‘ও ভাই, ভাই রে ওঠ’
স্কুলছাত্র মো. তাসিবের (১৩) মরদেহটি তখনো খাটের ওপর শোয়ানো। যেন তাসিব ঘুমাচ্ছে। পাশে বসে আছে তার ছোট দুই বোন ইমা ও হিমু। ভাইয়ের মাথায় বারবার হাত বোলাচ্ছিল। খাটের অপর পাশে বসে বিলাপ করছিলেন মা সখিনা বেগম।
সখিনা বারবার বলছিলেন, ‘আমার ছেলে ঘুমাচ্ছে। দেখ তার হাতে এখনো রক্ত চলাচল করছে। কী সুন্দর আমার ছেলে। খেলতে গিয়েছিল আমার ছেলে। কেন আমার ধনটারে কেড়ে নিলি এভাবে?’
গতকাল সোমবার চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার নলুয়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে মরফলা গ্রামের বোর্ড অফিস কেন্দ্রের বাইরে তাসিবকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কেন্দ্র দখল করার সময় তাসিবকে কিরিচ দিয়ে কোপানো হয় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান। তাসিবের বাবা জসিম উদ্দিন রিকশাচালক। কেন্দ্রটির পাশেই তাদের বাড়ি। তাসিব সপ্তম শ্রেণিতে পড়ত।
গুরুতর আহত তাসিবকে একটি বেসরকারি হাসপাতালে নেওয়া হলে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়। এরপর লাশ বাড়িতে নিয়ে আসেন পরিবারের সদস্যরা। টিন দিয়ে তৈরি ভাঙাচোরা ঘরটিতে ঢোকার মুখের কামরার খাটে লাশ নিয়ে বসে ছিলেন সখিনা ও তাঁর মেয়েরা। এক ভাই, দুই বোনের মধ্যে তাসিব বড়।
বোন ইমা ও হিমু মাথায় হাত দিয়ে মাঝেমধ্যে ডাকছিল, ‘ও ভাই, ভাই রে ওঠ।’ তারপর আবার নির্বাক তাকিয়ে থাকে দুজন।
সখিনা বিলাপ করতে করতে বলেন, ‘আমার ছেলে রে এনে দে। কিসের ভোট? কিসের নির্বাচন? আমার ছেলে নিরীহ, তাকে কেন হত্যা করা হলো? এর বিচার চাই আমি। তার বাবা রিকশা চালিয়ে টাকা রোজগার করছিল। পড়ালেখা চালাচ্ছিল। এখন আমি কাকে নিয়ে বাঁচব?’
ছোট্ট ঘরটিতে পাড়া প্রতিবেশীদের ভিড়। তাঁদের চোখেও পানি। আর ক্ষোভ ঝরছিল নির্বাচন নিয়ে। ঘরে ঢোকার মুখে বাইরে আহাজারি করছিলেন বাবা জসিম উদ্দিন। বারবার বুক চাপড়াচ্ছিলেন তিনি।
জসিম উদ্দিন বলতে থাকেন, ‘কী অপরাধ ছিল আমার ছেলের। সে দেখতে গিয়েছিল। আমার ছেলেরে মেরে ফেলল।’
তার চাচা মিজানুর রহমান নলুয়া ২ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য প্রার্থী। কেন্দ্রের বাইরে থাকা তাসিবকে প্রতিপক্ষ মনে করে হত্যা করা হয় বলে ধারণা করছেন স্বজনেরা। তবে কেন্দ্রে ওই সময় আওয়ামী লীগ ও বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার লড়াই চলছিল। তাসিব এর বলি হয়।
খবর পেয়ে বেলা পৌনে একটার দিকে ভোটকেন্দ্রটি পরিদর্শনে যান পুলিশ সুপার এস এম রশিদুল হক। দোষী ব্যক্তিদের দ্রুত গ্রেপ্তারের নির্দেশ দিয়ে ১৫ মিনিটের মধ্যে চলে যান তিনি।
তাসিবের খালা হালিমা বেগম ঘরের বাইরে বসে বারবার বলছিলেন, ‘তাসিব তো খেলতে গেছে। তাকে দেখে কি তাদের মনে হয়েছে সে ভোট নিতে গেছে? কেন মারল? পুলিশ কি পারবে আমার তাসিবকে ফিরিয়ে দিতে?’