কক্সবাজারে সরকারি পাহাড় কেটে শতবর্ষী ছড়া ভরাট

কক্সবাজার শহরের বাইপাস সড়কের জেলগেট এলাকায় সরকারি পাহাড় কেটে ছড়া ভরাট করে স্থাপনা তৈরি করা হচ্ছে
ছবি: প্রথম আলো

কক্সবাজার শহরের বাইপাস সড়কের জেলগেট এলাকায় সরকারি পাহাড় কেটে শতবর্ষী পানি চলাচলের ছড়া ভরাট করে একাধিক পাকা-আধাপাকা স্থাপনা তৈরি করা হচ্ছে। পাহাড়ি ঢলের পানি সাগরে নেমে যাওয়ার প্রাকৃতিক ছড়াটি ভরাট করে ঘরবাড়ি তৈরি করায় নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। স্থানীয় জামাল উদ্দিন ওরফে বাবুলের নেতৃত্বে সাতজনের একটি সিন্ডিকেট ছড়ার বিভিন্ন অংশ ভরাট করছে পাহাড় কাটার মাটি ফেলে। এটি বন্ধে প্রশাসনের তরফ থেকে কোনো উদ্যোগ নেই।

গতকাল মঙ্গলবার সরেজমিনে দেখা গেছে, বিশাল উঁচু পাহাড় কেটে সেখানে তৈরি হচ্ছে একটি পাকা ভবন। ১০-১৫ জন শ্রমিক ভবন নির্মাণ করছেন। ভবনটি তৈরি হচ্ছে পাহাড় থেকে নেমে আসা ছড়ার ওপর। এতে পানি চলাচলে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হচ্ছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন শ্রমিক বলেন, তাঁরা ১০-১৫ জন শ্রমিক দৈনিক ৬০০ টাকা মজুরিতে ভবনটি নির্মাণের কাজ করছেন। ভবনের মালিক জামাল উদ্দিন। তিন সপ্তাহ ধরে পাহাড় কেটে ছড়া ভরাট করে ভবনটি নির্মাণের কাজ চললেও কেউ বাধা দেননি।

সরকারি পাহাড় কেটে ভবন নির্মাণ প্রসঙ্গে জামাল উদ্দিন বলেন, সপরিবারে বসবাসের জন্য তিনি সরকারি পাহাড়ের একাংশ কেটে পাকা বাড়ি নির্মাণ করছেন। আশপাশে অনেকে পাহাড় কেটে ঘরবাড়ি নির্মাণ করেছেন। তাঁরা ঘরবাড়ি সরিয়ে নিলে তিনিও নেবেন। পানি চলাচলের ছড়া ভরাট করে ভবন নির্মাণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ছড়ার জায়গাটি তিনি একজনের কাছ থেকে কিনে নিয়েছেন। কার কাছ থেকে কিনেছেন, সেটা জানতে চাইলে তিনি নাম প্রকাশ করতে চাননি।

স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জামাল উদ্দিনের পাশাপাশি রিয়াদ, হামিদ, ভুলু, খসরু, নাজিম, ফরহাদসহ অন্তত নয়জন ছড়াটির বিভিন্ন অংশ দখল করে ঘরবাড়ি নির্মাণের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ছড়াটি কক্সবাজার সদর উপজেলার ঝিলংজা ইউনিয়নের আওতাধীন।

স্থানীয় ঝিলংজা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মোহাম্মদ ইউনুস বলেন, দুই বছর আগেও ছড়াটির প্রস্থ ছিল ২৫ থেকে ৩০ ফুট। এখন ভরাট ও দখলের কারণে ছড়ার কিছু অংশ পাঁচ ফুটে এসে দাঁড়িয়েছে। কয়েক দিন ধরে জামাল উদ্দিন পাহাড় কাটার মাটি ফেলে ছড়া ভরাট করে সেখানে পাকা দালান নির্মাণ করছেন। বাধা দিলেও তিনি তা আমলে নিচ্ছেন না। সরকারি এই পাহাড় কাটা, বসতবাড়ি নির্মাণের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা আছে। তাঁর দেখাদেখি অনেকে ছড়ার বিভিন্ন অংশ ভরাট করে ঘরবাড়ি বানানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন। দ্রুত এসব স্থাপনা উচ্ছেদ করে ছড়াটি দখলমুক্ত করা না হলে বর্ষায় পাহাড় থেকে নেমে আসা ঢলের পানিতে বসতবাড়ি তলিয়ে যাওয়ার শঙ্কা আছে।

ঘটনাস্থল ঘুরে এসে পরিবেশবিষয়ক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এনভায়রনমেন্ট পিপলের প্রধান নির্বাহী রাশেদুল মজিদ বলেন, পাহাড় কেটে ছড়া ভরাট ও স্থাপনা নির্মাণের বিষয়টি পরিবেশ অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসনের ভূমি শাখাকে জানানো হয়েছে। কিন্তু মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত কেউ ঘটনাস্থলে যাননি।
পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার কার্যালয়ের উপপরিচালক শেখ মো. নাজমুল হুদা বলেন, তাঁরা অভিযোগ পেয়েছেন। দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন তিনি।

সরকারি পাহাড় কেটে ছড়া ভরাটের বিষয়টি নজরে এসেছে দাবি করে কক্সবাজার সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) জিল্লুর রহমান বলেন, এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

১৯ মে প্রথম আলোতে ‘কক্সবাজারে পাহাড় কাটার ধুম, প্লট বানিয়ে সরকারি জমি বিক্রি’ শিরোনামে সচিত্র সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিল।