ওআইসি চায় রোহিঙ্গারা আত্মমর্যাদার সঙ্গে মিয়ানমারে ফিরে যাক
রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের পাশে থাকবে ওআইসি (ইসলামি সহযোগিতা সংস্থা)। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনও হবে আত্মমর্যাদাপূর্ণ। রোহিঙ্গাদের অধিকার আদায়ের পক্ষে ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসে যে মামলা চলছে—সেখানেও যাতে রোহিঙ্গা নাগরিকেরা ন্যায়বিচার পান, তার জন্য আইনি লড়াইয়েও সহযোগিতা করবে ওআইসি।
আজ রোববার বিকেলে কক্সবাজারের উখিয়ায় কুতুপালং আশ্রয়শিবিরের একটি সম্মেলনকক্ষে রোহিঙ্গা নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে এমন আশ্বাসের বাণী শোনালেন ওআইসির সহকারী মহাসচিব ইউসেফ আলডোবেয়া। বৈঠকে উখিয়া ও টেকনাফের ৩৪টি আশ্রয়শিবিরের ৭৬ জন নেতা (মাঝি) অংশ নেন।
২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর নৃশংসতা শুরু হলে পরের কয়েক মাসে অন্তত ৮ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসেন। এর আগে আসেন আরও কয়েক লাখ। বর্তমানে উখিয়া ও টেকনাফের ৩৪টি আশ্রয়শিবিরে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা সাড়ে ১১ লাখ।
বৈঠকে কয়েকজন রোহিঙ্গা নেতা ওআইসি সহকারী মহাসচিবের উদ্দেশে বলেন, মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর বর্বর অত্যাচার–নির্যাতনের মুখে তাঁরা জন্মভূমি ত্যাগ করে বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে বাধ্য হন। কিন্তু গত সাড়ে তিন বছরেও তাঁরা ফিরে যেতে পারছেন না, মিয়ানমারের তাঁদের ফিরিয়ে নিতে রাজি না। রোহিঙ্গা মুসলমানদের মিয়ানমার সরকার সে দেশের নাগরিক বলেও স্বীকার করছে না। এ ক্ষেত্রে ওআইসির হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।
জবাবে ওআইসি সহকারী মহাসচিব বলেন, আত্মমর্যাদার সঙ্গে রোহিঙ্গা মুসলমানরা যাতে নিজ জন্মভূমিতে (মিয়ানমারে) ফিরে যেতে পারে, সে ব্যাপারে ভূমিকা রাখছে ওআইসি।
বৈঠকে শরণার্থী ত্রাণ প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) কার্যালয়ের কর্মকর্তা, জেলা প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক শেষে স্থানীয় সাংবাদিকদের কাছে আশ্রয়শিবির পরিদর্শনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন ওআইসি সহকারী মহাসচিব। তিনি বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের পাশে সব সময় আছে ওআইসি। বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে মানবিক আশ্রয় দেওয়ায় বাংলাদেশ সরকারের প্রশংসা করে সহকারী মহাসচিব বলেন, ওআইসি চায় রোহিঙ্গারা আত্মমর্যাদা ও সম্মানের সঙ্গে মিয়ানমারে ফিরে যাক। সে জন্য আন্তর্জাতিকভাবে ঐকমত্য করতে কাজ করছে ওআইসি।
বিকেলে সহকারী মহাসচিব ইউসেফ আলডোবেয়ার নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধিদলটি হেলিকপ্টারে উখিয়ায় পৌঁছে। প্রতিনিধিদলের সঙ্গে ছিলেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আরেকটি দল।
এর আগে সকালে প্রতিনিধিদলটি ঢাকা থেকে হেলিকপ্টারযোগে নোয়াখালীর ভাসানচর আশ্রয়ণ প্রকল্প পরিদর্শন করে। বিকেলে সেখান থেকে ওআইসি প্রতিনিধিদল আসেন কক্সবাজার রোহিঙ্গা শিবিরে। ভাসানচরে রোহিঙ্গা স্থানান্তর নিয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়। বৈঠকে রোহিঙ্গা নেতারা বলেন, স্বেচ্ছায় তাঁরা (রোহিঙ্গারা) কক্সবাজার থেকে নোয়াখালীর ভাসানচরের আশ্রয়শিবিরে যাচ্ছেন। এ ব্যাপারে কেউ তাঁদের চাপ দিচ্ছেন না।