্য এসে হতাশ মনে বাড়িতে ফিরে যাচ্ছেন।
শহরের টেকপাড়া থেকে ট্রেড লাইসেন্সের জন্য আসেন ব্যবসায়ী আবুল কালাম। সকাল ৯টা থেকে ১০টা পর্যন্ত পৌরভবনে অপেক্ষা করেন তিনি। শেষে বাড়িতে ফেরার সময় প্রথম আলোকে বলেন, পৌর মেয়রের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, তা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ আছে। কিন্তু কর্মবিরতি পালন করে সাধারণ মানুষকে কষ্ট দেওয়ার মানে হয় না। একজন জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতার বিরুদ্ধে মামলা নেওয়ার আগে প্রশাসন কিংবা দলের শীর্ষ নেতাদের পরামর্শ নেওয়া উচিত ছিল পুলিশের। এখন কর্মবিরতি কখন শেষ হবে, এ অপেক্ষায় থাকতে হবে।
শহরের বড়বাজার এলাকার থেকে ওয়ারিশ সনদের জন্য এসেছেন গৃহবধূ সেনুয়ারা বেগম। তিন ঘণ্টা অপেক্ষার পর ওয়ারিশ সনদ ছাড়াই তিনি ফিরে গেলেন। সেনুয়ারা বলেন, ‘ঘোষণা দিয়ে কর্মবিরতি শুরু করলে আমরা আসতাম না, দুর্ভোগও সইতে হতো না।’
পৌরসভা সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের আহ্বায়ক শামিম আকতার বলেন, কর্মবিরতির ফলে সকাল ৯টা থেকে শহরের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযান, করোনার নমুনা সংগ্রহ, বাসাবাড়ির পানি সরবরাহসহ সব নাগরিক সেবা বন্ধ আছে। এতে নাগরিকদের সাময়িক অসুবিধা হলেও করার কিছু নেই।
এর আগে মেয়র মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে পৌর কাউন্সিলসহ কর্মচারীদের জরুরি সভা হয়েছে। পৌরভবনের সম্মেলনকক্ষে পৌরসভার প্যানেল মেয়র-১ মাহবুবুর রহমান চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বক্তব্য দেন প্যানেল মেয়র-২ হেলাল উদ্দিন কবির, প্যানেল মেয়র-৩ শাহেনা আক্তার, কাউন্সিলর সালাউদ্দিন প্রমুখ। সভায় মেয়রের মামলা প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত পৌরসভার সব ধরনের নাগরিক সুযোগ-সুবিধা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়।