চট্টগ্রামের সদরঘাট থেকে তিনটা ২৮ মিনিটে যাত্রা করেছিল শীতাতপনিয়ন্ত্রিত ওয়াটারবাসটি। যাত্রা শুরুর এক মিনিটে নৌযানটির গতি ওঠে ঘণ্টায় ৩৯ কিলোমিটার।এরপরেই তা ৫০ কিলোমিটার ছাড়িয়ে যায়। এত গতিতেও কোনো ঝাঁকুনি ছিল না। ঠিক ১৮ মিনিট পর নৌযানটি ভিড়ে বিমানবন্দরে ঢোকার সড়কপথের পাশে পতেঙ্গা ওয়াটারবাস টার্মিনালে। নদীপথে এই দূরত্ব আট নটিক্যাল মাইল বা ১৫ কিলোমিটার।
আজ শনিবার বিকেলে ওয়াটারবাসে চড়ে পরীক্ষামূলক যাত্রায় এমন চিত্র দেখা গেল। কর্ণফুলী নদীতে প্রথমবার চালু হতে যাওয়া ওয়াটারবাস সম্পর্কে জানাতে সাংবাদিকদের নিয়ে এমন আয়োজন করেছিল পরিচালনাকারী সংস্থা এসএস ট্রেডিং। এ মাসে চালু হচ্ছে ওয়াটারবাসে যাত্রী পরিবহন সেবা।
পতেঙ্গা টার্মিনালে পৌঁছানোর পর প্রস্তুত ছিল শীতাতপনিয়ন্ত্রিত বাস। আয়োজকেরা জানান, যারা বিমানযাত্রী তাদের সেখান থেকে বাসে তিন মিনিটে পৌঁছে দেওয়া হবে বিমানবন্দরে। প্রাথমিকভাবে এই নৌপথের ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে জনপ্রতি ৪০০ টাকা।
নদীপথে ১৮ মিনিটে সদরঘাট থেকে পতেঙ্গায় পৌঁছানো গেলেও সড়কপথে পতেঙ্গায় পৌঁছাতে সময় লাগে এক থেকে দেড় ঘণ্টা। আর যানজট বেশি হলে তা তিন-চার ঘণ্টাও লেগে যায়। গত মৌসুমে যানজটের কারণে হজযাত্রী ও বিমানযাত্রীরা অনেকেই ফ্লাইট ধরতে পারেননি। এখন বিমানবন্দর সড়কে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজের পরিধি যত বাড়ছে সময়ও লাগছে তত বেশি।
আজ ওয়াটারবাস পরীক্ষামূলক যাত্রা শুরু আগে ওয়াটারবাস পরিচালনাকারী এসএস ট্রেডিংয়ের উপদেষ্টা সাখাওয়াত হোসেন বলেন, প্রতিদিন শহর থেকে বিমানবন্দরে পাঁচ হাজার যাত্রী সড়কপথে যায়। যানজটের কারণে তাদের নির্ধারিত সময়ের চেয়ে তিন-চার ঘণ্টা আগেই রওয়ানা হতে হয়। তবে ওয়াটারবাসে সদরঘাট থেকে নদীপথ হয়ে বিমানবন্দরে পৌঁছাতে সময় লাগবে সর্বোচ্চ ৩০ মিনিট।
এসএস ট্রেডিংয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাবাব হোসেন বলেন, প্রতিদিন দুটি ওয়াটারবাস দিয়ে যাত্রী পরিবহন করা হবে। দিনে ১১টি করে মোট ২২ বার সদরঘাট থেকে পতেঙ্গায় আসা যাওয়া করবে এ দুটো ওয়াটারবাস। জানুয়ারিতে যুক্ত হবে আরও দুটি। যাত্রীরা অ্যাপস দিয়ে টিকিট বুকিং করতে পারবেন।
ওয়াটারবাসের ভাড়া বেশি হয়ে গেল কি-না এমন বিষয়ে পরিচালনাকারী সংস্থার কর্মকর্তারা জানান, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ওয়াটারবাসে আন্তর্জাতিকমানের সেবা পাবেন যাত্রীরা। সড়কপথের মতো যানজটেও পড়তে হবে না। অত্যাধুনিক সুবিধার কারণে খরচ বেশি পড়ায় এই ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে।
বিমানবন্দরমুখী চট্টগ্রাম বন্দর সড়কে যানজট কমাতে এই নৌপথে যাত্রী পরিবহন সেবা চালুর উদ্যোগ নেয় চট্টগ্রাম বন্দর। বন্দর কর্তৃপক্ষ সদরঘাট ও পতেঙ্গা দুই স্টেশনে টার্মিনাল ও জেটি সুবিধা তৈরি করেছে। যাত্রী পরিবহন সেবা পরিচালনার জন্য নিয়োগ দিয়েছে চিটাগাং ড্রাই ডক লিমিটেড (সিডিডিএল) ও এসএস ট্রেডিংকে। তারা বন্দরকে বার্ষিক ভাড়া দিয়ে এই নৌপথে যাত্রী পরিবহন করবে।
বন্দরের উপব্যবস্থাপক (ভূমি) জিল্লুর রহমান প্রথম আলোকে জানান, চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে পণ্য পরিবহন বাড়তে থাকায় বন্দর সড়কেও প্রতিবছর গাড়ির সংখ্যা বাড়ছে। তাতে বিমানযাত্রী, হজযাত্রী, বিদেশি বিনিয়োগকারীরা যাতে নদীপথে খুব দ্রুত আসা-যাওয়া করতে পারেন সে জন্য বন্দর এই উদ্যোগ নিয়েছে। নদীপথ ব্যবহারে যাত্রীদের আকৃষ্ট করাও এই উদ্যোগের অন্যতম লক্ষ্য ছিল।