ওএমএস তালিকায় এক নামে একাধিক কার্ড, আছেন মৃত ব্যক্তিও
আমজাদ হোসেন মারা গেছেন ১১ মাস আগে, কিন্তু তাঁর নামে বরাদ্দ কার্ডে দুই দফা চাল কেনা হয়েছে। আবার একই ব্যক্তির নামে একাধিক কার্ড দেওয়া হয়েছে। রাজশাহীর তানোর উপজেলার মুন্ডুমালা পৌরসভায় করোনা প্রাদুর্ভাবের সময় ওএমএস কার্ডের তালিকা নিয়ে এমন অভিযোগ উঠেছে।
পৌরসভা কার্যালয় ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, মুন্ডুমালা পৌরসভার সাদিপুর গ্রামের মানুরুদ্দীনের ছেলে আমজাদ হোসেন প্রায় ১১ মাস আগে মারা গেছেন। কিন্তু খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির তালিকায় তাঁর নাম রয়েছে। তাঁর কার্ড নম্বর ৪৯৮। গত এপ্রিল ও মে মাসে স্থানীয় পরিবেশক (ডিলার) দেবানন্দ বর্মনের কাছ থেকে ওই কার্ডে ১০ টাকা কেজি দরের চাল কেনা হয়েছে। এই তালিকায় তাঁর দুই ছেলের নামও রয়েছে।
পৌরসভার এক নম্বর প্যানেল মেয়র ও স্থানীয় কাউন্সিলর আমির হোসেন আমিন বলেন, ‘আমজাদ মারা গেছেন প্রায় ১১ মাস আগে। তাঁর নামে কীভাবে কার্ড হয়েছে, সেই কার্ড দিয়ে কারা চাল তুলছে, তা জানেন না। তিনি বলেন, এই কার্ড তৈরিতে সমন্বয়হীনতা রয়েছে। এ জন্যই এমনটি হয়েছে।
এ ছাড়া তালিকায় একই ব্যক্তির নাম একাধিকবার এসেছে, এমন অন্তত তিনটি ঘটনা পাওয়া গেছে। পৌরসভার হাসনাপাড়া এলাকার কসিম উদ্দিনের ছেলে আরিফুল ইসলামের নামে তিনটি কার্ড করা হয়েছে। তাঁর কার্ড নম্বরগুলো যথাক্রমে ১৫০, ৪১৮ ও ৪৮২। একই এলাকার শাহজালের ছেলে জহিরুল ইসলামের নামে দুটি করে কার্ড করা হয়েছে। জহিরুল ইসলামের নামে করা কার্ডের নম্বর ৪৬৯ ও ৪১৬। মুন্ডুমালা এলাকার আফসারের ছেলে আমিনুল ইসলামের নামে দুটি কার্ড। তাঁর কার্ডের নম্বর হচ্ছে ১৬৮ ও ২১৮। এই সাতটি কার্ডে এপ্রিল ও মে মাসে ২১০ কেজি চাল কেনা হয়েছে। তবে তাঁদের নামে একাধিক কার্ড করার বিষয়টি তাঁরা জানেন না বলে দাবি করেছেন।
মুন্ডুমালা পৌরসভার খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চালের দুজন পরিবেশক রয়েছেন। তাঁদের একজনের নাম জুবায়ের হোসেন। তিনি তানোর উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক। মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আজ বৃহস্পতিবার এ রকম একটি কার্ড জব্দ করেছেন। অন্য নামের কার্ড নিয়ে মুহবুল নামের একজন চাল নিতে এসেছিলেন। তিনি ওই কার্ডের চাল দেননি। জুবায়ের বলেন, কাউন্সিলররা তালিকা দিয়েছেন। তাঁদের পক্ষে সবাইকে চিনে দেওয়া সম্ভব নয়। এ ব্যাপারে অপর পরিবেশক দেবানন্দ বর্মনের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন ধরেননি।
পৌরসভার ১ নম্বর প্যানেল মেয়র ও কাউন্সিলর আমির হোসেন ওরফে আমিনসহ পাঁচজন কাউন্সিলর এ ব্যাপারে গতকাল বৃহস্পতিবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে ওএমএসের চাল বিতরণে অনিয়মের লিখিত অভিযোগ করেছেন। তাঁরা আগের দিন গত বুধবার পরিবারভিত্তিক মানবিক সহায়তা কার্ড বিতরণে অনিয়মের অভিযোগেও স্থানীয় সাংসদ, বিভাগীয় কমিশনার, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন।
জানতে চাইলে উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও পৌর মেয়র গোলাম রাব্বানী বলেন, তাড়াহুড়ার কারণে এটা হতে পারে। তিন ভাগে ভাগ করে তালিকা করতে হয়—এক ভাগ দলের, এক ভাগ কাউন্সিলরের আর এক ভাগ মেয়রের থাকে। তিনি বলেন, নিশ্চয় আত্মসাতের জন্য এগুলো করা হয়নি। ভুল হতে পারে, হলে সংশোধন করা হবে।
তবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুশান্ত কুমার মাহাতো এই প্রতিবেদককে জানান, অভিযোগ পাওয়ার পরে মুন্ডুমালা পৌরসভার সচিবের সঙ্গে কথা বলেছেন। তিনি দাবি করেছেন, কোনো তালিকায় এ রকম হয়নি।