চুয়াডাঙ্গায় সরকারি ওষুধ ও চিকিৎসার উপকরণ খোলাবাজারে বিক্রি করে প্রায় তিন কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ অনুসন্ধানে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এ অভিযোগ উঠেছে সিভিল সার্জন কার্যালয়ের ভান্ডাররক্ষক হাফিজ বিন ফয়সাল ওরফে পিয়াসের বিরুদ্ধে। অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা দুদকের উপসহকারী পরিচালক মো. নাছরুল্লাহ হোসাইন। তিনি চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল এবং দামুড়হুদা, জীবননগর ও আলমডাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চার ভান্ডাররক্ষককে আজ বুধবার দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয় কুষ্টিয়ায় তলব করেন।
সদর হাসপাতালের ভান্ডাররক্ষক মো. হাদিউজ্জামান, দামুড়হুদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভান্ডাররক্ষক হুমায়ূন কবির, জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভান্ডাররক্ষক শামসুল হক ও আলমডাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভান্ডাররক্ষক জহুরুল হক আজ সকাল নয়টায় কুষ্টিয়ায় দুদক সমন্বিত কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে দুদকের কর্মকর্তার কাছে নিজ নিজ বক্তব্য উপস্থাপন করেন।
সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১০ সালে ভান্ডাররক্ষক হিসেবে হাফিজ বিন ফয়সাল চাকরিতে যোগ দেন। সেই থেকে কেন্দ্রীয় ঔষধাগার থেকে পাওয়া ওষুধ-পথ্য এবং দরপত্রের মাধ্যমে কেনা ওষুধ ও চিকিৎসার উপকরণ (মেডিসিন অ্যান্ড সার্জিক্যাল রিকুইজিটস) সদর হাসপাতাল, সব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য উপকেন্দ্র ও কমিউনিটি ক্লিনিকে সরবরাহের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। গত এক বছর হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে ওষুধ কেন্দ্রীয় ঔষধাগার থেকে সরাসরি পাঠানো হয়ে থাকে এবং চিকিৎসাসামগ্রী নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের ক্রয় কমিটি কেনা শুরু করেছে।
আমার অফিসের কেউ প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে অথবা বাইরের কেউ হয়রানি করতে দুদকের কাছে এ অভিযোগ করেছেন, যা এখনো প্রমাণিত হয়নি। সরকারি ওষুধ বাইরে পাওয়া যায় না, কেউ কেনে না। ফলে সরকারি ওষুধ ও চিকিৎসার উপকরণ খোলাবাজারে বিক্রির প্রশ্ন আসে না।হাফিজ বিন ফয়সাল, চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের ভান্ডাররক্ষক
চুয়াডাঙ্গা জেলার সিভিল সার্জন এ এস এম মারুফ হাসান জানান, গত বছরের জুলাই মাস থেকে, অর্থাৎ এক বছরের বেশি সময় ধরে দুদক মামলাটি অনুসন্ধান করছে। অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা দুদকের উপসহকারী পরিচালক মো. নাছরুল্লাহ হোসাইন গত এক বছরে ওষুধ ও চিকিৎসার উপকরণের প্রাপ্তি, ক্রয়, সরবরাহ, বিতরণবিষয়ক প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সরেজমিনে দেখেছেন এবং বেশ কিছু ফটোকপি করে নিয়েছেন।
সিভিল সার্জন বলেন, ‘দুদকের কর্মকর্তা এর আগে অভিযুক্ত ভান্ডাররক্ষকের বক্তব্য গ্রহণ করেছেন। আজ হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভান্ডাররক্ষকদের দুদক সমন্বিত কার্যালয়ে তলব করা হয়েছে। যত দূর জেনেছি, ঘটনাকাল ২০১৭ সাল। যে সময়ে সিভিল সার্জনের দায়িত্বে ছিলেন রওশন আরা বেগম।’
বক্তব্য জানতে রাতে সিভিল সার্জন কার্যালয়ের ভান্ডাররক্ষক হাফিজ বিন ফয়সালের মুঠোফোনে কল করা হলে তিনি তাঁর বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমার অফিসের কেউ প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে অথবা বাইরের কেউ হয়রানি করতে দুদকের কাছে এ অভিযোগ করেছেন, যা এখনো প্রমাণিত হয়নি।’ তিনি দাবি করেন, এ ওষুধ বাইরে পাওয়া যায় না, কেউ কেনে না। ফলে সরকারি ওষুধ ও চিকিৎসার উপকরণ খোলাবাজারে বিক্রির প্রশ্ন আসে না।
সর্বশেষ তথ্য, সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা পর্যন্ত চার ভান্ডাররক্ষক কুষ্টিয়ায় দুদকের সমন্বিত কার্যালয়ে অবস্থান করে তাঁদের বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন।